বিহারের রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী এবং সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি (এসবিএসপি)-র সভাপতি ওম প্রকাশ রাজভর একটি বড় বিবৃতি দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। বিহার সফরকালে তিনি শুধুমাত্র রাজ্যের ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনী (এসআইআর) নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ করেননি, বরং এ-ও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) বহিষ্কৃত নেতা তেজ প্রতাপ যাদব সমাজবাদী পার্টিতে (এসপি) যোগ দিতে পারেন।
রাজভরের এই বিবৃতি রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেছেন যে বিহারে বিরোধীরা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে এবং জাল ভোটারদের ওপর ভরসা করে ক্ষমতায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু যখন সেই পথ বন্ধ হয়ে গেল, তখন তারা হইচই শুরু করেছে।
বিরোধীদের জাল ভোটারদের উপর ছিল ভরসা
ওপি রাজভর বিহারে চলমান ভোটার তালিকা সংশোধনকে বিরোধীদের উদ্বেগের আসল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে বিরোধীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে যাতে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং সরকারের ওপর প্রশ্ন তোলা যায়। তিনি বলেন যে ভোটার তালিকা থেকে এমন লোকদের নাম বাদ দেওয়া একেবারে ন্যায্য যারা হয় এখন আর এই পৃথিবীতে নেই অথবা অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হয়েছেন।
রাজভর দাবি করেছেন যে বিরোধীরা বিধানসভা নির্বাচনে জাল ভোটারদের সাহায্যে জেতার আশা করেছিল, কিন্তু সরকার যখন এর ওপর কড়া নজরদারি করেছে, তখন তারা অস্বস্তিতে পড়েছে। তিনি বলেন যে, এইবার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার কারণে বিরোধীদের কৌশল ব্যর্থ হয়ে গেছে।
বিহার নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় কৌশল
ওম প্রকাশ রাজভর বিহারে তাঁর দলের কৌশল নিয়েও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে তাঁর দল রাজ্যে অতি-পিছিয়ে পড়া জাতি যেমন রাজভর, রাজবংশী, লোহার ইত্যাদিদের থেকে ভালো সমর্থন পাচ্ছে। এই সম্প্রদায়গুলি এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব পায়নি, কিন্তু তাঁর দল এই শূন্যস্থান পূরণ করতে প্রস্তুত।
রাজভর আরও বলেন যে, গত উপনির্বাচনে তাঁর দলের সমর্থনে এনডিএ বড় জয় পেয়েছিল, যেখানে সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে ফলাফল প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ-র সঙ্গে থাকতে চান, যদি তাঁরা সম্মানজনক আসন পান। তিনি এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে প্রয়োজন পড়লে তাঁর দল একা লড়তেও প্রস্তুত। তিনি ২০টির বেশি আসনে দাবি জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে রাজ্যের ১০০টির বেশি আসনে তাঁর দলের শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে।
তেজ প্রতাপের এসপি-তে যোগ দেওয়ার জল্পনা
রাজভর তাঁর বিবৃতিতে তেজ প্রতাপ যাদবকে নিয়েও বড় দাবি করেছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আরজেডি তাদের বহিষ্কৃত নেতা তেজ প্রতাপকে এসপিতে 'সামঞ্জস্য' করানোর চেষ্টা করতে পারে। এই বিবৃতি এমন সময় এসেছে যখন তেজ প্রতাপের সক্রিয়তা এবং এসপির সঙ্গে তাঁর ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আলোচনা আগে থেকেই চলছিল। রাজভরের এই বিবৃতি সেই জল্পনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজভর মনে করেন যে বিহারে রাজনীতি এখন আর পুরনো পথে চলবে না। অতি-পিছিয়ে পড়া জাতিগুলোর সংঘবদ্ধ সমর্থন কারা পাবে, সেটাই নির্বাচনী ফলাফলের দিক নির্ধারণ করবে। এমতাবস্থায় এসপি, এসবিএসপি এবং বিজেপির মতো দল এই জনসমর্থন আদায়ের জন্য পুরো চেষ্টা চালাচ্ছে।