মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম অঞ্চলের তিওরপুকুর গ্রাম এবং আশপাশের কমল বিল এলাকার অবস্থা দিনে দিনে আরও খারাপ হচ্ছে। একদিকে যেমন ধীরে ধীরে ভারী বর্ষণে জল জমে পড়ছে, তেমনি আরেকদিকে সঠিক নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় জলমগ্নতা ক্রমশ বাড়ছে। কমল বিলের জল এলাকার আট থেকে দশটি গ্রামের সঙ্গে মিশে গেলে জমা জল বের হওয়ার কোনো রাস্তা পাচ্ছে না। তার ফলে গ্রামের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি—সবই এখন জলের তলায়। জল থেকে বাঁচতে মানুষ হাঁটু পর্যন্ত জল মাড়িয়ে চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জলমগ্নতার কারণে স্থানীয় মানুষের জীবনে এসেছে বিশাল বিপর্যয়। তিওরপুকুর গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন যাবত নানা দফতরে এ সমস্যার কথা জানিয়েও এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে মানুষের অসুবিধার মাত্রা বাড়ছে প্রতিদিন। জলমগ্ন এলাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে চলেছে। ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের জন্যও চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, প্রায় দুই হাজার বিঘা কৃষিজমি এখন সম্পূর্ণ প্লাবিত। কৃষকেরা ভাবছেন কিভাবে তাদের সারের মেধা ও শ্রম নষ্ট হবে, আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে তাদের রেহাই নেই। জমির ক্ষতি মানেই একদিকে জীবনযাত্রার সংকট, অন্যদিকে আর্থিক সংকটের গভীরতা বৃদ্ধি। এলাকাবাসীর কথায়, এসব কৃষিজমির ওপর নির্ভর করে পরিবারের রুটি-রুজি, তারাই এখন জলমগ্নতার কারণে দিশেহারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তিওরপুকুরের পাশেই কমল বিলের জল জমে থাকে, যেখানে জল বের হওয়ার জন্য কোন নিকাশি নালা নেই। ফলে বারবার বৃষ্টির পানি জমে গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। তারা দাবি করেছেন, এই কমল বিলের জল দ্রুত বের করে দেওয়ার জন্য দ্রুত নিকাশি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। শুধু তাই নয়, এই দাবি তারা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও জানিয়েছে, যাতে তাঁদের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এলাকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তাদের দিকে জনসাধারণের দৃষ্টি এখনো নিবদ্ধ। স্থানীয়রা জানান, ‘আমরা বারবার দাবি জানাই, কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা মেলেনি।’ এমনকি কখনও কখনও স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী এলাকাবাসীর সহায়তায় পানির মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে সাহায্য করলেও, এটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে না।
অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের জলাবদ্ধতার জন্য আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক জল প্রবাহ ধরে রেখে সঠিক পরিকল্পনা ও নির্মাণ করা না হলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ গুরুতর আকার ধারণ করবে। তাই জল নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অবিলম্বে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ জরুরি।
তবে এখানেই শেষ নয়, স্থানীয়দের আরও দাবি রয়েছে যে, শুধু নিকাশি নয় বরং বর্ষার সময় জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় গ্রাম ও শহরের নিকটবর্তী অঞ্চলে জল সংরক্ষণের জন্য কিছু আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হোক। যাতে বর্ষার সময় জলমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে ও কৃষিজমি দীর্ঘদিনের জন্য বাঁচানো যায়।
মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে এই জলমগ্নতা সমস্যা শুধু একাধিক গ্রামের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করেই না, বরং সমগ্র কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডে আঘাত হানে। আগামী দিনে যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে স্থানীয় জনজীবন ও কৃষিক্ষেত্র আরও কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হবে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।