নাসা ২০৩০ সালের পর প্রশান্ত মহাসাগরে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন ফেলবে

নাসা ২০৩০ সালের পর প্রশান্ত মহাসাগরে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন ফেলবে

নাসা ২০৩০ সালের পর আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনটিকে প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে দিতে চলেছে। প্রযুক্তিগত দুর্বলতা এবং খরচ বৃদ্ধির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন বেসরকারি স্পেস স্টেশনে গবেষণা কাজ হবে।

International Space Station: আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন (ISS) নিয়ে নাসা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মহাকাশ পরীক্ষাগারটি আর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে থাকবে না, বরং এটি প্রশান্ত মহাসাগরের নির্জন স্থান 'পয়েন্ট নিমো'-তে ফেলে দেওয়া হবে। ১৯৯৮ সাল থেকে পরিচালিত এই স্টেশনটি বিজ্ঞান ও মানবতার জন্য যে অবদান রেখেছে, তা ঐতিহাসিক। কিন্তু এখন এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং এটিকে টিকিয়ে রাখা শুধু ঝুঁকিপূর্ণ নয়, অত্যন্ত ব্যয়বহুলও বটে।

আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন কী

ISS একটি বিশাল মহাকাশ পরীক্ষাগার, যা পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এর আকার প্রায় একটি ফুটবল মাঠের সমান এবং এর ওজন ৪৩০ টনের বেশি। এই স্টেশনটি ২৮,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এটি নাসা, রাশিয়ার রোসকসমস, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ESA), জাপানের JAXA এবং কানাডার স্পেস এজেন্সি যৌথভাবে পরিচালনা করে।

এখন পর্যন্ত ২৮০ জনের বেশি নভোচারী পরিদর্শন করেছেন

ISS এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে এবং তখন থেকে এ পর্যন্ত ২৬টি দেশের ২৮০ জনের বেশি নভোচারী এখানে এসেছেন। এই স্টেশনটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসংখ্য পরীক্ষার সাক্ষী থেকেছে। মাইক্রোগ্র্যাভিটির অনন্য পরিবেশে করা গবেষণা পৃথিবীতে অনেক ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখিয়েছে।

২০৩০ সালের পর পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে

NASA-র রিপোর্ট অনুযায়ী ISS-এর প্রাথমিক কাঠামো এখন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এর মডিউল, ট্রাস এবং রেডিয়েটরের মতো অংশগুলো তাদের মেয়াদকাল শেষ করেছে। ২০৩০ সালের পর এর পরিচালনা শুধু ঝুঁকিপূর্ণই হবে না, সেই সঙ্গে এর রক্ষণাবেক্ষণও অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে যাবে।

পয়েন্ট নিমো কেন শেষ গন্তব্য

NASA এবং তার সহযোগীরা ISS-কে 'ডিঅরবিট' করার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নির্জন অংশ পয়েন্ট নিমোকে বেছে নিয়েছে। এই স্থানটি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এবং এটিকে "Spacecraft Cemetery" অর্থাৎ মহাকাশযানের কবরস্থান বলা হয়। এখানে না মানুষ বাস করে, না পাখি ওড়ে। এই স্থানটি নিউজিল্যান্ড থেকে ৩,০০০ মাইল এবং অ্যান্টার্কটিকা থেকে ২,০০০ মাইল দূরে অবস্থিত। এই কারণে এখানে মহাকাশযান ফেলে দেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ বলে মনে করা হয়।

স্পেসএক্স তৈরি করবে ডিঅরবিট ভেহিকেল

ISS-কে পৃথিবীর দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি বিশেষ মহাকাশযান অর্থাৎ ডিঅরবিট ভেহিকেলের প্রয়োজন হবে। এই কাজটি স্পেসএক্সকে দেওয়া হয়েছে। এই ভেহিকেল ISS-কে নিয়ন্ত্রণ করে পয়েন্ট নিমো পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এর সঙ্গে এই স্পেস স্টেশনের ৩০ বছরের যাত্রা চিরতরে শেষ হয়ে যাবে।

একে বাঁচানোর কি কোনো বিকল্প ছিল না

NASA ISS-কে ফেলে দেওয়ার আগে অনেক বিকল্প নিয়ে বিবেচনা করেছিল। প্রথম চিন্তা ছিল এটিকে আরও উঁচু কক্ষপথে ঠেলে দেওয়া, যাতে এটি একটি স্থায়ী ঐতিহাসিক নিদর্শন হয়ে থাকে। কিন্তু বেশি উচ্চতায় ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়, যা বছরে একবারও ঘটতে পারত।

দ্বিতীয় বিকল্প ছিল ISS-কে সেখানেই ভেঙে দিয়ে এর প্রধান অংশগুলোকে পৃথিবীতে এনে মিউজিয়াম বা গবেষণার জন্য রাখা। কিন্তু এই পরিকল্পনাটি খুব ব্যয়বহুল ছিল এবং এতে নভোচারীদের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারত। সেইজন্য এই বিকল্পটিও বাতিল করা হয়।

NASA এও জানিয়েছে যে ISS-কে পোড়ানোর পরে যে টুকরোগুলি অবশিষ্ট থাকবে, সেগুলোকে সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করে গবেষণা বা নিষ্পত্তি করার জন্য রাখা হবে।

Leave a comment