আধুনিক জীবনযাত্রা, বাড়ছে পাইলসের ঝুঁকি
আজকের দ্রুতগতির জীবনে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এবং জল কম খাওয়ার কারণে ক্রমশই বাড়ছে পাইলসের সমস্যা। মলদ্বারের শিরায় চাপ পড়ে ফুলে ওঠে এবং তার ফলে মলত্যাগের সময় ভয়ানক ব্যথা ও রক্তপাত হয়। অনেকের ক্ষেত্রে রক্তাক্ত পাইলস জীবনের প্রতিদিনের যন্ত্রণায় পরিণত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অতিরিক্ত মশলাদার খাবারও এ সমস্যার অন্যতম কারণ।
চিকিৎসার প্রচলিত পথ বনাম ঘরোয়া প্রতিকার
পাইলস হলে অনেকেই ভণ্ডদের ফাঁদে পড়েন, কেউ আবার অস্ত্রোপচারের পথ বেছে নেন। কিন্তু, অস্ত্রোপচারের পরও অনেক ক্ষেত্রে পাইলস পুরোপুরি সারে না। তাই বিকল্প হিসেবে অনেকে ঘরোয়া ও আয়ুর্বেদিক উপায় খুঁজে পান। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের ভেতর থেকে সমস্যা দূর না হলে সাময়িক চিকিৎসায় আরাম মিললেও সমস্যা বারবার ফিরে আসতে পারে।
আয়ুর্বেদে ‘চার উপাদান’ – পাইলসের ঘরোয়া ব্রহ্মাস্ত্র
আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ দীক্ষা ভাভসরের মতে, দুধ, লেবু, কলা ও দেশি কর্পূর একসঙ্গে পাইলসের ক্ষেত্রে অসাধারণ ফল দিতে পারে। তবে শর্ত, কর্পূর অবশ্যই দেশি হতে হবে। বাজারে পাওয়া কৃত্রিম কর্পূর শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই চারটি জিনিসকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে মাত্র তিন দিনের মধ্যে রক্তপাত কমে যায় এবং মলত্যাগের সময় আরাম পাওয়া যায়।
দুধ-লেবুর অনন্য জুটি, রক্তপাত বন্ধে কার্যকর
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, সকালে খালি পেটে এক কাপ দেশি গরুর দুধ হালকা গরম করে তার মধ্যে একটি লেবুর রস ছেঁকে মিশিয়ে পান করতে। এই সহজ রেসিপিটি বহু শতাব্দী ধরে পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দাবি করা হয়, মাত্র তিন দিনের নিয়মিত প্রয়োগেই রক্তপাত বন্ধ হয় এবং অর্শের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। প্রথম দিন থেকেই রোগীরা উপশম অনুভব করতে শুরু করেন।
কলা-কর্পূরের গোপন মন্ত্র
যদি দুধ বা লেবু সহজলভ্য না হয়, তাহলে ব্যবহার করা যেতে পারে কলা ও কর্পূর। একটি পাকা কলার টুকরোর মধ্যে মটরশুঁটির সমান দেশি কর্পূর ঢুকিয়ে সেটি না চিবিয়ে সরাসরি গিলে ফেলতে হয়। চিবোলে কর্পূরের ঝাঁজ শরীরে ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু সঠিকভাবে গিলে নিলে এটি অন্ত্র পরিষ্কার করে এবং প্রথম দিন থেকেই আরাম দিতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, টানা তিন দিন এই টোটকা মেনে চললে রক্তপাত থেমে যায় এবং মলত্যাগ অনেক সহজ হয়ে ওঠে।
পেট পরিষ্কার রাখাই মূল চাবিকাঠি
চিকিৎসকরা বারবার জোর দেন—পাইলস থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথম শর্ত হলো পেট পরিষ্কার রাখা। এর জন্য রাতে ঘুমানোর আগে হালকা গরম জলে ত্রিফলা গুঁড়ো খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। চাইলে দিনে একবার হরিতকি গুঁড়োও নেওয়া যেতে পারে। এতে হজমশক্তি ঠিক থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমে এবং মল নরম হয়ে যায়। এর ফলে পাইলসের চাপ স্বাভাবিকভাবেই কমে আসে।
আয়ুর্বেদে অশ্বগন্ধা-গিলয়-নিমের ক্বাথ
যদি রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে আয়ুর্বেদে অশ্বগন্ধা, গিলয় এবং নিমের ক্বাথ পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ভেষজ গাছের গুণ শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে, রক্তপাত কমায় এবং মলদ্বারের ফোলা শিরায় আরাম দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এগুলি নিয়মিত খেলে পাচনতন্ত্রও শক্তিশালী হয়।
যোগাসনেই মিলবে স্থায়ী আরাম
শুধু ওষুধ বা ঘরোয়া টোটকাই যথেষ্ট নয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু যোগাসন করলে পেট ও অন্ত্র সুস্থ থাকে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে, হজম শক্তি বাড়ে এবং পাইলসের সমস্যা ধীরে ধীরে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। যোগাভ্যাস নিয়মিত করলে নতুন করে অর্শ হওয়ার ঝুঁকিও অনেকটা কমে যায়।
সাবধানবাণী – সবসময় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জরুরি
তবে মনে রাখা দরকার, সব ধরনের শরীর একইভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। তাই কোনও ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রক্তপাত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ব্যথা অসহনীয় হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।