ভারত-জাপান অংশীদারিত্ব ও SCO বৈঠক: মোদীর চীন সফর কৌশলগত অবস্থান জোরদার করবে

ভারত-জাপান অংশীদারিত্ব ও SCO বৈঠক: মোদীর চীন সফর কৌশলগত অবস্থান জোরদার করবে

প্রধানমন্ত্রী মোদী তিন দিনের জাপান সফরের পর চীনে যাবেন। শীর্ষ সম্মেলনগুলিতে অংশ নিয়ে ভারত-জাপান অংশীদারিত্ব এবং SCO বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে ভারতের বৈশ্বিক কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী হবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী জাপান সফর: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ থেকে তিন দিনের জন্য জাপান সফরে রওনা হচ্ছেন। এই সময়ে তিনি টোকিওতে ১৫তম ভারত-জাপান বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী মোদী সরাসরি চীন সফরে যাবেন, যেখানে তিনি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। বর্তমানে ভারত এবং জাপানের সামনে বেশ কিছু অভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং তাদের বন্ধু ও শত্রুরাও অনেকটাই এক। এমতাবস্থায়, এই সফর শুধুমাত্র ভারত-জাপান সম্পর্কের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বৈশ্বিক কৌশলগত ভারসাম্য এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার দিক থেকেও এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সফরের তারিখ এবং কর্মসূচি

প্রধানমন্ত্রী মোদী রাত ৮.৩০ মিনিটে জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। জাপান থেকে ফেরার পর তিনি ৩০ আগস্ট থেকে চীনে তিয়ানজিনে SCO শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন, যা ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর জাপানের অষ্টম সফর হবে, অন্যদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে এটি তাঁর প্রথম শীর্ষ বৈঠক হবে। এই সফর ভারত-জাপান বিশেষ কৌশলগত ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।

আমেরিকার ট্যারিফ যুদ্ধের মধ্যে এই সফরের গুরুত্ব

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সম্প্রতি বাণিজ্যিক উত্তেজনা বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর ৫০% ট্যারিফ আরোপ করেছেন, যা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে। একই সময়ে, চীনের আঞ্চলিক আগ্রাসন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায়, ভারতের জন্য জাপানের সাথে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব অত্যন্ত জরুরি। জাপানের উপরও আমেরিকা ১৫% ট্যারিফ আরোপ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, উভয় দেশ একে অপরের সহযোগিতায় মার্কিন চাপ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে।

ভারত-জাপান সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ভারত ও জাপান ২০০৬ সাল থেকে বিশেষ কৌশলগত ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বে আবদ্ধ। এই অংশীদারিত্ব প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই শীর্ষ সম্মেলনের সময় উভয় দেশ তাদের অংশীদারিত্ব পর্যালোচনা করবে এবং ভবিষ্যতের বিনিয়োগ ও কৌশলগত সহযোগিতার জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করবে। জাপান এই সফরে ভারতে আগামী দশ বছরের জন্য ১০ ট্রিলিয়ন ইয়েন ব্যক্তিগত বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। এটি ২০২২ সালে ঘোষিত পাঁচ ট্রিলিয়ন ইয়েনের পাঁচ বছরের পরিকল্পনার দ্বিগুণ।

'মেক ইন ইন্ডিয়া' এবং 'আত্মনির্ভর ভারত' উদ্যোগ

জাপান ভারতের 'মেক ইন ইন্ডিয়া' এবং 'আত্মনির্ভর ভারত' উদ্যোগগুলির একটি প্রধান সমর্থক। মারুতি সুজুকির মতো কোম্পানিগুলি এখন ইলেকট্রিক যানবাহন রপ্তানি শুরু করছে। গুজরাটে সম্প্রতি চালু হওয়া হাইব্রিড ব্যাটারি প্ল্যান্ট এর একটি উদাহরণ। এছাড়াও, আহমেদাবাদ-মুম্বাই বুলেট ট্রেন প্রকল্পটি ভারতের বৃহত্তম পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম। উভয় দেশ সেমিকন্ডাক্টর, বিরল খনিজ এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির ক্ষেত্রে একটি নতুন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কাঠামোতেও সম্মত হতে পারে, যা ভারতের চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে।

হিন্দু-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের চ্যালেঞ্জ

ভারত ও জাপান কোয়াডের সদস্য, যার উদ্দেশ্য হল হিন্দু-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থা এবং স্থিতিশীলতাকে প্রচার করা। উভয় দেশ নিয়মিতভাবে মালাবার নৌ মহড়ায় অংশ নেয়। চীনের আঞ্চলিক আগ্রাসন, দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক কার্যকলাপ এবং সেমিকন্ডাক্টর ও রেয়ার আর্থের মতো ক্ষেত্রগুলিতে চীনের উপর নির্ভরতা ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। জাপানের ৬৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং AI সহযোগিতা উদ্যোগ এই নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

Leave a comment