বিহারের পাপ্পু যাদব রাহুল গান্ধীর ‘ভোট অধিকার যাত্রা’কে সমর্থন জানিয়েছেন এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটার আইডি জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বর্তমান লোকসভা ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন, যা রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
Bihar Election 2025: বিহারের রাজনীতিতে ইদানিং ফের উত্তেজনা বেড়েছে। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী যেখানে ‘ভোট অধিকার যাত্রা’র মাধ্যমে জনগণের মধ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেখানে নির্দল সাংসদ এবং বিহারের রাজনীতির পরিচিত মুখ রাজেশ রঞ্জন ওরফে পাপ্পু যাদব নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, যদি ভোট প্রক্রিয়ায় কোনওরকম দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে বর্তমান লোকসভা ভেঙে দিয়ে পুনরায় নির্বাচন করানো হোক।
রাহুল গান্ধীকে পাপ্পু যাদবের সমর্থন
পাটনায় মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় পাপ্পু যাদব স্পষ্ট করে বলেন যে রাহুল গান্ধীর জনগণের মধ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার একটি পদক্ষেপ। তিনি বলেন, 'প্রত্যেক নেতারই নিজের কথা বলার এবং জনগণের মধ্যে যাওয়ার অধিকার আছে। মহাজোটের নেতাদের নির্বাচনী ময়দানে লড়ার ক্ষমতা আছে এবং আমি এই যাত্রাকে সমর্থন করি।'
তিনি জানান যে ১৭ই আগস্ট থেকে তিনিও বিহারে ভোটাধিকার, গরিবদের সুরক্ষা এবং সংবিধান রক্ষার জন্য আন্দোলনের অংশ হবেন। পাপ্পু যাদবের মতে, রাহুল গান্ধীর ‘ভোট অধিকার যাত্রা’ শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং এটি জনগণের অধিকার ও ন্যায়ের লড়াই।
ডাবল ভোটার আইডি এবং এসআইআর বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন
পাপ্পু যাদব ডাবল এপিক নম্বর (ডুপ্লিকেট ভোটার আইডি) এবং এসআইআর বিতর্ক নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাজকর্মের ওপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'আমি আগেও বলেছি যে ভোটার আইডিকে আধার কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা উচিত। যদি এটা করা হয়, তাহলে জালিয়াতির কোনও সুযোগ থাকবে না। কিন্তু তারা এটা করতে চাইছে না। একদিকে তারা বলছে যে ৮ লক্ষ ডাবল ভোটার আইডি আছে, অন্যদিকে কোনও ठोस পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।'
তিনি অভিযোগ করেন যে বিজেপি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে। তাঁর মতে, নির্বাচন কমিশন না সিসিটিভি ফুটেজ সরবরাহ করছে, না ভোটার লিস্ট দিতে রাজি হচ্ছে। 'এটাও জানানো হচ্ছে না যে ৬৫ লক্ষ ভোট কার বাতিল করা হয়েছে এবং কেন? যখন ভোট বাতিলের পিছনে কোনও স্পষ্ট কারণ দেওয়া হচ্ছে না, তখন এই প্রক্রিয়াটিই সন্দেহজনক।'
আগে থেকেই ঠিক ছিল কার ভোট কাটতে হবে
পাপ্পু যাদবের অভিযোগ, ভোট বাতিলের প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ ছিল না। তিনি প্রশ্ন তোলেন যে যখন বিএলও (BLO) মানুষের কাছ থেকে কোনও লিখিত নথি বা পরিচয়পত্র নেয়নি, তাহলে কিসের ভিত্তিতে এটা স্থির করা হল যে কাদের নাম বাদ দেওয়া হবে? 'এমনটা মনে হচ্ছে যে আগে থেকেই ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল যে কোন ভোটারদের ভোট বাতিল করতে হবে। এটা সরাসরি গণতান্ত্রিক অধিকারের লঙ্ঘন।'
লোকসভা ভেঙে দেওয়ার এবং নতুন নির্বাচনের দাবি
সবচেয়ে বড় বিবৃতি দিয়ে পাপ্পু যাদব বলেন, 'যদি লোকসভা নির্বাচন আধার কার্ডের ভিত্তিতে হয়ে থাকে এবং সেই প্রক্রিয়া ভুল প্রমাণিত হয়, তাহলে প্রথমেই বর্তমান লোকসভা ভেঙে দেওয়া উচিত। এর পরে নতুন লোকসভা নির্বাচন করানো হোক। যতক্ষণ না নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ হবে, ততক্ষণ জনগণের আস্থা ফিরবে না।'
তিনি আরও বলেন যে নির্বাচন কমিশনকে এসআইআর (স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন) প্রক্রিয়া শুরু করার আগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
২০২৫ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক চাপানউতোর
পাপ্পু যাদবের এই বক্তব্যকে বিহারের আসন্ন ২০২৫ বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দেখা হচ্ছে। তেজস্বী যাদবের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত পাপ্পু যাদব এখন রাহুল গান্ধীর কাছে এসে বিরোধী জোটকে একটি নতুন সুর দিচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর এই বক্তব্য কেবল কেন্দ্রীয় সরকার নয়, রাজ্য সরকারের সমীকরণের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।