কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়াকে ইয়েমেনে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে আজ এই বিষয়ে একটি আবেদন শুনানি জন্য উঠেছে, যেখানে কেন্দ্র সরকারের কাছে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের আবেদন জানানো হয়েছে।
Nimisha Priya Case: কেরলের বাসিন্দা নার্স নিমিশা প্রিয়া ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডের সম্মুখীন হচ্ছেন। এই মামলাটি ২০১৭ সালের একটি কথিত হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে, যেখানে তাকে তার ইয়েমেনি ব্যবসায়ী অংশীদার তালাল আবদো মাহদির মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছে। এখন তার ফাঁসির তারিখ ১৬ই জুলাই নির্ধারিত হয়েছে এবং এর আগে আজ সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
আবেদনে কী দাবি করা হয়েছে?
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আবেদনে কেন্দ্র সরকারের কাছে নিমিশাকে ফাঁসি থেকে বাঁচানোর জন্য কূটনৈতিক উপায় ব্যবহারের আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদনকারীর পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, ইয়েমেনে প্রচলিত শরিয়া আইন অনুসারে, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে 'ব্লাড মানি' অর্থাৎ ক্ষতিপূরণ দিয়ে ফাঁসির সাজা রোধ করা যেতে পারে।
এই আবেদনটি আইনজীবী সুভাষ চন্দ্রন কে.আর. দাখিল করেছেন। এতে বলা হয়েছে যে, নিমিশার পরিবারের পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮.৬ কোটি টাকা, ব্লাড মানি হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই আবেদনের শুনানির দায়িত্ব বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চের উপর ন্যস্ত রয়েছে।
নিমিশা প্রিয়া কে?
নিমিশা প্রিয়া কেরলের পালাক্কাদ জেলার বাসিন্দা এবং পেশায় একজন নার্স। তিনি ২০১১ সালে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি চিকিৎসা ক্ষেত্রে কাজ শুরু করেন। সেই সময়ে ইয়েমেনে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু পরে সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে।
যখন ইয়েমেনে অস্থিরতা বাড়ে, তখন তার স্বামী এবং মেয়ে ভারতে ফিরে আসেন, কিন্তু নিমিশা সেখানেই ছিলেন। তিনি তার পরিবারের জন্য আর্থিকভাবে শক্তিশালী থাকার জন্য ইয়েমেনে কাজ চালিয়ে যান।
হত্যার অভিযোগ কীভাবে এল?
ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী, কোনো বিদেশি মেডিকেল পেশাদার যদি ক্লিনিক খুলতে চান, তবে তাকে একজন ইয়েমেনি নাগরিককে অংশীদার করতে হয়। এই কারণে নিমিশা তালাল আবদো মাহদিকে তার অংশীদার করেন। অভিযোগ উঠেছে যে তালাল নথিপত্রে কারচুপি করে দেখিয়েছিল যে সে নিমিশার স্বামী।
এর পরে, সে নিমিশার পাসপোর্ট জব্দ করে এবং বছরের পর বছর ধরে তার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এমনকি সে বারবার হুমকিও দিত।
হত্যাকাণ্ডের রাতে কি ঘটেছিল?
২০১৭ সালে নিমিশা একটি পরিকল্পনা করেন যে তিনি তালালকে অজ্ঞান করে তার পাসপোর্ট ফেরত নেবেন এবং ভারতে ফিরে যাবেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। তালালকে অজ্ঞান করার চেষ্টা প্রাণঘাতী প্রমাণিত হয় এবং তার মৃত্যু হয়।
এর পরে অভিযোগ করা হয় যে, নিমিশা লাশ টুকরো টুকরো করে তা সরানোর চেষ্টা করেন। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০২০ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে, হুতি প্রশাসনের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় পরিষদ এই সাজা বহাল রাখে।
কেন এই মামলা এত জটিল?
নিমিশা বর্তমানে সানার একটি কারাগারে বন্দী রয়েছেন, যা হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইয়েমেনের এই অংশটি ভারত সরকারের সাথে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে আসে না, যা হস্তক্ষেপ এবং আলোচনার প্রক্রিয়াকে আরও কঠিন করে তোলে। তা সত্ত্বেও, ভারত সরকার এবং সামাজিক কর্মীরা ক্রমাগত চেষ্টা করছেন যাতে নিমিশাকে ব্লাড মানির মাধ্যমে বাঁচানো যায়।