মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়া জেলায় পবিত্র নর্মদা নদীর মাঝে মন্ধাতা দ্বীপে অবস্থিত ওঙ্কারেশ্বর মন্দির, যা ভগবান শিবের বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গগুলির মধ্যে অন্যতম। এই দ্বীপের আকার 'ওঁ' (ওঙ্কার)-এর মতো মনে করা হয়, এবং এই কারণেই এখানে স্থাপিত শিবলিঙ্গকে ওঙ্কারেশ্বর নামে জানা যায়। এই স্থানটি কেবল আধ্যাত্মিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, সাংস্কৃতিক ও পৌরাণিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুই শিবলিঙ্গ, এক বিশ্বাস: ওঙ্কারেশ্বর এবং মমলেশ্বর
যেখানে একদিকে ওঙ্কারেশ্বর শিবলিঙ্গ দ্বীপের কেন্দ্রে অবস্থিত, সেখানে অন্য দিকে নর্মদার দক্ষিণ তীরে মমলেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ বিরাজমান। মমলেশ্বরকে অমরেশ্বরও বলা হয়। পৌরাণিক मान्यता অনুসারে, ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন তখনই সম্পূর্ণ হয় যখন ভক্তরা মমলেশ্বরেরও দর্শন করেন।
ধর্মগ্রন্থগুলিতে উল্লেখ আছে যে ঋষিদের প্রার্থনায় ভগবান শিব এখানে দুটি রূপে আবির্ভূত হয়ে ওঙ্কারেশ্বর এবং মমলেশ্বরের রূপে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। শিব পুরাণে এটিকে পরমেশ্বর লিঙ্গ বলা হয়েছে, যা উভয় রূপেই প্রতিষ্ঠিত।
রাজা মান্ধাতার তপস্যার সঙ্গে জড়িত কাহিনী
এই জ্যোতির্লিঙ্গের উৎপত্তির সঙ্গে জড়িত একটি বিখ্যাত কাহিনী রাজা মান্ধাতার। কথিত আছে, রাজা শিবকে প্রসন্ন করার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন এবং অবশেষে ভগবান আবির্ভূত হন। মান্ধাতার ভক্তি দেখে শিব এই স্থানটিকে তাঁর আবাসস্থল হিসেবে বেছে নেন। এই গল্পটি আজও ভক্তদের অসীম শ্রদ্ধা এনে দেয়।
মমলেশ্বর মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী অতুলনীয়
মমলেশ্বর মন্দিরটি প্রাচীন নাগর শৈলীতে নির্মিত। এখানকার দেওয়াল এবং স্তম্ভগুলিতে পাথরের কারুকার্য অসাধারণ। মন্দির প্রাঙ্গণে মোট পাঁচটি তলা রয়েছে এবং প্রতিটি তলাতেই শিবালয় অবস্থিত। এছাড়াও, প্রাঙ্গণে আরও ছয়টি ছোট মন্দির রয়েছে, যা বিভিন্ন দেবতাকে উৎসর্গীকৃত। এই স্থানটি ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দ্বারা সংরক্ষিত ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
রাক্ষসদের থেকে মুক্তির স্থান
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এক সময়ে এই অঞ্চলে রাক্ষসদের উপদ্রব ছিল। ঋষি-মুনিদের রক্ষার জন্য ভগবান শিব দুটি রূপে অবতীর্ণ হন - একটি রূপ ওঙ্কারেশ্বরের রূপে এবং অন্যটি মমলেশ্বরের রূপে। এই দুটি রূপকে আলাদা আলাদা স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল, যাতে সাধক ও ভক্তরা আশীর্বাদ লাভ করতে পারে।
ধর্মীয় গ্রন্থগুলিতে গুরুত্ব লিপিবদ্ধ
ওঙ্কারেশ্বর এবং মমলেশ্বরের উল্লেখ স্কন্দ পুরাণ, শিব পুরাণ সহ আরও অনেক ধর্মীয় গ্রন্থে পাওয়া যায়। এই গ্রন্থগুলিতে এটিকে তপস্যা, সাধনা এবং মোক্ষের ভূমি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ঋষি এবং তপস্বীরা এখানে বছরের পর বছর ধরে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেছেন, যার ফলে এই স্থানটি শক্তির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
নর্মদার তীরে এক অলৌকিক অভিজ্ঞতা
ওঙ্কারেশ্বর এবং মমলেশ্বর মন্দিরগুলির পরিবেশ অত্যন্ত শান্ত এবং আধ্যাত্মিক। নর্মদার কলকল ধ্বনির তীরে বসে ধ্যান করা বা শিবের স্তুতি করা, ভক্তদের এক বিশেষ আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা দেয়। এখানে সকাল ও সন্ধ্যার আরতিতে অংশগ্রহণ করা নিজের মধ্যে একটি অনন্য অনুভূতি।
প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম
ওঙ্কারেশ্বর এবং মমলেশ্বরের মহিমা শুনে প্রতি বছর দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্ত এখানে দর্শনের জন্য আসেন। শ্রাবণ মাসে, শিবরাত্রিতে এবং বিশেষ উৎসবে এখানে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে। ভক্তরা নর্মদা স্নানের পর উভয় শিবলিঙ্গের দর্শন করে পুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে পূজা করেন।
মমলেশ্বরে প্রতি তলে শিবের বাস
মমলেশ্বর মন্দিরের একটি বিশেষত্ব হল এর প্রতিটি তলে একটি শিবালয় অবস্থিত। ভক্তরা এক এক করে উপরের তলাগুলিতে ওঠেন এবং প্রতিটি স্থানে শিবকে প্রণাম করেন। এই যাত্রা ভক্তদের জন্য একটি সাধনার মতো অভিজ্ঞতা প্রদান করে।