পাটনায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আবারও প্রশ্নের মুখে। শুক্রবার রাতে, গান্ধি ময়দান থানা এলাকার কাছে, রাত প্রায় ১১:৪০ মিনিটে, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত গোপাল খেমকাকে তাঁর বাড়ির বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয়। খেমকা গাড়ি থেকে নামতেই, বাইক আরোহী দুই দুষ্কৃতী খুব কাছ থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, এই ঘটনাটি গান্ধি ময়দান থানার খুব কাছেই ঘটেছিল, অথচ পুলিশের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। স্থানীয় মানুষ এবং পরিবারের সদস্যরা পুলিশের এই গাফিলতির তীব্র নিন্দা করেছেন।
ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকেন এবং নির্দেশ দেন, তদন্তে কোনো প্রকার গাফিলতি যেন না হয়। পুলিশ সদর দফতরও ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে, যাতে বিশেষ বাহিনী এবং জেলা পুলিশের আধিকারিকরা রয়েছেন। মামলার প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুরোনো শত্রুতার সম্ভাবনা
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এই হত্যার পিছনে পুরনো শত্রুতা থাকতে পারে। ডিজিপি বিনয় কুমার নিজেই বলেছেন, খেমকা হত্যার পেছনে পুরনো বিবাদ একটি বড় কারণ হতে পারে। পুলিশের হাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র এসেছে, যা খুনিদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।
জানা যাচ্ছে, ঘটনার সময় খেমকা বাঁকিপুর ক্লাব থেকে ফিরছিলেন এবং গাড়ি থেকে নামার পরেই হামলাকারীরা তাঁর ওপর গুলি চালায়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, খেমকার বড় ছেলেরও ২০১৮ সালে হাজিপুরে জমি বিবাদ নিয়ে খুন হয়েছিল। সেই ঘটনার পর গোপাল খেমকাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল, তবে এপ্রিল, ২০২৪-এ সেই নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়। এরপর তিনি আর নিরাপত্তা চাননি। এখন এই হামলার পর তাঁর ছোট ছেলে (যিনি পেশায় চিকিৎসক) এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার সন্ধ্যায় পাটনা পুলিশ বেউর জেলে অভিযান চালায়। তল্লাশিতে পুলিশ তিনটি মোবাইল ফোন, একটি ডেটা কেবল এবং একটি কাগজের টুকরো উদ্ধার করেছে, যেখানে কিছু সন্দেহজনক মোবাইল নম্বর লেখা ছিল। পুলিশের ধারণা, এই খুনের সঙ্গে জেলে বন্দী কিছু আসামীর যোগ থাকতে পারে, এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নেতাদের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন
ঘটনার পর রাজ্যের রাজনীতিতেও উত্তাপ ছড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসোয়ান এই হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে অভিহিত করে বলেছেন, এটি আইন-শৃঙ্খলার উপর সরাসরি আঘাত। তিনি প্রশ্ন তোলেন, থানার এত কাছে এমন ঘটনা ঘটল কীভাবে? চিরাগ সরকারের কাছে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
অন্যদিকে, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার সিনহা রবিবার শোকাহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং বলেন, এটি শুধু হত্যা নয়, রাজ্যের শাসনব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর চেষ্টা। তিনি স্পষ্ট করেন, অপরাধীদের রেহাই দেওয়া হবে না এবং প্রয়োজন হলে এনকাউন্টারও করা হবে। উপমুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
পুলিশের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন
খেমকার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে, ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল, যা তাঁদের দুঃখ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও ডিজিপি বিনয় কুমার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, পুলিশ ঘটনার খবর পায় শনিবার রাত প্রায় ১২:৩০ মিনিটে। ডিজিপি-র মতে, ঘটনার পরপরই পরিবার গোপাল খেমকাকে চিকিৎসার জন্য কঙ্করবাগের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে পৌঁছতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট সময় লেগেছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনার খবর জানালে, সিনিয়র অফিসাররা রাত ১২:৪০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছন।
ডিজিপি বলেন, পুলিশের কাজে কোনো দেরি হয়নি। সবকিছু নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে এবং এখন প্রতিটি দিক গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজধানী পাটনায় একজন হাই-প্রোফাইল ব্যবসায়ীর এই হত্যাকাণ্ড শুধু শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে নি, বরং এটি রাজনৈতিক মহলেও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়, পুলিশের তদন্ত কত দ্রুত গতিতে চলে এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের পথে কত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আপাতত, খেমকা হত্যাকাণ্ড বিহার সরকারকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।