রাজ্যের দুই ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) এবং দুই সহকারী ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (এইআরও)-সহ মোট চারজন নির্বাচনী আধিকারিককে সাসপেন্ড করার জন্য আগেই নির্দেশ জারি করেছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। অভিযোগ ছিল, ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও সংশোধন প্রক্রিয়ায় একাধিক অনিয়ম ও গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে তাঁদের কাজে। কিন্তু সেই নির্দেশ কার্যকর না হওয়ায় কমিশনের অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে লিখিতভাবে সতর্ক করেছে কমিশন এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে।
মুখ্যসচিবের কাছে ফের চিঠি, নির্দিষ্ট ডেডলাইন বেঁধে দিল কমিশন
প্রথম নির্দেশ অমান্য হওয়ার পর এবার আরও কঠোর ভঙ্গিতে চিঠি পাঠাল নির্বাচন কমিশন। ১১ আগস্ট বিকেল ৩টার মধ্যে অবশ্যই চার আধিকারিকের সাসপেন্ড সংক্রান্ত পদক্ষেপের বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। এই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে কমিশন ‘স্ট্রিক্ট অ্যাকশন’ নিতে পিছপা হবে না বলেও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন এতদিনে কমিশনকে পদক্ষেপের রিপোর্ট পাঠানো হয়নি।
পূর্ব মেদিনীপুর-ময়না ও বারুইপুর পূর্ব: কমিশনের বিশেষ নজরে থাকা এলাকা
যে চারজন আধিকারিককে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দু’জনের দায়িত্ব এলাকা পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র। অভিযোগ, ভোটার তালিকা নিয়ে অনিয়ম, অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তিতে গাফিলতি, এমনকি পক্ষপাতিত্বের ইঙ্গিত মিলেছে তাঁদের কাজে। কমিশন বিশেষ নজরদারি চালিয়ে তদন্ত শেষে এই চার আধিকারিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ৯৬ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও রাজ্যের তরফে কোনো পদক্ষেপের খবর না পেয়ে ফের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠাতে বাধ্য হল কমিশন।
সাসপেন্ড কার্যকর না হওয়ায় প্রশ্নের মুখে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ কার্যকর না হওয়ায় রাজ্যের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সংবেদনশীল দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে ভোটারদের আস্থায় বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। কমিশন মনে করছে, দোষী আধিকারিকদের অব্যাহতি দেওয়া হলে ভবিষ্যতে আরও গাফিলতি ও পক্ষপাতিত্বের পথ খুলে যাবে।
রাজনৈতিক চাপ ও প্রশাসনিক বিলম্বের জল্পনা
রাজ্য প্রশাসন কেন এই নির্দেশ কার্যকর করতে দেরি করছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে। অনেকেই মনে করছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক চাপ ও প্রশাসনিক টানাপোড়েনের কারণেই বিলম্ব হচ্ছে। কমিশনের একাধিক সতর্কবার্তা সত্ত্বেও রাজ্যের তরফে সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়া নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। সচিবালয়ের অভ্যন্তরে এই ইস্যু নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে।
কমিশনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ: কড়া মনোভাবের ইঙ্গিত
নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে রিপোর্ট না পেলে তারা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে। প্রয়োজনে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত, দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। কমিশনের এই কড়া মনোভাব রাজ্যের প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়িয়েছে, কারণ এবার আর সময় নষ্টের সুযোগ নেই।