তেলেঙ্গানা উপনির্বাচন: রেবন্ত রেড্ডির 'মুসলিম মানেই কংগ্রেস' মন্তব্যে তুঙ্গে বিতর্ক

তেলেঙ্গানা উপনির্বাচন: রেবন্ত রেড্ডির 'মুসলিম মানেই কংগ্রেস' মন্তব্যে তুঙ্গে বিতর্ক

জুবিলি হিলস উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডির মন্তব্যে রাজনৈতিক আলোড়ন বেড়েছে। AIMIM কংগ্রেসকে সমর্থন করেছে, যেখানে বিজেপি এটিকে তুষ্টিকরণের রাজনীতি আখ্যা দিয়েছে। এই নির্বাচনে মুসলিম ভোটিং প্যাটার্ন একটি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে।

Jubilee Hills By Election: এই মুহূর্তে তেলেঙ্গানার রাজনীতি জুবিলি হিলস বিধানসভা উপনির্বাচনকে ঘিরে অত্যন্ত উত্তপ্ত। এই উপনির্বাচন চলাকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডির দেওয়া মন্তব্য শুধুমাত্র রাজ্য স্তরেই নয়, জাতীয় স্তরেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রচার চলাকালীন তিনি এমন একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন যা নির্বাচনী পরিবেশকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে। রেবন্ত রেড্ডি বলেছেন যে কংগ্রেস মানেই মুসলিম এবং মুসলিম মানেই কংগ্রেস। 

জুবিলি হিলস আসনের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বিআরএস বিধায়ক মাগান্তি গোপীনাথের মৃত্যুর পর জুবিলি হিলস বিধানসভা আসনটি শূন্য হয়। এখন এই আসনে ৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মূল লড়াইটি তিন প্রার্থীর মধ্যে বলে মনে করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছেন বিআরএস-এর মাগান্তি সুনীতা, কংগ্রেসের নবীন যাদব এবং বিজেপির লানকালা দীপক রেড্ডি। এই আসনের একটি বিশেষ দিক হলো এখানে মুসলিম ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১.৪ লক্ষ। অর্থাৎ, নির্বাচনের ফলাফল অনেকাংশে এই বিষয়ের উপর নির্ভর করবে যে মুসলিম ভোট কোন দলের পক্ষে একত্রিত হয়। AIMIM ইতিমধ্যেই কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন জানানোর ঘোষণা করেছে। 

বিতর্কিত মন্তব্যটি কেন করা হয়েছিল

মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডির মন্তব্যের পেছনে একটি সুস্পষ্ট নির্বাচনী কৌশল দেখা যাচ্ছে। কংগ্রেস আশঙ্কা করছে যে মুসলিম ভোট বিআরএস, AIMIM এবং অন্যান্য নির্দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। যদি এমনটা হয়, তাহলে বিজেপি অপ্রত্যাশিত সুবিধা পেতে পারে। তাই মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে এই বার্তা দিয়েছেন যে কংগ্রেসই সেই দল যা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যে মুসলিম ভোটাররা সম্পূর্ণরূপে দৃঢ়তার সাথে কংগ্রেস প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিক এবং তাদের ভোট ব্যাংক যেন বিভক্ত না হয়।

AIMIM-এর সমর্থনের বড় প্রভাব

আসাদউদ্দিন ওয়েসির দল AIMIM-এর কংগ্রেসকে সমর্থন এই উপনির্বাচনে একটি নির্ণায়ক মোড় বলে বিবেচিত হচ্ছে। AIMIM-এর সমর্থনের সরাসরি ইঙ্গিত ছিল যে মুসলিম ভোট কংগ্রেসের দিকে যেতে পারে। এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি নির্বাচনী মঞ্চ থেকে তাঁর বার্তা জোরালোভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি এটি দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে কংগ্রেসই সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং তাদের রাজনৈতিক অবস্থানের রক্ষা করে।

বিজেপির অভিযোগ

বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে মুসলিম তুষ্টিকরণের রাজনীতি বলে অভিহিত করেছে। বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছেন যে কংগ্রেস নির্বাচন জেতার জন্য ধর্মের ব্যবহার করছে। তাদের বক্তব্য যে, কংগ্রেসের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মুসলিম ভোটগুলিকে একযোগে তাদের দিকে নিয়ে আসা। বিজেপি এটিকে হিন্দু ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানার সুযোগ হিসাবে দেখছে। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি বিজেপির উপর পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন যে বিজেপি সবসময় সম্প্রদায়গুলির মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি করে।

কংগ্রেসের ভেতর থেকে সমালোচনা

আকর্ষণীয় বিষয় হলো, এই মন্তব্যের সমালোচনা কেবল বিরোধীরাই করেনি, বরং কংগ্রেসের প্রবীণ মুসলিম নেতা আবিদ রসুল খানও এটিকে ভুল বলে আখ্যায়িত করেছেন। খান বলেছেন যে, এটা বলা যে মুসলিমদের ছাড়া কংগ্রেস কিছু নয়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ছোট দেখানোর মতোই। তিনি বলেছেন যে মুখ্যমন্ত্রীকে এমন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে যা সমাজে ভুল বার্তা দেয়। তিনি এই মন্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও করেছেন। তবে, মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি পরে স্পষ্টীকরণ দিয়েছেন যে তাঁর মন্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে এবং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র সমর্থন চাওয়া।

জুবিলি হিলস উপনির্বাচন মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি এবং কংগ্রেসের জন্য শুধু একটি আসনের প্রশ্ন নয়। এই আসনটি সরকারের জনপ্রিয়তা, পরিচিতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গেও জড়িত। যদি কংগ্রেস এই আসনটি হারে, তাহলে এটি মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্ব ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে এবং বিরোধীরা একটি বড় ইস্যু পেয়ে যাবে। এই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি নিশ্চিত করতে চান যে কংগ্রেসের পক্ষে পুরো ভোট ব্যাংক দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকুক।

Leave a comment