নেপাল সরকার WhatsApp, Facebook, Instagram, YouTube, Reddit এবং X সহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। রাজধানী কাঠমান্ডু এবং অন্যান্য শহরগুলিতে যুবকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। সংসদ চত্বরেও হামলা চালানো হয়েছে।
Nepal Protests: নেপাল সরকার সম্প্রতি এমন এক পদক্ষেপ নিয়েছে যা দেশটির জনগণের মধ্যে গভীর বিতর্ক ও প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। সরকার WhatsApp, Facebook, Instagram, YouTube, Reddit এবং X-এর মতো ২৬টি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তটি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর মধ্যরাত থেকে কার্যকর করা হয়েছে। সরকারের মতে, এই কোম্পানিগুলো নেপালে বাধ্যতামূলক নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি, তাই তাদের সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করতে হয়েছে।
যুবকদের ক্ষোভ এবং আন্দোলন সংসদ পর্যন্ত পৌঁছেছে
নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পরপরই নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু উপত্যকা সহ বিভিন্ন শহরে যুবকদের ক্ষোভ রাস্তায় আছড়ে পড়ে। সোমবার সকাল থেকেই ছাত্র ও সমাজকর্মীরা ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা প্রথমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু পুলিশ তাদের থামাতে ব্যারিকেড স্থাপন করলে এবং কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
ক্ষুব্ধ যুবকরা সংসদ চত্বরেও হামলা চালায়। নিউ বানেশ্বরের ফেডারেল সংসদে প্রবেশের সময় পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই আন্দোলনকে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক বলে দাবি করা হচ্ছে, যেখানে প্রধানত ছাত্র, যুবক এবং সামাজিক সংগঠনগুলি জড়িত ছিল।
ভারতীয় সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও প্রভাব
নেপালে এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কেবল সেখানকার বাসিন্দাদের উপরই পড়েনি, বরং ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল, বিশেষ করে বিহারের মধুবনী জেলার মতো অঞ্চলের মানুষের উপরও দেখা যাচ্ছে। নেপাল ও ভারতের মধ্যে গভীর সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক বিদ্যমান। পূর্বে মানুষ WhatsApp এবং Messenger-এর মতো অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই এবং সস্তায় যোগাযোগ করত, কিন্তু এখন তাদের মোবাইল কলিং-এ বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
নেপাল থেকে ভারতে কল করার খরচ প্রতি মিনিটে প্রায় ১২ ভারতীয় টাকা, যেখানে ভারত থেকে নেপালে কল করার খরচ প্রায় ৭ নেপালী টাকা অর্থাৎ প্রায় ৪.৫ ভারতীয় টাকা। এতে উভয় দেশের পরিবার এবং ব্যবসায়ীদের উপর আর্থিক বোঝা বেড়েছে।
সরকার কেন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে?
নেপাল সরকারের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব (fake news) এবং উত্তেজক বিষয়বস্তু (provocative content) দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা দেশের সার্বভৌমত্ব (sovereignty) এবং স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। সরকারের মতে, এই পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনা করে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, সরকার স্পষ্ট করেছে যে যে সমস্ত প্ল্যাটফর্ম নেপালে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে, তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলির মধ্যে রয়েছে TikTok, Viber, Witk, Nimbuzz এবং Popo Live। অন্যদিকে, টেলিগ্রাম এবং গ্লোবাল ডায়েরি বর্তমানে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অধীনে রয়েছে এবং শীঘ্রই তাদেরও অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।
কখন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে?
সরকার স্পষ্ট করেছে যে এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী নয়। সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলি নেপালের আইন ও নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধন সম্পন্ন করার সাথে সাথে তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। সরকার জানিয়েছে যে এই কোম্পানিগুলিকে ২৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখে সাত দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সময়সীমা শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নিরুপায় হয়ে সরকার এই কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
পূর্বে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে
নেপাল সরকারের এই সিদ্ধান্ত নতুন নয়। এর আগে নভেম্বর ২০২৩ সালে TikTok-এর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সে সময় সরকার এটিকে দেশে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা এবং অনুপযুক্ত বিষয়বস্তু ছড়ানোর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিল। যদিও আগস্ট ২০২৪ সালে TikTok নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল এবং তারপর সরকার তার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন কারণ একযোগে ২৬টি প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা।
নিষেধাজ্ঞার কারণ
সরকারের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো গুজব এবং উত্তেজক বিষয়বস্তুর দ্রুত ছড়িয়ে পড়া, যা সমাজে উত্তেজনা এবং সহিংসতা বাড়াতে পারে। এছাড়াও, সরকার মনে করে যে দেশের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এই পদক্ষেপ অপরিহার্য।
তবে সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপ নাগরিকদের communication freedom (যোগাযোগের স্বাধীনতা) এবং freedom of expression (মত প্রকাশের স্বাধীনতা)-এর উপর সরাসরি আঘাত। মানুষ তাদের কথা প্রকাশ এবং মতামত ভাগ করে নেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল। এমন পরিস্থিতিতে এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।