সংকটে ভারতের NAVIC: ৯টির মধ্যে ৪টি স্যাটেলাইট সক্রিয়, বাড়ছে ঝুঁকি

সংকটে ভারতের NAVIC: ৯টির মধ্যে ৪টি স্যাটেলাইট সক্রিয়, বাড়ছে ঝুঁকি

ভারতের NAVIC ব্যবস্থা সংকটে; ৯টির মধ্যে মাত্র ৪টি স্যাটেলাইট সক্রিয়। সুরক্ষা, বিপর্যয় মোকাবিলা ও আত্মনির্ভরতার উপর বিপদ, ISRO-কে অবিলম্বে সমাধান করতে হবে।

NAVIC: ভারতের নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম NAVIC (Navigation with Indian Constellation), যা একসময় আত্মনির্ভর ভারতের প্রযুক্তিগত পরিচয় হিসাবে মনে করা হত, এখন গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বর্তমানে এর মোট নয়টি স্যাটেলাইটের মধ্যে কেবল চারটি সক্রিয় আছে, যেখানে ISRO-র নিজস্ব মান অনুযায়ী, যে কোনও নেভিগেশন পরিষেবা স্থিতিশীল রাখতে অন্তত পাঁচ থেকে সাতটি সক্রিয় স্যাটেলাইট প্রয়োজন। এই পরিস্থিতি কেবল প্রযুক্তিগত উদ্বেগ তৈরি করছে তাই নয়, ভারতের জাতীয় সুরক্ষা, যোগাযোগ এবং কৌশলগত নীতির উপরেও প্রশ্ন তুলছে।

NAVIC কেন তৈরি হল এবং এর গুরুত্ব কী?

এর শুরুটা ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময় ভারতের আমেরিকান GPS ডেটার জরুরি প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আমেরিকা তাদের পরিষেবা দিতে অস্বীকার করে। সেই ঘটনা ভারতকে এই উপলব্ধি করায় যে বিদেশি নেভিগেশন সিস্টেমের উপর নির্ভর করা বিপজ্জনক হতে পারে। এর পরেই ISRO ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মোট ৯টি স্যাটেলাইটের একটি দল মহাকাশে স্থাপন করে এবং NAVIC তৈরি হয়।

এর প্রধান ব্যবহারগুলি হল:

  • সেনাবাহিনীর জন্য কৌশলগত সহায়তা – মিসাইলGuidance, সৈন্য চলাচল এবং সীমান্ত নজরদারি।
  • বিপর্যয় মোকাবিলা – বন্যা, ঝড়ের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে লোকেশন ট্র্যাকিং।
  • টেলিকম ও ট্রান্সপোর্ট – সড়ক, রেল এবং সমুদ্র নেভিগেশনে সহায়তা।

সংকট কেন দেখা দিল?

রিপোর্ট অনুযায়ী NAVIC-এর অনেক স্যাটেলাইট এখন প্রযুক্তিগত ত্রুটির সঙ্গে লড়ছে।

  • IRNSS-1B এবং IRNSS-1F তাদের জীবনকাল পূর্ণ করেছে।
  • কিছু স্যাটেলাইটে অ্যাটমিক ক্লক ফেলিওর-এর মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে।
  • বাকি থাকা স্যাটেলাইটগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে, যার ফলে তাদের কার্যকারিতা প্রভাবিত হতে পারে।

ISRO নিজেই স্বীকার করেছে যে বর্তমানে কেবল চারটি স্যাটেলাইট সক্রিয়ভাবে ডেটা দিতে পারছে, যা সম্পূর্ণ নেভিগেশন কভারেজের জন্য যথেষ্ট নয়।

সরকার ও ISRO-র পরিকল্পনা

ভারত সরকার সংসদে জানিয়েছে যে NVS-03, NVS-04 এবং NVS-05 নামের নতুন স্যাটেলাইট ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত উৎক্ষেপণ করা হবে। এই স্যাটেলাইটগুলিতে

  • উন্নত নেভিগেশন প্রযুক্তি,
  • আরও রেডিয়েশন-প্রতিরোধী হার্ডওয়্যার,
  • এবং দীর্ঘ কার্যকারিতা যুক্ত ব্যাটারি থাকবে।

যদিও মহাকাশ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, একটি স্যাটেলাইটকে ডিজাইন থেকে উৎক্ষেপণ পর্যন্ত তৈরি করতে গড়ে ১৮-২৪ মাস লাগে। এমন পরিস্থিতিতে ISRO অগ্রাধিকার না দিলে ২০২৬ সালের লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হবে।

কেন জরুরি NAVIC?

অনেকে মনে করতে পারেন যখন আগে থেকেই আমেরিকার GPS, রাশিয়ার GLONASS এবং চীনের Beidou উপলব্ধ আছে, তখন ভারতের নিজস্ব সিস্টেমের প্রয়োজন কেন। এর পেছনে প্রধান কারণগুলি হল—

১. জাতীয় নিরাপত্তা

যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিদেশি সিস্টেম ডেটা অ্যাক্সেস সীমিত করতে পারে। NAVIC ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মিসাইলGuidance, সৈন্যদের সঠিক লোকেশন ট্র্যাকিং এবং নজরদারি মিশনে সাহায্য করে।

২. বিপর্যয় মোকাবিলা ও যোগাযোগ

ভূমিকম্প, সুনামি বা বন্যার মতো দুর্যোগে NAVIC সতর্কবার্তা এবং লোকেশন সাপোর্ট উপলব্ধ করায়।

৩. পরিবহন ও নাগরিক ব্যবহার

ভারতীয় রেল, সড়ক পরিবহন এবং মৎস্যজীবীদের জন্য এই সিস্টেম বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।

৪. প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতা

'আত্মনির্ভর ভারত'-এর স্বপ্নে স্পেস টেকনোলজির স্বদেশীকরণ জরুরি। যদি NAVIC ব্যর্থ হয়, তাহলে ভারতকে আবার বিদেশি দেশগুলির উপর নির্ভর করতে হবে।

যদি NAVIC ফেল হয়ে যায় তাহলে কী হবে?

  • ভারতীয় সেনাবাহিনীর কৌশলগত ক্ষমতা প্রভাবিত হবে।
  • বিপর্যয় মোকাবিলায় দেরি এবং ত্রাণ অভিযানের যথার্থতা কমতে পারে।
  • GPS-এর মতো বিদেশি সিস্টেমের উপর নির্ভরতা বাড়বে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সুরক্ষার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ।

এখন কী করা জরুরি?

  • ISRO-কে অগ্রাধিকার দিতে হবে: নতুন স্যাটেলাইটগুলির নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়া দ্রুত করতে হবে।
  • বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশগ্রহণ: ভারতের স্পেস সেক্টরে দ্রুত বিকাশ লাভ করা প্রাইভেট কোম্পানিগুলির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
  • প্রযুক্তিগত আপগ্রেডেশন: পুরানো স্যাটেলাইটগুলির ব্যাকআপ সিস্টেমকে অবিলম্বে সক্রিয় করতে হবে।
  • ফান্ডিং ও নজরদারি: সরকারকে NAVIC প্রকল্পের জন্য আলাদা করে বাজেট এবং নজরদারি মেকানিজম তৈরি করতে হবে।

Leave a comment