রাখিবন্ধন উৎসব ভাই-বোনের সম্পর্কের মাধুর্য ও পবিত্রতার প্রতীক। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমায় এই উৎসব পালিত হয়। এই বছর, ২০২৫ সালের ৯ই আগস্ট রাখিবন্ধন পড়েছে। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রাখি বেঁধে তাদের থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি নেয় এবং তাদের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রাখির ধরনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। বাজারে অনেক ধরনের আকর্ষণীয় এবং ফ্যাশনেবল রাখি পাওয়া যায়, তবে এর মধ্যে কিছু রাখি এমনও আছে যা ঐতিহ্য, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ভাইয়ের জন্য শুভ প্রভাবের পরিপন্থী বলে মনে করা হয়।
এই রাখিগুলো নির্বাচন করার আগে, এটা জানা জরুরি যে রাখিবন্ধনের মতো পবিত্র অনুষ্ঠানে কোন রাখিগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে খেলা করে এমন কিছু রাখি অশুভ হতে পারে
আজকাল অনেক রাখিতে গণেশ, শিব, বিষ্ণু, রাম বা কৃষ্ণের ছবি আঁকা থাকে। কিছু রাখিতে দেব-দেবীর ছবি প্লাস্টিক, ধাতু বা কাগজের উপর লাগিয়ে সাজানো হয়। দেখতে এই রাখিগুলো খুব সুন্দর হলেও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলোকে শুভ মনে করা হয় না।
অনেক সময় ভাইয়েরা দৈনন্দিন জীবনে রাখি বেশিক্ষণ হাতে রাখতে পারে না বা ভুলবশত কোনো ভুল জায়গায় পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে রাখির উপরে থাকা ভগবানের ছবি অপমানিত হতে পারে। হিন্দুধর্মে ভগবানের মূর্তি বা ছবিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও পবিত্রতার সাথে রাখা হয়। তাই রাখিবন্ধনে এই ধরনের রাখি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
ব্রেসলেটের মতো রাখি উপহারের জন্য ঠিক, তবে রক্ষাসূত্র নয়
বাজারে আজকাল ব্রেসলেট স্টাইলের রাখি খুব জনপ্রিয়। এগুলোতে চকচকে পুঁতি, স্টিলের চেন, নকল হীরা এবং রঙিন প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। এই রাখিগুলো দেখতে যতটা স্টাইলিশ, ততটাই ঐতিহ্য থেকে দূরে।
রাখিবন্ধন শুধু একটি সাজসজ্জার সুতো বাঁধার নাম নয়, এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যেখানে বোন তার ভাইয়ের দীর্ঘ জীবন ও সুরক্ষা কামনা করে। এমন পরিস্থিতিতে ব্রেসলেট বা গয়নার মতো রাখি বাঁধা এই ঐতিহ্যের অনুকূল নয় এবং এর কোনো আধ্যাত্মিক তাৎপর্যও নেই।
এভিল আই বা কালো পুঁতির রাখি থেকেও বাঁচুন
কিছু রাখি বিশেষভাবে নজর দোষ থেকে বাঁচানোর জন্য ডিজাইন করা হয়, যেমন নীল রঙের চোখ অর্থাৎ 'এভিল আই' যুক্ত রাখি। অনেকে একে নজর থেকে বাঁচানোর উপায় মনে করে, কিন্তু বাস্তু এবং ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে এই ডিজাইনটি নেতিবাচক শক্তির প্রতীক। এই ধরনের রাখি রক্ষাসূত্র হিসেবে বাঁধা উচিত নয়।
একইভাবে, কালো সুতো বা কালো রঙের রাখিকেও অশুভ রং হিসেবে ধরা হয়। কালো রং সাধারণত শোক, নেতিবাচকতা এবং শক্তির বাধার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই রাখিবন্ধনের মতো শুভ দিনে এই রং থেকে দূরে থাকাই ভালো।
প্লাস্টিক এবং কৃত্রিম উপাদান দিয়ে তৈরি রাখি পরিহার করুন
আজকাল রাখিতে প্লাস্টিক, সিনথেটিক সুতো এবং অন্যান্য কৃত্রিম সজ্জাসামগ্রীর ব্যবহার প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে। এই রাখিগুলো দেখতে সুন্দর হলেও ধর্মীয় ও পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো সঠিক বলে বিবেচিত হয় না। প্লাস্টিকের জিনিস সহজে নষ্ট হয় না, ফলে রাখি বিসর্জন দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।
ঐতিহ্যগতভাবে রাখি বিশুদ্ধ রেশম, সুতির সুতো বা মৌলি দিয়ে তৈরি করা হয়। এই সুতো প্রাকৃতিক এবং এগুলোর সাথে ইতিবাচক শক্তিও জড়িত বলে মনে করা হয়। তাই ঐতিহ্যবাহী এবং বিশুদ্ধ উপাদান দিয়ে তৈরি রাখিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
শুভ রঙের রাখিকে অগ্রাধিকার দিন
রাখির রংও তার শুভত্বের ইঙ্গিত দেয়। হলুদ, লাল, সবুজ এবং জাফরান রং হিন্দু সংস্কৃতিতে শুভ বলে মনে করা হয়। এই রংগুলো সমৃদ্ধি, শক্তি, প্রেম এবং সৌভাগ্যের প্রতীক। তাই রাখি কেনার সময় এই রংগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ রাখা উচিত।
কিছু রাখি সম্পূর্ণরূপে কালো বা বাদামী রঙের হয়। যদিও এগুলো আধুনিক ডিজাইন, তবুও এর কোনো ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক তাৎপর্য নেই। এই কারণে এই রং দিয়ে তৈরি রাখিকে পবিত্র রক্ষাসূত্র হিসেবে দেখা হয় না।
মূল অনুভূতির সাথে জড়িত রাখি
রাখিবন্ধন কেবল একটি রীতি নয়, এটি ভাই-বোনের সম্পর্কের আত্মা। তাই এই উৎসব পালনের সময় বাহ্যিক দেখানোর চেয়ে অনুভূতির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। রাখি কেবল একটি সাজসজ্জার সুতো নয়, এটি একটি বিশ্বাস, প্রেম এবং আশীর্বাদের প্রতীক। এমতাবস্থায়, রাখি নির্বাচন করার সময় বোনেদের এই বিষয়টি খেয়াল রাখা জরুরি যে, তা যেন ঐতিহ্য, শ্রদ্ধা এবং ভাইয়ের মঙ্গলের সাথে জড়িত থাকে।