কেন বাড়ছে শিশু ও টিনএজারদের ওজন সমস্যা : কী খেলে এড়ানো যাবে স্থূলতার ঝুঁকি? কখন খাবারে রাখতে হবে শাক-সবজি, ফল ও প্রোটিন? জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে বিশেষজ্ঞরা জানালেন সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ডায়েট প্ল্যানের গুরুত্ব। তাঁদের মতে, ছোট থেকেই যদি সঠিক খাবারের অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তবে ভবিষ্যতে ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো মারাত্মক সমস্যাও অনেকটা কমানো সম্ভব।
শিশুদের পুষ্টি ও প্রথম খাবারের গুরুত্ব
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ ঘোষ জানাচ্ছেন, সদ্যোজাতের জন্য ব্রেস্ট মিল্কই সেরা। নয় মাস পর থেকে প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার দিতে হবে। ঘরে তৈরি ডাল, ছাতু, ডিম, শাকসবজি ও মরশুমি ফল প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকা জরুরি। অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞ সহেলি দাশগুপ্ত সতর্ক করেছেন অতিরিক্ত ফর্মুলা মিল্কের ব্যবহার নিয়ে। তাঁর মতে, এটি ভবিষ্যতে চাইল্ড ওবেসিটির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
টিনএজারদের খাদ্যাভ্যাস ও সমস্যা
টিনএজ বয়সেই ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার ও সফট ড্রিঙ্কসের প্রতি ঝোঁক সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে রাত জেগে পড়াশোনা, ফোন-ল্যাপটপে আসক্তি এবং খেলাধুলা কমে যাওয়ায় দ্রুত ওজন বাড়ছে। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছেন—রাতে ভারী খাবার না খেয়ে ফল খাওয়া উচিত। যেমন শসা, তরমুজ ইত্যাদি। পাশাপাশি, প্রতিদিন অন্তত ১৫–৩০ মিনিট শরীরচর্চা করলে স্থূলতা কমানো সম্ভব।
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অপুষ্টি বনাম স্থূলতা
ফর্টিস আনন্দপুরের চিফ ডায়েটিশিয়ান শ্রাবণী মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ভারতে একদিকে অপুষ্টি, অন্যদিকে ওবেসিটি—দুই সমস্যাই কিশোর বয়সে দেখা দিচ্ছে। ফল, সবজি ও মাছ খাওয়ার প্রবণতা কমছে, বাড়ছে জাঙ্ক ফুড নির্ভরতা। এর ফলে অ্যানিমিয়া, ডায়াবিটিস, ওবেসিটির মতো রোগে ভুগছে অনেক টিনএজার।
সমাধানের পথ: অভিভাবক ও শিক্ষকের ভূমিকা
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চাদের সঠিক ডায়েট প্ল্যান শেখাতে বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাড়িতে কী খাওয়া হচ্ছে, কখন খাওয়া হচ্ছে, সেটি নজরে রাখা জরুরি। পাশাপাশি স্কুল-কলেজেও স্বাস্থ্যকর খাবার ও শরীরচর্চা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। না হলে আগামী প্রজন্মের মধ্যে ওবেসিটি জাতীয় সমস্যায় রূপ নেবে।জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—খাদ্য শুধু পেট ভরানোর জন্য নয়, শরীর ও মনের সঠিক বিকাশের জন্যও অপরিহার্য। শিশুর ডায়েট থেকে টিনএজারের অভ্যাস—সব ক্ষেত্রেই ভারসাম্য জরুরি। চিকিৎসকেরা বলছেন, সময় থাকতে সাবধান হলে ভবিষ্যতের বড় সমস্যাকে এড়ানো সম্ভব।
ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস, রাত জাগা—এই সব মিলেই বাড়ছে শিশু ও টিনএজারদের ওবেসিটির ঝুঁকি। জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহে চিকিৎসক ও ডায়েটিশিয়ানরা জানালেন কোন খাবার খাওয়া উচিত, কোন অভ্যাস এড়ানো জরুরি।