CJI বি.আর. গাভাইয়ের দিকে জুতো ছুঁড়তে চেষ্টা করা আইনজীবী রাকেশ কিশোরের চাঞ্চল্যকর বক্তব্য সামনে এসেছে। তিনি বলেছেন যে তাঁর কৃতকর্মের জন্য তাঁর কোনো অনুশোচনা নেই এবং তিনি জেলে যেতেও সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
নতুন দিল্লি: সোমবার (৬ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় যখন ৭১ বছর বয়সী আইনজীবী রাকেশ কিশোর ভারতের প্রধান বিচারপতি (CJI) বি.আর. গাভাইয়ের দিকে জুতো ছুঁড়তে চেষ্টা করেন। ঘটনাটি সকাল প্রায় ১১:৩৫ মিনিটে ঘটেছিল যখন আদালতে খাজুরাহোর একটি মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর ভাঙা মূর্তি পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত একটি পিটিশনের শুনানি চলছিল। জুতোটি CJI পর্যন্ত পৌঁছায়নি এবং নিরাপত্তা কর্মীরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে আইনজীবীকে হেফাজতে নেন। এই ঘটনা পুরো আইন জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
“ঐশ্বরিক শক্তি এমনটা করতে বলেছিল”
আইনজীবী রাকেশ কিশোর এই ঘটনার পর যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। তিনি বলেছেন যে তাঁর এই বিষয়ে কোনো অনুশোচনা নেই এবং তিনি একটি “ঐশ্বরিক শক্তি”র নির্দেশে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর ভেতর থেকে ইঙ্গিত পেয়েছিলেন যে তাঁর এই কাজটি করা উচিত। তাঁর মতে, “একটি ঐশ্বরিক শক্তি আমাকে এমনটা করতে বলেছিল। ভালো হতো যদি আমি জেলে যেতাম। আমার পরিবার আমার এই পদক্ষেপে খুশি নয় এবং তারা এটি বুঝতে পারছে না।” তাঁর এই বক্তব্যের পর অনেক প্রশ্ন উঠেছে যে ধর্মীয় বা ঐশ্বরিক প্রেরণার নামে আদালতের মর্যাদা (dignity) নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যায় কিনা।
খাজুরাহো মন্দির সংক্রান্ত শুনানি ছিল
ঘটনার সময় CJI বি.আর. গাভাই এমন একটি পিটিশনের শুনানি করছিলেন যা মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহোতে অবস্থিত ভগবান বিষ্ণুর মন্দিরের সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত (damaged) হয়েছিল, যার পুনরুদ্ধার (restoration) নিয়ে পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। এই সংবেদনশীল ধর্মীয় ইস্যুতে শুনানির সময় জুতো ছুঁড়তে চেষ্টা করা আদালতের মর্যাদা (decorum) ক্ষুণ্ণ করেছে। আদালতের ভেতরে উপস্থিত আইনজীবী ও কর্মীরা এই কাজের নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন যে এটি আদালতের মর্যাদার পরিপন্থী।
বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (BCI) কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে
ঘটনার পরপরই বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (BCI) আইনজীবী রাকেশ কিশোরের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। BCI-এর সভাপতি এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনন কুমার মিশ্র একটি অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করে রাকেশ কিশোরের ওকালতি করার অনুমতি অবিলম্বে কার্যকরভাবে স্থগিত (suspended) করে দিয়েছেন। আদেশে বলা হয়েছে যে তাঁর এই আচরণ কেবল আদালতের মর্যাদার পরিপন্থী নয়, এটি Advocates Act, 1961 এবং বার কাউন্সিলের আচরণবিধি (code of conduct)-এরও লঙ্ঘন। BCI স্পষ্ট করেছে যে এই ধরনের আচরণ পুরো আইনজীবী সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি (image) ক্ষুণ্ণ করে এবং বিচার বিভাগের (judiciary) খ্যাতি নষ্ট করে।
এখন কোনো আদালতেই হাজিরা দিতে পারবেন না রাকেশ কিশোর
বার কাউন্সিল জানিয়েছে যে স্থগিতাদেশের (suspension) সময়কালে রাকেশ কিশোর কোনো আদালত, কর্তৃপক্ষ (authority) বা ট্রাইব্যুনাল (tribunal)-এর সামনে হাজির হতে পারবেন না। একই সাথে তাঁর বিরুদ্ধে একটি শাস্তিমূলক (disciplinary) তদন্তও শুরু করা হবে। BCI আরও বলেছে যে একজন আইনজীবীর কর্তব্য (duty) হলো আইনকে সম্মান করা এবং আদালতের মর্যাদা বজায় রাখা। এই ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় এবং বিচার ব্যবস্থায় (justice system) শৃঙ্খলা সর্বাগ্রে।
পরিবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে
রাকেশ কিশোরের পরিবার মিডিয়ার সাথে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছে যে তারা এই ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত। পরিবারের মতে, রাকেশ কিশোরের এই আচরণ অপ্রত্যাশিত ছিল এবং তিনি এর আগে কখনো এমন কিছু করেননি। পরিবার বলেছে যে তারা তাঁর এই পদক্ষেপ বুঝতে পারছে না এবং এটি তাদের জন্য লজ্জাজনক (embarrassment) একটি বিষয়। তবে, রাকেশ কিশোরের বক্তব্য হলো যে তাঁর কোনো অনুশোচনা নেই এবং তিনি জেলে যেতেও প্রস্তুত।
কে এই রাকেশ কিশোর
রাকেশ কিশোর গত কয়েক দশক ধরে দিল্লিতে ওকালতি করছেন এবং সুপ্রিম কোর্টে অনেক মামলায় হাজির হয়েছেন। আইনি জগতে তাঁকে একজন অভিজ্ঞ (experienced) আইনজীবী হিসাবে পরিচিতি ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের আচরণ এই প্রথম সামনে এসেছে। অনেক সিনিয়র আইনজীবী তাঁর এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন যে এটি কেবল আদালতের অবমাননা নয়, বরং পুরো আইনজীবী সম্প্রদায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা (credibility) ক্ষুণ্ণ করে।