ক্রীড়া ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে লোকসভা সোমবার বিরোধীদের হট্টগোলের মধ্যে জাতীয় ক্রীড়া শাসন বিল-২০২৫ এবং জাতীয় অ্যান্টি-ডোপিং (সংশোধনী) বিল-২০২৫ ধ্বনিভোটে পাশ করেছে।
স্পোর্টস নিউজ: ভারতে ক্রীড়া প্রশাসনকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার দিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়ে, লোকসভা সোমবার জাতীয় ক্রীড়া শাসন বিল ২০২৫ এবং জাতীয় অ্যান্টি-ডোপিং (সংশোধনী) বিল ২০২৫ ধ্বনিভোটে পাশ করেছে। বিরোধীদের হট্টগোলের মধ্যে এই বিলগুলি পাশ হয়। ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্য বলেছেন যে এই আইন স্বাধীনতার পর ভারতীয় ক্রীড়া ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় সংস্কার। তাঁর মতে, এই আইন ২০৩৬ সালের অলিম্পিক আয়োজনের প্রস্তুতিতে ভারতকে শক্তিশালী করবে।
বিসিসিআই-ও নজরদারির আওতায়
নতুন বিলের অধীনে, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)-ও সরকারি নিয়মের আওতায় আসবে। যদিও বিসিসিআই একটি বেসরকারি গভর্নিং বডি এবং সরকার থেকে আর্থিক সহায়তা নেয় না, তবুও এটিকে জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনের শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতি বছর বিসিসিআইকে সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্বীকৃতি নিতে হবে।
আইনি বিষয়গুলির নিষ্পত্তি ন্যাশনাল স্পোর্টস ট্রাইব্যুনালে করা হবে। তবে, এটিকে তথ্য অধিকার (আরটিআই) আইনের বাইরে রাখা হয়েছে, যা এটিকে আংশিক স্বস্তি দেবে।
জাতীয় ক্রীড়া বোর্ড ও নতুন নিয়ম
বিলে বলা হয়েছে, দেশে একটি জাতীয় ক্রীড়া বোর্ড গঠিত হবে, যা সমস্ত জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনকে স্বীকৃতি দেবে। সরকারি তহবিল পাওয়ার জন্য বোর্ডের স্বীকৃতি বাধ্যতামূলক হবে। সময় মতো নির্বাচন না করা, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করা বা সরকারি অর্থের অপব্যবহার করার কারণে ফেডারেশনের স্বীকৃতি বাতিল করা হতে পারে। নতুন বিধানে ক্রীড়া প্রশাসকদের সর্বোচ্চ বয়স ৭০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৭৫ বছর করা হয়েছে, যাতে প্রবীণ ও অভিজ্ঞ প্রশাসকরাও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান।
জাতীয় ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা
- ক্রীড়া বিলে জাতীয় ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের গঠনেরও বিধান রয়েছে, যা আদালতের মতো ক্ষমতা পাবে।
- এটি খেলোয়াড় এবং ক্রীড়া ফেডারেশনগুলির মধ্যে নির্বাচন, নির্বাচন এবং অন্যান্য বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারবে।
- এর আগে, অনেক বিরোধ দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় আটকে যেত, তবে নতুন কর্তৃপক্ষ আসার ফলে সিদ্ধান্ত দ্রুত এবং স্বচ্ছ হবে।
অ্যান্টি-ডোপিং আইনে সংশোধন
পাশাপাশি, লোকসভা জাতীয় অ্যান্টি-ডোপিং (সংশোধনী) বিল ২০২৫-ও পাশ করেছে। এর উদ্দেশ্য হল ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (WADA)-এর আপত্তিগুলি দূর করা। ২০২২ সালের মূল আইনে ‘জাতীয় অ্যান্টি-ডোপিং বোর্ড’-কে NADA-র তত্ত্বাবধান ও পরামর্শ দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। WADA এটিকে সরকারি হস্তক্ষেপ হিসেবে বাতিল করে দেয়।
সংশোধিত আইনে বোর্ডকে বহাল রেখে তার অধিকার সীমিত করা হয়েছে এবং NADA-র পরিচালনা সংক্রান্ত স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। ক্রীড়ামন্ত্রী মান্ডব্য সংসদে জানান যে ক্রীড়া প্রশাসনে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বহু দশক ধরে অনুভূত হচ্ছিল।
- ১৯৭৫ সালে প্রথম এই পথে প্রচেষ্টা হয়।
- ১৯৮৫ সালে প্রথম খসড়া তৈরি হয়।
- ২০১১ সালে জাতীয় ক্রীড়া বিধিও আসে, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে সংসদে বিল পাশ হতে পারেনি।
তিনি এই বিলটিকে "ঐতিহাসিক পরিবর্তন" আখ্যা দিয়ে বলেন যে এর ফলে দেশের ক্রীড়া ক্ষমতা "নতুন আকাশ" পাবে এবং আন্তর্জাতিক প্রদর্শনে উন্নতি হবে।
সংসদে হট্টগোলের মধ্যে বিল পাশ
বিরোধী দলগুলির বিরোধিতা ও হট্টগোলের মধ্যে এই বিল পাশ হয়। বিহারে ভোটার পুনর্নিরীক্ষণের প্রতিবাদে মিছিলে অংশ নেওয়ায় বিরোধী দলের সদস্যদের আটক করা হয়েছিল, যার কারণে তারা প্রথম দিকের আলোচনায় অংশ নিতে পারেননি। পরে তারা সদনে ফিরে এসে হট্টগোল শুরু করলেও ধ্বনিভোটে বিল পাশ হয়ে যায়। এই দুটি বিলের মাধ্যমে ভারতীয় ক্রীড়া জগতে বড় পরিবর্তন আসার আশা করা যায়।
ক্রীড়া প্রশাসন আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে। খেলোয়াড়দের নির্বাচন ও বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া দ্রুত হবে। আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রশাসন চলায় ২০৩৬ সালের অলিম্পিক আয়োজনের সম্ভাবনা আরও জোরদার হবে।