প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৩ সেপ্টেম্বর মণিপুর সফরে যাবেন। তিনি চুড়াচাঁদপুরে ৭,৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন এবং ইম্ফলে ১,২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে।
PM Modi Manipur Visit: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর মণিপুর সফর করবেন। এই সফরে তিনি রাজ্যকে ৮,৫০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের উন্নয়ন প্রকল্পের উপহার দেবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী চুড়াচাঁদপুরের পিস গ্রাউন্ডে প্রায় ৭,৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এই এলাকাটি কুকি সম্প্রদায়ের বিপুল জনসংখ্যার একটি অঞ্চল। এছাড়াও, ইম্ফল থেকে তিনি প্রায় ১,২০০ কোটি টাকার পরিকাঠামো প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। ইম্ফল মূলত মেইতেই সম্প্রদায়ের এলাকা।
মণিপুরে জাতিগত সহিংসতার প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালে মণিপুর বিধ্বংসী জাতিগত সহিংসতার সাক্ষী ছিল। কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে ২৬০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষকে তাদের ঘর ছাড়তে হয়েছিল এবং বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চলছে এবং কেন্দ্র সরকার এই দিকে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
মিজোরাম সফর নিয়ে জল্পনা
সম্প্রতি এমন জল্পনা চলছিল যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মিজোরাম সফরের সঙ্গে মণিপুর কর্মসূচীও যোগ করতে পারেন। তবে, সরকার ও বিজেপির পক্ষ থেকে এর আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ করা হয়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরকার চুড়াচাঁদপুরের পিস গ্রাউন্ড এবং ইম্ফলের কাংলা ফোর্টে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কর্মসূচী নিয়ে আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করে। এর অধীনে বড় বড় হোর্ডিং লাগানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি শাসনে মণিপুর
বর্তমানে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে। এটি ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ চালু হয়েছিল, যখন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং পদত্যাগ করেছিলেন। রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হিংসাত্মক ঘটনা লক্ষ্য করে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর রাষ্ট্রপতি শাসনের অধীনে হচ্ছে, যা এটিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নির্দেশিকা
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইম্ফল এবং চুড়াচাঁদপুর জেলায় বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় ২৩৭ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত কাংলা ফোর্ট এবং পিস গ্রাউন্ডে একটি বিশাল মঞ্চ প্রস্তুত করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুল সংখ্যায় মোতায়েন করা হয়েছে।
সরকার কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য কিছু নির্দেশিকাও জারি করেছে। অংশগ্রহণকারীদের চাবি, কলম, জলের বোতল, ব্যাগ, রুমাল, ছাতা, লাইটার, দেশলাই, কাপড়ের টুকরো, ধারালো বস্তু এবং গোলাবারুদ জাতীয় জিনিস আনতে নিষেধ করা হয়েছে। ১২ বছরের কম বয়সী শিশু এবং অসুস্থ ব্যক্তিদেরও কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া
মণিপুরের একমাত্র রাজ্যসভার সাংসদ লেশেম্বা সনানোবা প্রধানমন্ত্রীর সফরকে রাজ্য এবং জনগণের জন্য সৌভাগ্যময় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে এই প্রথমবার কোনও প্রধানমন্ত্রী এত কঠিন সময়ে রাজ্য সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লেশেম্বা জনগণকে আবেদন করেছেন যেন তাঁরা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে স্বাগত জানান এবং কোনও রকম বয়কটের আবেদন না করেন।