প্রসব মানেই যন্ত্রণা নয়, নতুন গবেষণা দিচ্ছে ভরসা
আজকের দিনে নর্মাল ডেলিভারি শুনলেই অনেক মহিলার মনে আতঙ্ক জাগে। কারণ প্রসবের সময় অতি তীব্র যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয়, যা অনেক সময় মানসিক ও শারীরিকভাবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এবার পরিস্থিতি বদলাতে চলেছে। গবেষণায় মিলেছে আশার আলো—স্বাভাবিক প্রসবও হতে পারে সম্পূর্ণ ব্যথাহীন।
বুন্দেলখণ্ড মেডিক্যাল কলেজের গবেষণায় বিরাট সাফল্য
মধ্যপ্রদেশের সাগরের বুন্দেলখণ্ড মেডিক্যাল কলেজে পরিচালিত এক অভিনব গবেষণায় মিলেছে সুখবর। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এবার মায়েরা হাসিমুখেই সন্তান জন্ম দিতে পারবেন। গবেষণা অনুযায়ী, নর্মাল ডেলিভারি ব্যথা ছাড়াই সম্ভব, যা এক নতুন চিকিৎসাবিজ্ঞানের অধ্যায় রচনা করতে পারে।
গবেষণা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত এবং প্রয়োগ শুরু
সম্প্রতি এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ অ্যাপ্লাইড রিসার্চ-এ। শুধু তাই নয়, স্থানীয় মেডিক্যাল কলেজে ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতি ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রোগীর সম্মতি সাপেক্ষে এই আধুনিক সুবিধা এখন থেকে নিয়মিতভাবে দেওয়া হবে।
দেশে প্রথমবার এমন উদ্যোগে এগিয়ে এলো সাগরের প্রতিষ্ঠান
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, বুন্দেলখণ্ড মেডিক্যাল কলেজ এখন দেশের অন্যতম প্রথম প্রতিষ্ঠান, যেখানে এই আধুনিক ‘পেইনলেস নর্মাল ডেলিভারি’ সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে রোগীর লিখিত সম্মতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে চিকিৎসা প্রক্রিয়া স্বচ্ছ থাকে।
অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের নেতৃত্বে সম্পন্ন হলো পরীক্ষা
এই গবেষণার মূল কাজটি সম্পন্ন করেছেন অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ ভিনিশা। ১২০ জন রোগীর উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে, তাঁদের অনুমতি নিয়েই। গবেষণা শুরু হয়েছিল প্রায় আড়াই বছর আগে। ফলাফল আশাব্যঞ্জক—না মা, না শিশুর, কারোরই কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
রোপিভাকেইন: নতুন ওষুধে প্রসব হবে যন্ত্রণাহীন
অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান ডাঃ সর্বেশ জৈন জানিয়েছেন, ডেলিভারির সময় জরায়ুর সংকোচনের ফলে যে ব্যথা হয়, সেটি যদি মেরুদণ্ডের স্তরে অসাড়কারী ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে প্রসব সম্পূর্ণ ব্যথাহীন হয়। এজন্য তাঁরা ব্যবহার করেছেন রোপিভাকেইন নামের একটি ওষুধ।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের পুরনো পদ্ধতিতে নতুন প্রয়োগ
যদিও এই পদ্ধতি চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন নয়, তবে রোপিভাকেইন ব্যবহার করে প্রথমবার সফলভাবে এমন পরীক্ষা করা হলো। গবেষক দলের দাবি, এই ওষুধ নিরাপদ এবং কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। ফলে মা এবং শিশু দুজনই থাকবেন সুস্থ।
খরচের তুলনায় অনেক বেশি সহজলভ্য সেবা
এখনও পর্যন্ত সাগর অঞ্চলের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই সেবা নিয়মিত পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে মেট্রোপলিটন শহরের বেসরকারি হাসপাতালে একই সুবিধা নিতে গেলে ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তবে বিএমসি এই সুবিধা দিচ্ছে একেবারেই বিনামূল্যে, যা সাধারণ পরিবারের জন্য স্বস্তির খবর।
রোগীদের জন্য বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ
ইতিমধ্যেই বিএমসিতে এই সেবা চালু হয়েছে। গর্ভবতী মহিলারা চাইলে অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগে গিয়ে নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে পারবেন। প্রসববেদনা শুরু হলেই পরিবার চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, সময়মতো নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
নারীদের স্বাস্থ্যসেবায় এক নতুন অধ্যায়
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই গবেষণা সফলভাবে প্রসারিত হলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত খুলবে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রসব আর আতঙ্কের বিষয় হবে না। বরং ব্যথাহীন স্বাভাবিক প্রসব তাঁদের শারীরিক ও মানসিক চাপ কমিয়ে এনে মাতৃত্বকে আরও আনন্দময় করে তুলবে।