প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আউন্টা-সিমরিয়া মহাসেতুর উদ্বোধন: বিহারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত

প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আউন্টা-সিমরিয়া মহাসেতুর উদ্বোধন: বিহারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামীকাল এনএইচ-৩১-এর ওপর নির্মিত আউন্টা-সিমরিয়া সেতু প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এই প্রকল্পটি মোট ৮.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এতে গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত ১.৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেনের সেতুও অন্তর্ভুক্ত, যা ১,৮৭০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে।

পাটনা: বিহারের সংযোগ এবং অর্থনৈতিক বিকাশে নতুন গতি দেওয়া আউন্টা-সিমরিয়া মহাসেতু প্রকল্প এখন প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২২শে আগস্ট এই আধুনিক এবং বিশাল ৬-লেনের সেতুর উদ্বোধন করবেন। এই সেতু মোকামার আউন্ট ঘাট এবং বেগুসরাইয়ের সিমরিয়াকে যুক্ত করে এবং গঙ্গা নদীর উপর প্রায় ১.৮৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। পুরো প্রকল্পের দৈর্ঘ্য সংযোগ পথ সহ ৮.১৫ কিলোমিটার এবং এটি নির্মাণ করতে মোট ১,৮৭১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

এই সেতুটি পুরনো এবং জরাজীর্ণ দুই লেনের রেল-কাম-সড়ক সেতু রাজেন্দ্র সেতুর সমান্তরালে নির্মিত হয়েছে। রাজেন্দ্র সেতুর উদ্বোধন ১৯৫৯ সালে করা হয়েছিল এবং তখন থেকে এটি উত্তর ও দক্ষিণ বিহারের জন্য প্রধান সংযোগকারী পথ ছিল। সময়ের সাথে সাথে এই সেতুর উপর দিয়ে যানবাহনের চাপ বেড়ে গিয়েছিল এবং ভারী যানবাহনগুলির জন্য দীর্ঘ পথ ঘুরতে হত। নতুন মহাসেতু তৈরি হওয়ার ফলে সেই চাপ অনেকটাই কমবে।

উত্তর ও দক্ষিণ বিহারের সংযোগে ঐতিহাসিক পরিবর্তন

নতুন ৬-লেনের মহাসেতু নির্মাণের ফলে উত্তর বিহার (বেগুসরাই, সুপौल, মধুবনী, পূর্ণিয়া, আরারিয়া) এবং দক্ষিণ বিহারের (শেখপুরা, নওয়াদা, লখিসরাই) মধ্যে চলাচলকারী ভারী যানবাহনগুলির যাত্রার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমে যাবে। এর ফলে এই অঞ্চলগুলিতে যানজটের সমস্যাও কম হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সেতু শুধুমাত্র স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে না, বিহারের শিল্প ও বাণিজ্যকেও লাভবান করবে। 

উত্তর বিহারের অনেক জেলা, যারা কাঁচামালের জন্য দক্ষিণ বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের উপর নির্ভরশীল ছিল, তারা এখন এই নতুন সংযোগের মাধ্যমে তাদের কাঁচামালের সরবরাহ দ্রুত করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এই প্রকল্প নিয়ে টুইটারে লিখেছেন: আউন্টা-সিমরিয়া সেতু একটি ঐতিহাসিক প্রকল্প, যা উত্তর ও দক্ষিণ বিহারের মধ্যে সংযোগে বিপ্লবী পরিবর্তন আনবে।

উত্তর-পূর্ব রাজ্য এবং পুরো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প

এই ৬-লেনের মহাসেতু কেবল বিহারের জন্যই নয়, উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিকে যুক্ত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। ভারী যানবাহনের অবাধ চলাচল, দ্রুত সংযোগ এবং পরিবহন খরচ কমার ফলে পুরো অঞ্চলের শিল্প, বাণিজ্য এবং লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক উপকৃত হবে। উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি থেকে বিহার এবং ভারতের অন্যান্য অংশে সংযোগকারী রাস্তাগুলিতে এই সেতু বিশেষ গুরুত্ব রাখে। এর সুবিধা শুধু বেগুসরাই এবং আশেপাশের জেলাগুলিই পাবে না, পুরো বিহার এবং দেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে মজবুত করবে।

পুরনো রাজেন্দ্র সেতুর খারাপ অবস্থা এবং সীমিত ক্ষমতার কারণে ভারী যানবাহনগুলিকে দীর্ঘ পথ ঘুরতে হত। নতুন ৮.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬-লেনের সেতু নির্মাণের ফলে এই সমস্যা শেষ হয়ে যাবে। এই সেতু নির্মাণে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বিহারের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ২০১৫ সালে ঘোষণা করেছিলেন, এবং এই প্যাকেজের অধীনেই এই মহাসেতু নির্মিত হয়েছে। ২০১৭ সালে মোকামায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এর শিলান্যাস করেছিলেন। এখন এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে।

পাটনা থেকে খাগাড়িয়া পর্যন্ত ৪-লেন সড়ক প্রকল্প

আউন্টা-সিমরিয়া মহাসেতুর উদ্বোধনের সাথে সাথেই বখতিয়ারপুর থেকে মোকামা পর্যন্ত ৪-লেন সড়কেরও উদ্বোধন ২২শে আগস্ট হবে। এই সড়ক ৪৪.৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এটি নির্মাণ করতে ১,৮৯৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়াও, পাটনা থেকে বখতিয়ারপুর পর্যন্ত ৪-লেন সড়ক আগেই তৈরি হয়ে গেছে, অন্যদিকে সিমরিয়া থেকে খাগাড়িয়া পর্যন্ত সড়কের চওড়া করার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। 

further খাগাড়িয়া থেকে পূর্ণিয়া পর্যন্ত ৪-লেন সড়ক প্রকল্পের কাজও চলছে। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে বিহারের সড়ক ও পরিবহন সংযোগে ঐতিহাসিক উন্নতি হবে।

Leave a comment