রাহুল গান্ধীকে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনা: চীনের জমি দখল নিয়ে মন্তব্য

রাহুল গান্ধীকে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনা: চীনের জমি দখল নিয়ে মন্তব্য

রাহুল গান্ধীকে চীনের জমি দখল সংক্রান্ত মন্তব্যের জন্য ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের। আদালত বলেছে, 'যদি আপনি প্রকৃত ভারতীয় হন, তাহলে এমন কথা বলবেন না।' পাশাপাশি, মানহানির মামলায় নিম্ন আদালতের কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট: কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে চীন নিয়ে তাঁর একটি পুরনো মন্তব্যের জন্য তীব্র ভর্ৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, 'যদি আপনি প্রকৃত ভারতীয় হতেন, তাহলে এমন কথা বলতেন না।' ৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং অঞ্চলে ভারতীয় ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষের পরে রাহুল গান্ধীর কথিত মন্তব্য নিয়ে চলা একটি আবেদনের শুনানির সময় আদালত এই মন্তব্য করে।

মামলাটি কী?

আসলে, রাহুল গান্ধী তাঁর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সময় একটি জনসভায় বলেছিলেন যে, 'চীন ভারতের প্রায় ২০০০ বর্গকিলোমিটার জমি দখল করেছে', যা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং সেনাবাহিনীর মর্যাদার উপর সরাসরি প্রশ্ন ছিল। এই মন্তব্যের জেরেই তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনা

শুনানির সময় আদালত রাহুল গান্ধীর মন্তব্যকে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' এবং 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে অভিহিত করেছে। আদালত বলেছে: 'কীভাবে আপনি স্থির করলেন যে চীন ২০০০ বর্গকিলোমিটার জমি দখল করেছে? আপনার কাছে কি কোনো সরকারি সূত্র বা তথ্য আছে? এই ধরনের মন্তব্য একজন দায়িত্বশীল বিরোধী নেতার মুখে শোভা পায় না।' 'যদি আপনি নিজেকে একজন প্রকৃত ভারতীয় মনে করেন, তাহলে আপনার বোঝা উচিত যে এই ধরনের কথায় দেশের সংহতি এবং সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়।'

শুধু সমালোচনা নয়, সংসদে প্রশ্ন করুন

আদালত আরও বলেছে যে, রাহুল গান্ধীর যদি সরকারের নীতি বা বিদেশনীতি নিয়ে প্রশ্ন থাকে, তবে তা সংসদে তোলা উচিত, জনসভায় নয়। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর মন্তব্যকে সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন ভারতীয় সেনাদের 'মনোবল ভেঙে দেওয়া'র শামিল বলে উল্লেখ করেছে।

বিচারপতি আরও বলেন, 'যখন সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থাকে, তখন এই ধরনের মন্তব্যের প্রভাব শুধু দেশের ভেতরেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও পড়ে। একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতার কাছে আশা করা হয় যে তিনি এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে ভেবেচিন্তে মন্তব্য করবেন।'

স্বস্তিও, তবে সতর্কবার্তার সঙ্গে

তবে, সুপ্রিম কোর্ট রাহুল গান্ধীকে মানহানির মামলায় সাময়িক স্বস্তি দিয়ে নিম্ন আদালতে চলা কার্যক্রমে আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই ধরনের রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরপূর্ণ মন্তব্যের উপর ভবিষ্যতে কঠোরভাবে বিচারবিভাগীয় দৃষ্টি রাখা হবে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া শুরু

এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি একে 'দেশবিরোধী মানসিকতার বিচারবিভাগীয় স্বীকৃতি' বলে অভিহিত করেছে। বিজেপির মুখপাত্র বলেছেন যে 'সুপ্রিম কোর্ট সেটাই বলেছে, যা দেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষ মনে করে — রাহুল গান্ধীর রাজনীতি, সেনাবাহিনী এবং জাতির মর্যাদাকে বার বার আঘাত করে চলেছে।' অন্যদিকে, কংগ্রেস রাহুল গান্ধীর পক্ষ নিয়ে বলেছে যে, সরকারের কাছে প্রশ্ন করা এবং তাকে জবাবদিহি করানো বিরোধীদের কাজ। কংগ্রেসের মুখপাত্র বলেছেন যে 'রাহুল গান্ধী যা বলেছেন, তা বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট এবং স্যাটেলাইট চিত্রের উপর ভিত্তি করে বলা। এর উদ্দেশ্য সেনাবাহিনীর অপমান করা নয়, বরং সীমান্তে সত্য প্রকাশ করা ছিল।'

রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের প্রেক্ষাপট

৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে যখন তাওয়াংয়ে ভারত-চীন সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর আসে, তখন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল যে তারা চীনের সঙ্গে 'স্পষ্টভাবে আলোচনা' করছে না এবং প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাহুল গান্ধী দাবি করেছিলেন যে 'চীন আমাদের জমি দখল করেছে এবং সরকার ভয়ে এ বিষয়ে কিছুই করছে না।'

Leave a comment