রক্ষা মন্ত্রক ভারতীয় সেনার জন্য ৯টি স্বদেশী QRSAM ক্ষেপণাস্ত্র রেজিমেন্ট অনুমোদন করেছে। এটি ₹৩৬,০০০ কোটির চুক্তি, যা অপারেশন সিন্ধুর সাফল্যের পরে হয়েছে। এর ফলে বায়ু প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।
QRSAM ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা: রক্ষা মন্ত্রক ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য স্বদেশী কুইক রিঅ্যাকশন সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল (QRSAM) সিস্টেমের ৯টি নতুন রেজিমেন্ট অনুমোদন করেছে। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্বদেশী প্রতিরক্ষা চুক্তি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে, যার আনুমানিক খরচ প্রায় ৩৬,০০০ কোটি টাকা। এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভারতে তৈরি করা হয়েছে। এটি DRDO দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছে এবং ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড এবং ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড এটি তৈরি করবে।
অপারেশন সিন্ধুর সাফল্যের পর অনুমোদন
এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে, মে ২০২৫-এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপারেশন সিন্ধুর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই অভিযানে QRSAM সিস্টেম চমৎকার পারফর্ম করেছে। শত্রুর ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে খুব কম সময়ে চিহ্নিত করে জবাব দেওয়া হয়েছিল। এটি বিবেচনা করে, এখন এই সিস্টেমটি পাকিস্তান ও চীন সীমান্তে মোতায়েন করা হবে, যাতে ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করা যায়।
QRSAM কী এবং এটি কেন বিশেষ
QRSAM অর্থাৎ কুইক রিঅ্যাকশন সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল একটি স্বল্প-পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি বিশেষভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া এবং যান্ত্রিক ইউনিটগুলির সঙ্গে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অর্থাৎ, এটি সেখানে মোতায়েন করা হবে যেখানে সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক এবং পদাতিক বাহিনী দ্রুত চলাচল করে। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি কম উচ্চতায় আসা শত্রুর ড্রোন, ফাইটার জেট এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করে ভূপাতিত করতে পারে।
QRSAM-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য
- উচ্চ গতিশীলতা: এই সিস্টেমটি ৮x৮ অশোক লেল্যান্ড হাই মোবিলিটি ট্রাকের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা এটিকে দ্রুত স্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম করে। যুদ্ধের সময় এটি খুব দ্রুত যে কোনও দিকে মোতায়েন করা যেতে পারে।
- সার্চ অন মুভ: QRSAM চলতে-চলতেও শত্রুর লক্ষ্য সনাক্ত করতে সক্ষম। এটি কোনও স্থায়ী অবস্থানের উপর নির্ভরশীল নয়।
- ফায়ার অন শর্ট হল্ট: এটি যে কোনও স্থানে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে থেমে শত্রুর উপর আক্রমণ করতে পারে। এর মোতায়েনে বেশি সময় লাগে না।
- ৩৬০ ডিগ্রি কভারেজ: এই সিস্টেমে দুটি উন্নত AESA রাডার রয়েছে - ব্যাটারি সার্ভিলেন্স রাডার (BSR) এবং ব্যাটারি মাল্টিফাংশন রাডার (BMFR)। এই দুটি একসঙ্গে ১২০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যে কোনও দিক থেকে আসা বিপদ শনাক্ত করতে পারে।
- মাল্টি টার্গেট এনগেজমেন্ট: QRSAM একই সঙ্গে ৬টি লক্ষ্যকে ট্র্যাক এবং নিশানা করতে পারে। এটি আধুনিক যুদ্ধে খুব কাজের একটি বৈশিষ্ট্য, যেখানে শত্রু একই সঙ্গে একাধিক ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাতে পারে।
- অল-ওয়েদার অপারেশন: এই সিস্টেমটি সব আবহাওয়া এবং সব সময়ে কাজ করতে সক্ষম। দিন হোক বা রাত, এটি তার কর্মক্ষমতায় কোনও পার্থক্য আসতে দেয় না।
- পাল্লা এবং উচ্চতা: QRSAM-এর আঘাতের ক্ষমতা ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার এবং উচ্চতা ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটি নিকটবর্তী বিমান হামলার জন্য সেরা বিকল্প।
- ক্যানিস্টার-ভিত্তিক সিস্টেম: এর ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বিশেষ পাত্রে রাখা হয়, যা তাদের আয়ু বাড়ায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে উৎক্ষেপণ করা যায়।
- সম্পূর্ণ স্বদেশী: এই সিস্টেমটি ভারতে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে, যা आत्मनिर्भर ভারতের লক্ষ্যের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।
কোথায় কোথায় মোতায়েন করা হবে
সরকারের পরিকল্পনা হল এই সিস্টেমটিকে ভারতের সীমান্তে সেই এলাকাগুলিতে মোতায়েন করা, যেখানে নিরাপত্তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
- পশ্চিম সীমান্ত (পাকিস্তান সীমান্ত): পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং জম্মু সেক্টরের মতো এলাকা, যেখানে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া ইউনিট বেশি চলাচল করে।
- উত্তর সীমান্ত (চীন সীমান্ত): লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশের মতো উচ্চ altitude-এর এলাকা, যেখানে চীন তাদের ড্রোন এবং স্টিলথ ফাইটার্স মোতায়েন করতে পারে।
বিমানঘাঁটি ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্পদ: বিমানবাহিনীর ঘাঁটিগুলির সুরক্ষার জন্য QRSAM-এর মোতায়েন সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো হামলাগুলি আটকাতে পারবে।
QRSAM-এর কৌশলগত উপযোগিতা
ভারতের কাছে আগে থেকেই S-400 এবং MRSAM-এর মতো দীর্ঘ-পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু QRSAM-এর মতো স্বল্প-পাল্লার সিস্টেমের ভূমিকা হল শেষ সুরক্ষা স্তর হিসেবে কাজ করা। এটি মাল্টি-লেয়ার বিমান প্রতিরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যুদ্ধের পরিস্থিতিতে যখন শত্রু খুব কাছ থেকে আক্রমণ করে, তখন QRSAM-এর মতো সিস্টেমই শেষ রক্ষাকবচ হয়ে ওঠে।
অপারেশন সিন্ধুতে QRSAM-এর পারফরম্যান্স কেমন ছিল
মে ২০২৫-এ হওয়া অপারেশন সিন্ধুর সময় পাকিস্তান কম উচ্চতায় উড়ন্ত ড্রোন, লোইটারিং অ্যামিউনিশন এবং ছোট ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল। এই অস্ত্রগুলির উদ্দেশ্য ছিল রাডার ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা। কিন্তু QRSAM এই সমস্ত স্বল্প-উচ্চতার হুমকিকে দ্রুত সনাক্ত করে পাল্টা আক্রমণ করে। এর নির্ভুলতা এবং গতি প্রমাণ করেছে যে এই সিস্টেমটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য কতটা উপযোগী।