হার্ট অ্যাটাকের আগে শরীর যে ৭টি সংকেত দেয় অবহেলা করলে বিপদ আসন্ন

হার্ট অ্যাটাকের আগে শরীর যে ৭টি সংকেত দেয় অবহেলা করলে বিপদ আসন্ন

হঠাৎই কেন ঘটে হার্ট অ্যাটাক

হার্ট অ্যাটাক মূলত হৃদয়ে অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ফল। শিরায় রক্ত চলাচল আটকে গেলে হৃদপেশীতে অক্সিজেন পৌঁছায় না, আর সেখান থেকেই শুরু হয় প্রাণঘাতী সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটি একটি জরুরি চিকিৎসাজনিত পরিস্থিতি, যেখানে এক মুহূর্ত দেরি করলে প্রাণ সংশয় বাড়তে পারে।

সংকেতকে অবহেলা নয়, বুঝুন বিপদের বার্তা

চিকিৎসকদের মতে, হার্ট অ্যাটাক কখনও হঠাৎ করে আসে না। এর আগে শরীর কিছু বিশেষ সংকেত পাঠায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অধিকাংশ মানুষ সেসব ইঙ্গিতকে হালকাভাবে নেয়, ফলে ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ে। তাই আজকের দিনে হৃদরোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ সংকেতগুলিকে অবহেলা করা।

জীবনযাত্রায় পরিবর্তনই রক্ষা করতে পারে প্রাণ

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের জন্য বড়সড় চিকিৎসার দরকার পড়ে না। বরং প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় কিছু ছোট্ট পরিবর্তনই এই বিপদ এড়াতে সাহায্য করতে পারে। সঠিক ডায়েট, পর্যাপ্ত ঘুম, আর মানসিক চাপ কমানোর অভ্যাস হৃদয়কে সুস্থ রাখার মূলমন্ত্র।

অকারণ ক্লান্তি ও হজমের সমস্যা বড় সতর্কবার্তা

যদি কেউ ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরেও সারাদিন ক্লান্ত বোধ করেন, তবে তা হার্ট অ্যাটাকের আগাম সংকেত হতে পারে। একইভাবে দীর্ঘস্থায়ী এসিডিটি বা বারবার কনস্টিপেশনের সমস্যাও শরীরের ভেতরে হৃদপেশীর উপর চাপ তৈরি করছে বলে ইঙ্গিত দেয়।

শরীরের বামদিকে অস্বাভাবিক ব্যথা

হৃদরোগের অন্যতম বড় সংকেত হল শরীরের বামদিকে ব্যথা। অনেক সময় কাঁধ, গলা বা চোয়ালে ব্যথা শুরু হয়, যা পরে হার্ট অ্যাটাকের দিকে নিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি মাথা ঘোরা, লো ব্লাড প্রেসার বা সামান্য খাবার খেলেও পেট ভরা অনুভূতি—এসবকেও গুরুত্ব সহকারে দেখা জরুরি।

বুকে ভারী লাগা ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া

হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল বুকে ভারী লাগা বা অস্বস্তি। এ সময় অনেকেরই আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়—বারবার রেগে যাওয়া, চিড়চিড়ে মেজাজ কিংবা উদ্বেগের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। চিকিৎসকদের মতে, এগুলো অবহেলা করলে বড়সড় বিপদ হতে পারে।

কী করবেন? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

কার্ডিওলজিস্টদের মতে, হার্ট অ্যাটাক কখনওই নিঃশব্দে আসে না। প্রতিবারই কিছু না কিছু সংকেত দিয়ে যায় শরীর। সেগুলো সময়মতো চিহ্নিত করা গেলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। তাই সতর্ক জীবনযাত্রাই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ।

রক্তচাপ, শুগার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন

হার্ট সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত চেকআপ অপরিহার্য। বিশেষত রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

পর্যাপ্ত ঘুম আর খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে থাকা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমের অভাব সরাসরি হার্টের উপর প্রভাব ফেলে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম নিতে হবে। পাশাপাশি ধূমপান ও মদ্যপানের মতো অভ্যাস ত্যাগ করাও জরুরি, কারণ এগুলো হৃদপিণ্ডের ক্ষতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

যোগা ও মেডিটেশনকে রুটিনে আনুন

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের অন্যতম সহজ উপায় হল যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন। প্রতিদিন অন্তত আধ ঘণ্টা যোগ বা মেডিটেশন করলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে। এর সঙ্গে ডায়েটে তাজা ফল ও সবজি রাখলে হার্ট অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবে।

প্রাণায়াম হৃদয়কে রাখে তরতাজা

আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন সকালে নিয়মিত প্রাণায়াম করলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে, মন রিল্যাক্স হয় এবং স্ট্রেস কমে। নিয়মিত প্রাণায়াম অভ্যাসে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

সতর্ক থাকুন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

সবশেষে, যেকোনও ধরনের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যায় অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সাধারণ পরামর্শ বা ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। সময়মতো চিকিৎসা ও সচেতন জীবনযাপনই হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।

Leave a comment