পাকিস্তানে বন্যা ও বৃষ্টিতে ৭০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু, উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী

পাকিস্তানে বন্যা ও বৃষ্টিতে ৭০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু, উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী

পাকিস্তানে অবিরাম বৃষ্টি ও বন্যায় ৭০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। ৯০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। খাইবার-পাখতুনখোয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সেনাবাহিনী ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে এবং হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

Pakistan Rain Alert: পাকিস্তানে একটানা ভারী বৃষ্টি এবং আকস্মিক বন্যা জনজীবনকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে সরকারকে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের জন্য সেনাবাহিনীর সাহায্য নিতে হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং আহতদের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে।

মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা

পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) প্রতিবেদন অনুসারে, ২৬ জুন থেকে এ পর্যন্ত ৭০৬ জন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের সংখ্যাও ৯৬৫-তে পৌঁছেছে। একটানা বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, যা প্রশাসনের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল

এনডিএমএ-র মতে, খাইবার-পাখতুনখোয়া এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ৪২৭ জন মারা গেছেন। এছাড়া পাঞ্জাব প্রদেশে ১৬৪ জন, সিন্ধ প্রদেশে ২৯ জন, বালুচিস্তানে ২২ জন, পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে ৫৬ জন এবং ইসলামাবাদ অঞ্চলে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশ বন্যার কবলে পড়েছে।

সেনাবাহিনীর ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান জোরদার

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানিয়েছেন যে খাইবার-পাখতুনখোয়ায় ৯টি ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে ৬,৯০৩ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রদেশে ৮টি সামরিক ইউনিট ক্রমাগত কাজ করছে। বুনের জেলায় ২টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও, সেনাবাহিনীর বিমানও ত্রাণ ও সরবরাহ কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

হাজার হাজার মানুষ উদ্ধার

সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সহায়তায় এ পর্যন্ত ২৫,০০০-এর বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পানীয় জল, ওষুধ এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় অস্থায়ী ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে, যাতে বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিতে পারে।

সরকার ও সংস্থাগুলোর সমন্বয়

পাকিস্তানের ফেডারেল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেছেন যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এনডিএমএ এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। ক্রমাগত মিটিং করা হচ্ছে যাতে প্রতিটি জেলায় দ্রুত সাহায্য পৌঁছানো যায়। তিনি বলেন, সরকার সম্ভাব্য সব চেষ্টা করছে যাতে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ত্রাণ পেতে দেরি না করেন।

আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা

পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী ২৪ ঘণ্টার জন্য সতর্কতা জারি করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের অধিকাংশ স্থানে বজ্রঝড়সহ প্রবল বাতাস এবং ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, আগামী দিনে বন্যা ও বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

কেন বাড়ছে সমস্যা

বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রাস্তাঘাট ও সেতুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তা ভেঙে গেছে এবং যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এর কারণে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি, বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহও ব্যাহত হয়েছে, যা স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এনডিএমএ-র সতর্কতা

এনডিএমএ সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। মানুষকে নদী ও জলমগ্ন এলাকা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় বিপদ বেশি, সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

Leave a comment