রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রস্থল নবান্নে একা পদযাত্রায় দেখা গেল শুভেন্দু অধিকারীকে, পাশে নেই রাজ্যের কিংবা কেন্দ্রীয় স্তরের কোনো প্রভাবশালী বিজেপি নেতা। এই ছবি গেরুয়া শিবিরের অন্দরে একপ্রকার তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। নেতারা মৃদু অস্বস্তি প্রকাশ করছেন দলের মূল ও সাংগঠনিক শাখার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান দূরত্ব ও বিভেদের পুনরুত্থানের বিষয়ে। নবান্ন অভিযানের এই নিঃসঙ্গতা নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ গড়তে পারে বলে অনেকের ধারণা।
শমীক যুগে বদলছে বঙ্গ বিজেপির রাজনৈতিক ভূমিকায় সমীকরণ?
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতার পরিবারের ডাকা নবান্ন অভিযানের প্রেক্ষিতে শমীক ভট্টাচার্যের নতুন রাজনৈতিক অবস্থানের প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া রাজ্য বিজেপির অন্য কোনো বড় নেতাকে সেখানে দেখা যায়নি। দলের এই অনুপস্থিতি রাজনীতিতে নয়া প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে — শমীক যুগে কি নতুন কোনো সমীকরণ তৈরি হচ্ছে? শুভেন্দুর পাশে ছিলেন কৌস্তুভ বাগচী, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল এবং অশোক দিন্দা, কিন্তু দলের প্রভাবশালী নেতাদের দেখা মেলেনি।
সুকান্ত ও শমীকের অনুপস্থিতি বিজেপিতে আলোড়ন সৃষ্টি
বঙ্গ বিজেপির বর্তমান ও প্রাক্তন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও শমীক ভট্টাচার্যের অনুপস্থিতি নিয়ে গেরুয়া শিবিরে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। সুকান্তের সময় বিজেপির কর্মসূচিতে রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল, কিন্তু এবার সেই দৃশ্যমানতা পাওয়া গেল না। দলের অভ্যন্তরে এই দূরত্ব কি রাজনৈতিক বিভাজনের সূচনা? বহু কর্মী এই অনুপস্থিতিকে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রমাণ হিসেবেই দেখছেন।
নির্যাতিতার পরিবারের ডাক, বিজেপির রাজনৈতিক পতাকা ছাড়াই অভিযানে শুভেন্দু
নিন্দুকদের মতে, এই নবান্ন অভিযান ছিল বিজেপির নয়, বরং নির্যাতিতার পরিবারের বিচার দাবির পক্ষে এক নিরপেক্ষ আন্দোলন। শুধু তৃণমূলকেই এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ দেওয়া হয়নি, অন্য দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। তবে বিজেপির একাংশের দাবি, শুভেন্দু অধিকারী রাজনৈতিক পতাকা ছাড়াই কর্মসূচীতে ছিলেন, দলের সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল না। কলকাতা থেকেও শমীক ভট্টাচার্যের অনুপস্থিতি এই দাবিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অবস্থান, দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বাধা
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় তিনি আইন অমান্যকারী কিংবা দলের বাইরে কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন না। তাই নবান্ন অভিযানে তার অনুপস্থিতি স্বাভাবিক। এই ব্যাখ্যা দিলেও দলের ভিতরে বিভাজন ও অশান্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে এই অনুপস্থিতি।
বর্ষীয়াণ নেতা রাহুল সিনহা ও দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি
রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বর্ষীয়াণ নেতা রাহুল সিনহার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দিলীপ ঘোষের ঘটনাও আলাদা নয়, তাঁর শুভেন্দুর সঙ্গে বিরোধ নতুন নয়। তাই তাঁরা মিছিলে অংশগ্রহণ করেননি। রাজনীতির গহীন জটিলতাগুলো এভাবেই সামনে আসছে, যা দলের ঐক্য ও শক্তির জন্য প্রভাব ফেলতে পারে।
দলের ‘ছত্রভঙ্গ’ অবস্থা নিয়ে কর্মীদের উদ্বেগ
বিজেপির নিচুতলার কর্মীরা মনে করছেন, নবান্ন অভিযানে দলের নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে দলের ‘ঐক্যবদ্ধ’ ভাবমূর্তি প্রকাশ পায়নি। এটি ভোটের আগে দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দলীয় কর্মীদের মতে, এমন একটি বড় মঞ্চে ঐক্যের দৃশ্য দেখানো প্রয়োজন ছিল, যা হয়নি।
শুভেন্দুর ‘একঘরে’ হওয়ার প্রচার, ভোটের আগে বিজেপির জন্য ঝুঁকি
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারে শুভেন্দু অধিকারী ‘একঘরে’ ও ‘কোনঠাসা’ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। নির্বাচনের মুখে এই ধরনের প্রচার বিজেপির ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক কর্মী। দলের অভ্যন্তরে এই বিভক্তি কাটিয়ে ওঠা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।