ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অর্থাৎ আরবিআই এপ্রিল থেকে জুন ২০২৫-এর মধ্যে প্রায় ১৭ টন সোনা কিনেছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এই কেনাকাটার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এই কেনাকাটা যথেষ্ট বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছরের থেকে দ্বিগুণ কেনাকাটা
যদি গত বছরের কথা বলা হয়, তা হলে ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন ত্রৈমাসিকে আরবিআই প্রায় অর্ধেক পরিমাণে সোনা কিনেছিল। এইবারের কেনাকাটা শুধু বেশি নয়, এটি এই ইঙ্গিতও দেয় যে আরবিআই এখন গোল্ড রিজার্ভ নিয়ে আরও বেশি সক্রিয় হয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই মোট ৩৭ টন সোনা কেনা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ।
জুলাই ২০২৫-এ সোনার বাজার দর
এই সম্পূর্ণ হিসাবের জন্য জুলাই ২০২৫-এর সোনার গড় বাজার দরকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। সেই সময় ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছিল প্রায় ৭৩ হাজার টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। এই হিসাবে ১ কেজি সোনার দাম প্রায় ৭৩ লক্ষ টাকা হয়। এমন পরিস্থিতিতে যখন ১৭ হাজার কেজি অর্থাৎ ১৭ টন সোনা কেনা হয়েছে, তখন তার মোট মূল্য প্রায় ১২ হাজার ৪১০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
সারা বিশ্বের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলি সোনা জমা করছে
আরবিআই-এর এই উদ্যোগ শুধু ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সারা বিশ্বের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলি এই মুহূর্তে সোনা কেনার উপর জোর দিচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী এপ্রিল থেকে জুন ত্রৈমাসিকে বিশ্বজুড়ে মোট ১৫৭ টন সোনা কেনা হয়েছে। এটি প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। এই তালিকায় তুরস্ক সবার উপরে, যারা ৩৮ টন সোনা কিনেছে। ভারতের স্থান দ্বিতীয় এবং তার পরে পোল্যান্ড, চীন, কাতার ও চেক প্রজাতন্ত্রের মতো দেশগুলিও ভালো পরিমাণে সোনা কিনেছে।
কেন বাড়ছে সোনার চাহিদা
একটি বড় কারণ হল বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্য প্রাচ্যের উত্তেজনা, আমেরিকা-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ডলারের পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয়গুলি সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। এমন পরিস্থিতিতে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলি তাদের বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারে স্থিতিশীলতা আনতে সোনার উপর ভরসা করছে। সোনা দীর্ঘকাল ধরে একটি সুরক্ষিত বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এবং এখন এটিকে কৌশলগত সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের হারও কারণ
মুদ্রাস্ফীতি অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধির হারে ক্রমাগত ওঠানামা এবং বিশ্বব্যাপী সুদের হারে অনিশ্চয়তাও একটি বড় কারণ। যখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়, তখন সোনা একটি সুরক্ষিত আশ্রয়স্থলের মতো কাজ করে। এই কারণে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলিও এখন এটিকে তাদের ভাণ্ডারের একটি শক্তিশালী অংশ করে তুলছে।
ভারতের কৌশলে বড় পরিবর্তন
ভারতের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অর্থাৎ আরবিআই এখন শুধু বিদেশি মুদ্রায় নয়, অন্যান্য সম্পত্তিতেও বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর ফলে বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারে বৈচিত্র্য আসে এবং ঝুঁকি কম হয়। সোনা, যার মূল্য সময়ের সঙ্গে স্থিতিশীল থাকে, এই উদ্দেশ্যে সবচেয়ে উপযুক্ত বিকল্প হয়ে উঠেছে।
ভারতের বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারে বৃদ্ধি
আরবিআই-এর এই সোনা কেনার ফলে ভারতের বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারে বৃদ্ধি হয়েছে। এখন ভারতের কাছে শুধু ডলার এবং অন্যান্য মুদ্রাই নয়, একটি কঠিন সোনার ভাণ্ডারও রয়েছে যা সংকটের সময় কাজে লাগতে পারে।
ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য ইঙ্গিত
আরবিআই-এর মতো সংস্থাগুলি যখন এই ভাবে বড় அளவில் সোনা কিনছে, তখন এটি একটি ইঙ্গিতও যে সোনার দাম এবং চাহিদা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। এটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সোনার প্রতি বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে। যদিও এই পদক্ষেপ সরাসরি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য নয়, তবুও এটা বোঝা জরুরি যে সোনা এখন শুধু গয়নার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বে একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে
ভারত ছাড়াও পোল্যান্ড, চীন, তুরস্কের মতো দেশগুলিও এই মুহূর্তে সোনাকে মজুত করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এতে স্পষ্ট হয় যে বিশ্বব্যাপী একটি নতুন অর্থনৈতিক কৌশল তৈরি হচ্ছে যেখানে সোনা আবারও কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের রিপোর্ট ভিত্তি
এই খবরের তথ্য ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের ‘গোল্ড ডিমান্ড ট্রেন্ডস রিপোর্ট - Q2 2025’ থেকে পাওয়া গিয়েছে। এই রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে গ্লোবাল সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলি কীভাবে তাদের গোল্ড রিজার্ভ বাড়াচ্ছে এবং কোন দেশ কতটা কিনেছে।
সোনার ঔজ্জ্বল্য রয়েছে অটুট
বাজারের অনিশ্চয়তা, ডলারের দুর্বল অবস্থা, সুদের হারে অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে সোনা আবারও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সম্পদে পরিণত হয়েছে। আরবিআই-এর সাম্প্রতিক কেনাকাটা এই ইঙ্গিত দেয় যে আগামী দিনেও এই প্রবণতা বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।