বিজ্ঞাপন কিংবদন্তি পীযূষ পান্ডে প্রয়াত, প্রধানমন্ত্রী মোদির শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিজ্ঞাপন কিংবদন্তি পীযূষ পান্ডে প্রয়াত, প্রধানমন্ত্রী মোদির শ্রদ্ধাঞ্জলি
সর্বশেষ আপডেট: 12 ঘণ্টা আগে

বিজ্ঞাপন জগতের কিংবদন্তি পীযূষ পান্ডে ৭০ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। ওগিলভি ইন্ডিয়াতে তাঁর অবদান ভারতীয় বিজ্ঞাপনের গতিপথ পরিবর্তন করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন এবং তাঁর সৃজনশীলতার প্রশংসা করেছেন।

নয়াদিল্লি: ভারতীয় বিজ্ঞাপন জগতের কিংবদন্তি পীযূষ পান্ডে ৭০ বছর বয়সে মারা গেছেন। পান্ডে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ওগিলভি ইন্ডিয়াতে সৃজনশীল নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ভারতীয় ভোক্তাদের গভীর বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে অনেক বিখ্যাত প্রচারাভিযান পরিচালনা করেছেন। তাঁর অবদান শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন শিল্পের গতিপথই পরিবর্তন করেনি, বরং ভারতীয় সংস্কৃতি এবং স্থানীয় অনুভূতিগুলিকে মূল স্রোতে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রয়াণে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন যে, পান্ডের সৃজনশীলতা এবং অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি সর্বদা প্রশংসিত হবে।

পীযূষ পান্ডের জীবন

পীযূষ পান্ডের জন্ম জয়পুরে হয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞাপন ও যোগাযোগ জগতে তাঁর আগ্রহ ছিল। তিনি এবং তাঁর ভাই প্রসূন পান্ডে রেডিও জিঙ্গেলসে কণ্ঠ দিয়ে তাঁদের কর্মজীবন শুরু করেন। শুরুর দিনগুলিতে পান্ডে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেছিলেন, কিন্তু ১৯৮২ সালে ওগিলভি ইন্ডিয়াতে যোগদানের পর তাঁর কর্মজীবন স্থিতিশীল ও সফল হয়। তিনি ইংরেজি-কেন্দ্রিক বিজ্ঞাপনগুলিকে ভারতীয় লোকজীবন এবং অনুভূতির সাথে মানানসই করে তুলেছিলেন, যার ফলে বিজ্ঞাপনগুলি সহজেই ভারতীয় জনসাধারণের ভাষা ও বোধগম্যতার মধ্যে পৌঁছে যায়।

প্রধানমন্ত্রী মোদির শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স (আগের টুইটার) এ পোস্ট করে পীযূষ পান্ডেকে শ্রদ্ধা জানান। তিনি লিখেছেন যে পান্ডে বিজ্ঞাপন এবং যোগাযোগ জগতে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। মোদি বলেছেন, “শ্রী পীযূষ পান্ডে জি তাঁর সৃজনশীলতার জন্য প্রশংসিত ছিলেন। তিনি ভারতীয় বিজ্ঞাপন এবং মিডিয়াকে নতুন পরিচিতি দিয়েছেন। আমি বছরের পর বছর ধরে আমাদের কথোপকথনগুলিকে সর্বদা লালন করব। তাঁর প্রয়াণে দুঃখিত। আমার সমবেদনা তাঁর পরিবার এবং ভক্তদের সাথে রয়েছে। ওম শান্তি।”

ওগিলভি ইন্ডিয়াতে পান্ডের যাত্রা

পীযূষ পান্ডে ওগিলভি ইন্ডিয়াতে একজন শিক্ষানবিশ অ্যাকাউন্ট এক্সিকিউটিভ হিসাবে তাঁর যাত্রা শুরু করেন এবং পরে সৃজনশীল বিভাগে যোগদান করেন। তিনি কয়েক দশক ধরে জাতীয় সৃজনশীল পরিচালক, কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান এবং গ্লোবাল চিফ ক্রিয়েটিভ অফিসার পদে কাজ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে ওগিলভি ইন্ডিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পুরস্কারপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলির মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। পান্ডের প্রচেষ্টার ফলে ভারতীয় বিজ্ঞাপনে স্থানীয় গল্প, প্রবাদ এবং অনুভূতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার এক নতুন ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

পীযূষ পান্ডে ফেভিকল, হা্চ এবং এশিয়ান পেইন্টসের মতো স্মরণীয় প্রচারাভিযানগুলির জন্য পরিচিত। তিনি হিন্দি এবং স্থানীয় ভাষার প্রবাদগুলিকে মূলধারার বিজ্ঞাপনগুলিতে এনে ভারতীয় বিজ্ঞাপনের ভাষা ও ব্যাকরণকে নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন। পান্ডে ক্যাডবেরি, এগ এবং আরও অনেক ব্র্যান্ডের জন্য সৃজনশীল প্রচারাভিযানে মানবিকতা ও হাস্যরসের এক অনন্য মিশ্রণ উপস্থাপন করেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টার ফলে বিজ্ঞাপন কেবল একটি বিক্রয় সরঞ্জাম নয়, বরং গল্প বলার একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছিল।

কানস লায়নস-এ সেন্ট মার্কের লায়ন পুরস্কার

২০১৮ সালে পীযূষ পান্ডে এবং তাঁর ভাই প্রসূন পান্ডে কানস লায়নস ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অফ ক্রিয়েটিভিটিতে সেন্ট মার্কের লায়ন পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই পুরস্কার তাঁদেরকে এশিয়ার প্রথম প্রাপক হিসাবে সম্মানিত করে এবং তাঁদের জীবনব্যাপী সৃজনশীল অর্জনগুলির বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি। এই সম্মান কেবল তাঁদের প্রতিভা নয়, বরং ভারতীয় বিজ্ঞাপনকে আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিতি এনে দেওয়ারও প্রতীক।

Leave a comment