উত্তর ভারতে অবিরাম বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন। জম্মু-কাশ্মীরে বৈষ্ণো দেবী যাওয়ার পথে ভূমিধসে ৩৪ জনের মৃত্যু। নদীগুলিতে জলস্ফীতি, অনেক সেতু ভেঙে গিয়েছে, রেল ও সড়কপথ বন্ধ। সেনা ও এনডিআরএফ উদ্ধারকাজে নিযুক্ত।
Jammu-Kashmir: উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত। জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে অবিরাম বৃষ্টির কারণে নদীগুলিতে জলস্ফীতি দেখা দিয়েছে এবং ভূমিধসের ঘটনা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে। সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে মাতা বৈষ্ণো দেবী যাত্রাপথে, যেখানে ভূমিধসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরে পরিস্থিতি গুরুতর, বৃষ্টিতে রেকর্ড ভেঙেছে
জম্মু-কাশ্মীরে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ১৯১০ সালের পর সর্বোচ্চ। উধমপুরে ৬২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ২০১৯ সালের আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ভূমিধসের কারণে মাতা বৈষ্ণো দেবী যাত্রা সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত হয়েছে এবং বেশ কয়েক দিন ধরে পথ বন্ধ ছিল। চেনাব ও রবি নদী বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে নিম্নাঞ্চলে জল জমে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বিএসএফ ক্যাম্প বন্যায় প্লাবিত, উদ্ধারকার্য জারি
আখনুর ও পরগওয়ালের মতো এলাকাগুলোতে বন্যার জল প্রবেশ করায় অনেক অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। পরগওয়ালে বিএসএফ-এর একটি ক্যাম্প বন্যার কবলে পড়েছে, স্থানীয় মানুষজন অস্থায়ীভাবে সেটি বাঁচানোর চেষ্টা করে। পরে সেনা ও এনডিআরএফ নৌকো ও হেলিকপ্টারের সাহায্যে জওয়ানদের নিরাপদে উদ্ধার করে।
ওমর আবদুল্লার পরিদর্শন, ফের সেতু ভাঙল
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি রবি নদীর ওপর নির্মিত সেই চতুর্থ সেতুটিও পরিদর্শন করেছেন, যার একটি অংশ ভেঙে গিয়েছে। এটি সেই একই সেতু যা ২০১৪ সালের বন্যায়ও ভেঙে গিয়েছিল। ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন যে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের একটি সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। প্রশাসন এ পর্যন্ত ৫,০০০-এর বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
পাঞ্জাবে রবি, শতদ্রু ও বিপাশা নদীর জলস্তর বেড়েছে
জম্মু-কাশ্মীর ও হিমাচল থেকে আসা বন্যার জল পাঞ্জাবেও ব্যাপক ক্ষতি করেছে। রবি, শতদ্রু ও বিপাশা নদীর জলস্তর বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। পং, ভাকরা ও রঞ্জিত সাগর বাঁধ থেকে জল ছাড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। গুরুদাসপুর, ফাজিলকা, তারণতারণ ও হোশিয়ারপুরে বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
কাথুয়া ও পাঞ্জাব সীমান্তে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
পাঠানকোটের নিচু এলাকাগুলোতে জল জমে যাওয়ার কারণে মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাধোপুরে সিআরপিএফ-এর একটি ক্যাম্প ও বেশ কয়েকটি বাড়ি পুরোপুরি বন্যার জলে ডুবে গিয়েছে। সেনা হেলিকপ্টার সকাল থেকে উদ্ধারকার্য চালিয়ে বহু জওয়ান ও সাধারণ নাগরিককে নিরাপদে উদ্ধার করেছে।
স্কুলে আটকে পড়া ৪০০ শিশু, নৌকো দিয়ে উদ্ধার
গুরুদাসপুরের নবোদয় বিদ্যালয়ে বন্যার জল প্রবেশ করায় ৪০০ শিশু ও ৭০ জনের বেশি স্টাফ আটকে পড়ে। সকাল ৫টায় শুরু হওয়া উদ্ধারকাজে সকলকে নৌকোর মাধ্যমে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। কর্তারপুর করিডোরের কাছে ধুসি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি গ্রামে বন্যার জল ঢুকে হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
চিনুক ও এমআই-১৭ হেলিকপ্টার দ্বারা উদ্ধারকার্য
ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য চিনুক ও এমআই-১৭ হেলিকপ্টার নিয়মিতভাবে উড়ান ভরছে। রাস্তা ডুবে যাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারই এখন বন্যাদুর্গত এলাকায় পৌঁছানোর একমাত্র ভরসা। দিল্লি থেকে আসা এনডিআরএফ-এর দলগুলোও একটানা কাজ করে চলেছে।
রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ, মানুষজন困顿
জম্মু-পাঠানকোট হাইওয়ে ও জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ের অনেক অংশ ভেঙে গিয়েছে। রেল পরিষেবাও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ৪৫টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে এবং অনেক ট্রেন মাঝপথে আটকে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীরা খাবার-পানির অভাব ও আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন।
প্রশাসন ও সেনা উদ্ধারকাজে নিযুক্ত
প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ শিবির খুলেছে। এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ, জল ও মোবাইল পরিষেবা পুনরুদ্ধারের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। সেনা, এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ দলগুলো একটানা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে কাজ করে চলেছে।