পিরিয়ড ক্র্যাম্প তলপেটের যন্ত্রণা কমাতে ৫ ঘরোয়া উপায়েই মিলবে স্বস্তি

পিরিয়ড ক্র্যাম্প তলপেটের যন্ত্রণা কমাতে ৫ ঘরোয়া উপায়েই মিলবে স্বস্তি

মহিলাদের প্রতি মাসের যন্ত্রণার নাম পিরিয়ড

পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব প্রতিমাসে মহিলাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এর সঙ্গেই জুড়ে থাকে অসহনীয় খিঁচুনি ও ব্যথা। অধিকাংশ মহিলারা এই সময়ে তলপেট, কোমর, এমনকি হাত-পা ও স্তনে অস্বস্তি অনুভব করেন। তবুও তাঁদের ঘরে-বাইরে কাজ চালিয়ে যেতে হয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ব্যথা কমাতে ঘন ঘন ওষুধ খাওয়া শরীরের পক্ষে মোটেই ভালো নয়। বরং কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললেই মিলতে পারে আরাম।

কেন হয় পিরিয়ডের খিঁচুনি

চিকিৎসকরা বলছেন, পিরিয়ডের ব্যথা বা ডিসমেনোরিয়া মূলত প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামের রাসায়নিকের প্রভাবে হয়। এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে অক্সিজেনের প্রবাহ কমিয়ে দেয়। এর ফলে তলপেট ও পিঠে তীব্র ব্যথা হয়। অনেক সময় এন্ডোমেট্রিওসিস বা অন্যান্য গাইনোকলজিক সমস্যার কারণেও ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। তবে সুখবর হলো, কিছু সহজ ও ঘরোয়া পদ্ধতি এই কষ্টকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।

গরম সেঁকে মিলবে তাত্ক্ষণিক স্বস্তি

পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো গরম সেঁক। একটি হিটিং প্যাড থাকলে সেটি দিয়ে পেটের ওপর গরম দিন। না থাকলে ইস্ত্রি দিয়ে কাপড় গরম করে তা ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি গরম জল বোতলে ভরে সেটি পেটের উপর রাখলেও কার্যকর হয়। এতে জরায়ুর পেশি শিথিল হয়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং ব্যথা দ্রুত উপশম হয়। বহু মহিলাই জানিয়েছেন, গরম সেঁক তাঁদের তলপেটের যন্ত্রণা অনেকটাই লাঘব করেছে।

আয়ুর্বেদিক চায়ের গুণে কমবে যন্ত্রণা

পিরিয়ডের কষ্টে ভেষজ চা এক অসাধারণ সমাধান। আদা, ক্যামোমাইল বা মৌরি দিয়ে তৈরি চা শরীরকে প্রশান্ত করে। বিশেষ করে আদা প্রদাহ-বিরোধী এবং ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে প্রায় ওষুধের মতো কাজ করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আদার কার্যকারিতা অনেক সময় NSAIDs ওষুধের মতোই হতে পারে, তবে এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ক্যামোমাইল চা আবার স্নায়ুকে শিথিল করে মানসিক চাপও কমায়। ফলে শারীরিক ও মানসিক, দুই দিক থেকেই আরাম মেলে।

ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি১-এর ভূমিকা

চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরে পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি১ থাকলে পিরিয়ডের খিঁচুনি কমে। ম্যাগনেসিয়াম পেশীর সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের উৎপাদন হ্রাস করে। অন্যদিকে, ভিটামিন বি১ স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করে ও শক্তি বিপাকে সহায়তা করে। নিয়মিত এগুলো গ্রহণ করলে শুধু ব্যথাই নয়, ক্লান্তি ও মুড সুইংও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তাই খাবারে শাকসবজি, বাদাম, ডাল ও পূর্ণশস্য অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে মেলে ভরসা

পিরিয়ডের যন্ত্রণা কমাতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড অসাধারণ ভূমিকা রাখে। চর্বিযুক্ত মাছ যেমন স্যামন, টুনা কিংবা সার্ডিনে প্রচুর ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। চাইলে সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও গ্রহণ করা যায়। গবেষণা বলছে, ওমেগা-৩ প্রদাহ কমিয়ে জরায়ুর ব্যথা হ্রাস করে। একই সঙ্গে এটি মানসিক অস্থিরতা, বিরক্তিভাবও নিয়ন্ত্রণে আনে। তাই খাদ্যতালিকায় মাছ রাখাই উত্তম।

হালকা শরীরচর্চাতেই মিলবে স্বস্তি

অনেকেরই ধারণা, পিরিয়ডের সময় শরীরচর্চা করলে ব্যথা বাড়তে পারে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটাই সত্যি। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত হালকা থেকে মাঝারি শরীরচর্চা করলে খিঁচুনির তীব্রতা কমে যায়। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন, টানা আট সপ্তাহ যারা দিনে ৩০ মিনিট করে শরীরচর্চা করেছেন, তাঁদের ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। যোগব্যায়াম, হালকা হাঁটা কিংবা স্ট্রেচিং এই সময়ে দারুণ উপকারী হতে পারে।

ওষুধ নয়, ঘরোয়া উপায়েই হোক সমাধান

বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ঘন ঘন ওষুধ খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। এতে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কিডনি ও লিভারও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই মহিলাদের উচিত ঘরোয়া সমাধানের ওপর বেশি ভরসা রাখা। প্রাকৃতিক উপায় যেমন গরম সেঁক, ভেষজ চা, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা—সব মিলিয়ে তৈরি করতে পারে এক স্বাস্থ্যকর সমাধান।

মানসিক স্বস্তিও জরুরি পিরিয়ডের সময়ে

পিরিয়ড শুধু শারীরিক কষ্ট নয়, মানসিক চাপও বাড়িয়ে দেয়। খিটখিটে মেজাজ, হতাশা কিংবা উদ্বেগ এই সময়ে মহিলাদের ভোগায়। তাই মানসিক শান্তি বজায় রাখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মেডিটেশন ও প্রিয় কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, শরীর ও মনের সমন্বয়েই পিরিয়ডের যন্ত্রণা থেকে পুরোপুরি মুক্তি সম্ভব।

উপসংহার: সচেতনতাই পথ দেখাবে

পিরিয়ডের ব্যথা আজও বহু মহিলার জন্য ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। তবে সচেতন জীবনযাপন, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চললে এই সমস্যাকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তাই ওষুধ নয়, প্রাকৃতিক পথেই সমাধান খুঁজে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ সুস্থ শরীর ও শান্ত মন—দুটোই মহিলাদের প্রতিদিনের জীবনের অপরিহার্য সঙ্গী।

Leave a comment