রণজি ট্রফি ২০২৫-এর গ্রুপ স্টেজে খেলা আসাম বনাম সার্ভিসেস ম্যাচটি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। এই ম্যাচটি মাত্র ৯০ ওভারেই শেষ হয়ে যায়, যা ভারতের বৃহত্তম রেড-বল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ম্যাচ হিসেবে রেকর্ড গড়েছে।
খেলাধুলার খবর: ভারতের মর্যাদাপূর্ণ ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট রণজি ট্রফি ২০২৫-এ এমন একটি রেকর্ড তৈরি হয়েছে যা এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসকে চিরতরে বদলে দিয়েছে। গ্রুপ ‘সি’-তে খেলা আসাম বনাম সার্ভিসেস (Assam vs Services) ম্যাচে ইতিহাস রচিত হয়েছে — এই ম্যাচটি মাত্র ৯০ ওভার (৫৪০ বল)-এ শেষ হয়ে যায়, যা রণজি ট্রফির ৯১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ম্যাচ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
৯০ ওভারেই পুরো ম্যাচ শেষ – টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ম্যাচ
আসাম এবং সার্ভিসেসের মধ্যে এই ম্যাচটি তিনসুকিয়া (আসাম)-এর মাঠে খেলা হয়েছিল। আসাম টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু সার্ভিসেসের বোলাররা ধ্বংসাত্মক বোলিং করে। সম্পূর্ণ আসাম দল মাত্র ১৭.২ ওভারে ১০৩ রানে গুটিয়ে যায়। এই দৃশ্য ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে অবিশ্বাস্য ছিল — এত দ্রুত শেষ হওয়া ইনিংস রণজি ট্রফির স্তরে হয়তো আগে কখনও দেখা যায়নি।
এর আগে রণজি ট্রফির ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ম্যাচটি ১৯৬২ সালে দিল্লি এবং রেলওয়ের মধ্যে খেলা হয়েছিল, যা ৫৪৭ বলে শেষ হয়েছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের এই আসাম বনাম সার্ভিসেস ম্যাচটি তার চেয়েও সংক্ষিপ্ত প্রমাণিত হয়েছে, কারণ এটি মাত্র ৫৪০ বলে শেষ হয়ে যায়।

প্রথমবারের মতো একই ইনিংসে দুটি হ্যাট্রিক
এই ম্যাচের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল যে একই ইনিংসে দুজন বোলার হ্যাট্রিক নিয়েছেন। এই দৃশ্য শুধু রণজি ট্রফিতে নয়, সম্পূর্ণ প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেখা গেল। সার্ভিসেসের পক্ষে অর্জুন শর্মা ১২তম ওভারে পরপর তিন বলে তিনটি উইকেট নিয়ে নিজের হ্যাট্রিক পূর্ণ করেন। এর ঠিক পরেই, মোহিত জ্যাংরা ১৫তম ওভারের শেষ বল এবং তারপর ১৭তম ওভারের প্রথম দুটি বলে পরপর তিনটি উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় হ্যাট্রিকটি পূর্ণ করেন।
আসামের ব্যাটসম্যানরা এই দুই বোলারের সামনে দাঁড়াতে পারেননি এবং সম্পূর্ণ দল ১০৩ রানে গুটিয়ে যায়। প্রথম ইনিংসের এই ফলাফল ম্যাচটিকে প্রথম দিনেই ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দিয়েছিল।
আসামের ফেরার চেষ্টা এবং রিয়ান পরাগের বোলিং
প্রথম ইনিংসে আসামের বোলিং কিছুটা হলেও দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। রিয়ান পরাগ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ৫টি উইকেট নেন, অন্যদিকে রাহুল সিং ৪টি উইকেট নেন। তাদের কল্যাণে সার্ভিসেসের দল মাত্র ১০৮ রানে গুটিয়ে যায়। এই ইনিংসে সার্ভিসেসের ইরফান খান ৫১ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৫ রানের লিড পাওয়ার পরেও সার্ভিসেসের দল আসামের উপর চাপ বজায় রেখেছিল।
দ্বিতীয় ইনিংসেও আসামের ব্যাটসম্যানরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন। দল ৭৫ রানেই অলআউট হয়ে যায়। এবারও অর্জুন শর্মা মারাত্মক বোলিং চালিয়ে যান এবং ৪টি উইকেট নেন। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেবল সুমিত (২৫ রান), রিয়ান পরাগ (১২ রান) এবং ড্যানিশ দাস (১০ রান)ই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেন। এভাবেই সার্ভিসেসের সামনে জয়ের জন্য মাত্র ৭১ রানের লক্ষ্য বাকি থাকে, যা তারা ১৩.৫ ওভারে সহজেই অর্জন করে নেয়। সার্ভিসেস ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় এবং পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে।
অর্জুন শর্মা হলেন নায়ক – প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ
সার্ভিসেসের তারকা বোলার অর্জুন শর্মা তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন। তিনি প্রথম ইনিংসে ৫টি উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪টি উইকেট নেন — অর্থাৎ ম্যাচে মোট ৯টি উইকেট। তার অসাধারণ বোলিং এই ম্যাচটিকে রণজি ট্রফি ইতিহাসের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ম্যাচ বানিয়ে দিয়েছে।












