Weather Update: কলকাতায় ইতিমধ্যেই টানা বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টির ধারা চতুর্থী অর্থাৎ বৃহস্পতিবারে আরও জোরদার হবে। ওই দিন উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরি হবে, যা ক্রমশ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। এর ফলে উপকূলীয় ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি বজ্রবিদ্যুতের সম্ভাবনা প্রবল।
কেন কলকাতায় রেকর্ড বৃষ্টি?
সপ্তাহের শুরুতেই কলকাতায় প্রবল বৃষ্টি নেমে আসে। শহরের দক্ষিণ থেকে উত্তর—সব এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে, অফিস ফেরত মানুষ থেকে শুরু করে পরীক্ষার্থীরা পর্যন্ত চরম ভোগান্তির শিকার হন।আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর অবশ্য জানাচ্ছে, এই বৃষ্টিকে মেঘভাঙা বলা যাবে না। কারণ মেঘভাঙা বৃষ্টির কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড রয়েছে, যা এবার পূরণ হয়নি। তবে প্রাক্তন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কলকাতায় যে মেঘ জমেছিল তা মাত্র দুই মিলিমিটার কম বৃষ্টি দিয়েছে, তাই এটিকে ক্লাউডবার্স্ট বলা যেতেই পারত।
চতুর্থীতে নতুন নিম্নচাপ তৈরি
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার পুজোর আগে বঙ্গোপসাগর অস্বাভাবিক সক্রিয়। বৃহস্পতিবার চতুর্থীতে ফের একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হবে উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে। সেটি শুক্রবার পঞ্চমীর মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ওডিশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে প্রভাব ফেলবে। ষষ্ঠীতে সেটি স্থলভাগে প্রবেশ করবে।এই নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ও কলকাতায় এর প্রভাব তীব্র হবে বলে হাওয়া অফিস জানিয়েছে।
আজ এবং আগামী দুই দিনের পূর্বাভাস
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের জারি করা সতর্কতা অনুযায়ী—
মঙ্গলবার: পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়ায় অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
বুধবার: দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও দুই মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টিপাত। কলকাতা-সহ শহুরে এলাকাতেও মেঘগর্জন ও বজ্রবিদ্যুতের সম্ভাবনা প্রবল।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার: দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হবে। বিশেষত চতুর্থী থেকে পঞ্চমীতে বৃষ্টির তীব্রতা আরও বাড়বে।
শনিবারের আবহাওয়া চিত্র
ষষ্ঠীর দিন অর্থাৎ শনিবার আবারও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত বাঁকুড়া, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও দুই মেদিনীপুরে প্রবল বৃষ্টি হতে পারে। কলকাতাতেও পুজোর আগে জল জমার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাতে যদিও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই, তবে পার্বত্য জেলাগুলিতে শুক্রবার থেকে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়ার প্রভাব ও সাধারণ মানুষের উদ্বেগ
দুর্গাপুজোর আগে টানা বৃষ্টি শহরবাসীর চিন্তা বাড়াচ্ছে। প্যান্ডেল তৈরির কাজ ব্যাহত হচ্ছে, মণ্ডপে জল ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে। যাতায়াত ও কেনাকাটার সময়ও ভোগান্তি বাড়তে পারে।আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, উপকূলীয় জেলাগুলিতে মৎস্যজীবীদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র উত্তাল হতে পারে, তাই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
আবহাওয়ার এই অস্থির অবস্থায় চিকিৎসকরাও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। টানা বৃষ্টিতে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ও জলবাহিত রোগ ছড়াতে পারে। তাই শহর ও গ্রামে জল জমা এড়াতে হবে। অপরদিকে, পরিবেশবিদরা মনে করছেন, বারবার নিম্নচাপের সৃষ্টি জলবায়ুর পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার অর্থাৎ চতুর্থীর দিনে ফের নতুন নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে বঙ্গোপসাগরে। এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও, কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুজোর আগেই বৃষ্টির দাপট শুরু হয়ে গিয়েছে, যা ষষ্ঠী পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।