খাবারের জন্য চাতক পাখির মত চেয়ে রোগীরা, হাসপাতালের নীরবতা ঘনীভূত করল বিতর্ক
নদিয়ার ফুলিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেন ফের একবার চরম অব্যবস্থার ছবি ফুটে উঠল। হাসপাতালের শয্যায় দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন রোগীরা খাবার পাচ্ছেন না—এমনই গুরুতর অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন রোগী ও তাঁদের পরিবার। প্রায় ১২ থেকে ১৫ দিন ধরে রোগীদের জন্য নির্ধারিত পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ একেবারে বন্ধ। অথচ এই নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া রীতিমতো হতবাক করেছে স্থানীয় মানুষজনকে।
যিনি খাবারের দায়িত্বে, তিনিই অনুপস্থিত! স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
হাসপাতালের খাবার সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সোমা বসাকের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে পরিষেবা বন্ধ রাখার অভিযোগ। স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে রোগীর পরিবার, সকলেই বলছেন—এই রাঁধুনি হাসপাতালে থেকে ও কাজ করছেন না। তাঁর স্বামী দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় তিনি কৃষ্ণনগরের হাসপাতালে ছুটে যান, সেটাই যথার্থ, কিন্তু এত বড় প্রতিষ্ঠানে কোনও বিকল্প ব্যবস্থার অনুপস্থিতি কীভাবে মেনে নেওয়া যায়? প্রশ্ন উঠেছে, সোমা বসাক না থাকলে কেন বিকল্প কোনও রাঁধুনির বন্দোবস্ত করা হয়নি এতদিন ধরে?
টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, মাঝেমাঝে নামমাত্র টিফিন দিয়ে চলছে দায়সারা
স্থানীয়দের অভিযোগ, বহুদিন ধরেই খাবার পরিষেবা বন্ধ রেখে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। মাঝে মাঝে শুধু সকালে সামান্য টিফিন দেওয়া হয়, তবে দুপুর ও রাতের খাবার একপ্রকার বন্ধ। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি চিকিৎসাধীন রোগীর জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর খাবার সরবরাহ বাধ্যতামূলক। এই অনিয়ম স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সরকারি অর্থনীতির স্বচ্ছতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিশ্চুপ ভূমিকা, পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবই বড় কারণ?
রোগীদের খাবার বন্ধ থাকলেও, হাসপাতাল সুপার কিংবা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পক্ষ থেকে তেমন কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। তাঁদের মতে, একজন রান্নার কর্মী না থাকলে পরিষেবা থেমে যাবে—এটা অগ্রহণযোগ্য। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, হাসপাতালের ভেতরে পর্যাপ্ত তদারকির অভাব এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা কতটা প্রকট।
সীমিত ব্যাখ্যায় দায় সারলেন আধিকারিক, আশ্বাস নতুন করে চালু হওয়ার
তবে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক পূজা মৈত্র জানান, রান্নার দায়িত্বে থাকা ক্লাস্টার কমিটির নিযুক্ত রাঁধুনির স্বামীর দুর্ঘটনার কারণে দু’দিন তিনি কাজে আসতে পারেননি। সেই কারণে কমিটিকে শোকজ করা হয়েছে। এদিন থেকে পরিষেবা আবার স্বাভাবিক হয়েছে বলেও জানান তিনি। কিন্তু এই বক্তব্য কতটা সত্য, আর সমস্যা শুধুই দু’দিনের কি না, তা নিয়েই রয়েছে বিস্তর সন্দেহ।
প্রশ্নের মুখে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানবিক দিক, সরকারি তদারকি জরুরি
একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এতদিন ধরে খাবার পরিষেবা বন্ধ থাকা, তার উপর বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকা—রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা যে এখনও বহুক্ষেত্রে মানবিকতার ধারেকাছে পৌঁছায়নি, তা ফের প্রমাণিত হল। শুধু শোকজ দিয়ে দায়িত্ব এড়ানোই কি যথেষ্ট? নাকি প্রয়োজন আরও কঠোর ব্যবস্থা, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও রোগী হাসপাতালের বেডে না খেয়ে না থাকতে হয়?