প্রতিরক্ষা খাতে স্থিতাবস্থা: কেন মিউচুয়াল ফান্ডগুলি শেয়ার বিক্রি করছে?

প্রতিরক্ষা খাতে স্থিতাবস্থা: কেন মিউচুয়াল ফান্ডগুলি শেয়ার বিক্রি করছে?

কয়েক মাস ধরে প্রতিরক্ষা খাতে দুর্দান্ত গতি দেখা গিয়েছিল, কিন্তু এখন এতে স্থবিরতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। জুন মাসে, মিউচুয়াল ফান্ডগুলি মোট ১,৭১৩ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যায়ন অনেক উঁচুতে পৌঁছেছে এবং এই কারণে ফান্ড হাউসগুলি এখন মুনাফা তোলার পথে হাঁটছে।

সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে সোলার ইন্ডাস্ট্রিজ ইন্ডিয়াতে, যেখানে মিউচুয়াল ফান্ডগুলি ৯৫২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এরপরে, জেন টেকনোলজিস থেকে ১৯২ কোটি এবং ভারত ফোর্জ থেকে ১৬৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও জিআরএসই, কোচিন শিপইয়ার্ড এবং মাজাগন ডক-এর মতো সংস্থাতেও বড় ধরনের শেয়ার বিক্রি দেখা গেছে।

অপারেশন সিঁদুরের পর উত্থান, এখন মোমেন্টাম কমেছে

গত কয়েক মাসে অপারেশন সিঁদুর এবং ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলি শেয়ার বাজারে প্রতিরক্ষা স্টকগুলিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। একই সঙ্গে, ন্যাটো দেশগুলির ২০৩৫ সাল পর্যন্ত প্রতিরক্ষা বাজেট লক্ষ্য এই খাতে একটি তেজি ভাব তৈরি করেছিল। কিন্তু এখন যখন মূল্যায়ন শীর্ষে পৌঁছেছে, তখন বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তাদের অবস্থান কমাতে শুরু করেছে।

নিফটি ইন্ডিয়া ডিফেন্স সূচকে এক মাসে ৪ শতাংশ পতন হয়েছে। জিআরএসই, অ্যাস্ট্রা মাইক্রোওয়েভ এবং কোচিন শিপইয়ার্ড-এ দুই অঙ্কের পতন রেকর্ড করা হয়েছে। সোলার ইন্ডাস্ট্রিজ ৯ শতাংশ এবং এইচএএল ৩ শতাংশ কমেছে।

ব্রোকারেজ হাউসগুলির মনোভাবও সতর্ক

মতিলাল ওসওয়াল ভারত ডায়নামিক্সকে 'নিরপেক্ষ' রেটিং দিয়েছে এবং এর লক্ষ্যমাত্রা ১৯০০ টাকা রেখেছে, যা বাজার মূল্যের চেয়ে কম। ব্রোকারেজ হাউসের মতে, কোম্পানির অনেক অর্ডার রয়েছে, তবে বর্তমান শেয়ারের মূল্য ইতিমধ্যেই বেশ বেশি।

কোতাক এএমসি-র সিআইও, হর্ষা উপাধ্যায়ও আপাতত কোনো নতুন অবস্থান নেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। তার মতে, বর্তমান মূল্যায়নে প্রতিরক্ষা স্টকগুলিতে ঝুঁকি বেড়েছে।

দীর্ঘ মেয়াদে সেক্টরের পরিস্থিতি এখনও শক্তিশালী

যদিও স্বল্প মেয়াদে চাপ থাকতে পারে, তবে দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিরক্ষা খাতের সম্ভাবনা এখনও রয়েছে। ন্যাটোর ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্য এবং ভারতে প্রতিরক্ষা অধিগ্রহণ কাউন্সিলের ১ ট্রিলিয়ন টাকার চুক্তির অনুমোদন আগামী বছরগুলিতে এই খাতে নতুন শক্তি যোগাতে পারে।

নুয়ামা গ্রুপ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে যে প্রতিরক্ষা ইলেকট্রনিক্সে আগামী পাঁচ বছরে ৭ থেকে ৮ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব। তারা তাদের শীর্ষ পছন্দের তালিকায় বিইএল এবং ডাটা প্যাটার্নসকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

অর্থবর্ষ ২৬-এ অর্ডার ইন-ফ্লো শক্তিশালী থাকবে

আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে যে অর্থবর্ষ ২০২৫-২৬-এ প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলির জন্য অর্ডার ইন-ফ্লো ভালো থাকবে। সোলার ইন্ডাস্ট্রিজ, আজাদ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অ্যাস্ট্রা মাইক্রোওয়েভ-এর মতো কোম্পানিগুলির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি দেওয়া হয়েছে। ডিএসপিএসইউ বিভাগে এইচএএল, বিইএল এবং মিধানিকে পছন্দের স্টক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা খাতের চ্যালেঞ্জগুলিও বজায় আছে

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিরক্ষা খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে অর্ডার পূরণ করা। বিশেষ করে সরকারি কোম্পানিগুলির জন্য সময়মতো সরবরাহ করা কঠিন। এছাড়াও, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গুণগত মান উন্নত করাও এই খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এই সময়ে, বিশ্বব্যাপী চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাও এই খাতের গতিপথ নির্ধারণ করবে। যুদ্ধ, সীমান্ত বিবাদ এবং প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের ঘটনাগুলি প্রতিরক্ষা স্টকগুলির গতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

Leave a comment