সারা দেশে রাস্তা এবং হাইওয়েতে বেড়ে চলা বিপথগামী পশুর বিপদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার রাজ্যগুলি, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (NHAI) এবং সমস্ত পৌরসভাকে কঠোর নির্দেশ জারি করেছে।
নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট বিপথগামী কুকুর সংক্রান্ত মামলার শুনানির সময় সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করেছে। আদালত বলেছে যে সমস্ত বিপথগামী পশুকে রাস্তা, রাজ্য সড়ক এবং জাতীয় সড়ক থেকে সরানো হোক, যাতে সাধারণ নাগরিক এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
এই প্রসঙ্গে, সর্বোচ্চ আদালত কেবল রাজ্য সরকারগুলিকেই নয়, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (NHAI) এবং পৌরসভাগুলিকেও স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। আদালত বলেছে যে এই সংস্থাগুলির দায়িত্ব হলো রাস্তায় পশুর চলাচল রোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
সুপ্রিম কোর্ট বলল - 'রাস্তা মানুষের জন্য, পশুর জন্য নয়'
শুনানির সময় সর্বোচ্চ আদালত বলেছে যে দেশের অনেক অংশে বিপথগামী গবাদি পশু, গরু এবং কুকুরের কারণে ক্রমাগত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, যার ফলে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি বাড়ছে। প্রধান বিচারপতি ডি. ওয়াই. চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, রাস্তা এবং হাইওয়েগুলি জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য, পশুর থাকার বা ঘুরে বেড়ানোর জায়গার জন্য নয়। এই ধরনের পরিস্থিতি রোধ করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া রাজ্যগুলির দায়িত্ব।
সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ‘হাইওয়ে সার্ভিল্যান্স টিম’ (Highway Surveillance Teams) গঠন করা হোক, যারা বিপথগামী পশুকে ধরে রাস্তা থেকে সরাবে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে (Animal Shelters) নিরাপদে রাখবে। এই দলগুলিতে পুলিশ, নগর নিগম এবং পশুপালন বিভাগের আধিকারিকরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। আদালত আরও বলেছে যে এই ধরনের ব্যবস্থা প্রতিটি জেলায় প্রয়োগ করা হোক এবং সেগুলির উপর নিয়মিত নজর রাখা হোক।
আদালত বলেছে, রাজ্যগুলি কেবল নির্দেশ জারি করে তাদের কর্তব্য শেষ করতে পারে না। তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিটি হাইওয়ে এবং রাস্তা থেকে প্রকৃতপক্ষে পশুদের সরানো হবে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
NHAI এবং পৌরসভাগুলিকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে

সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (NHAI)-কেও নির্দেশ দিয়েছে যে তারা রাজ্য প্রশাসনের সাথে মিলে রাস্তার ধারে পশুর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং যেখানে প্রয়োজন, সেখানে প্রতিরক্ষামূলক বেড়া ও সতর্কীকরণ বোর্ড (Warning Boards) স্থাপন করবে। একইভাবে, পৌরসভাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা শহর ও নগরীর রাস্তা থেকে পশুদের সরাতে বিশেষ অভিযান চালাবে এবং তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করবে।
আদালত তার আদেশে বিপথগামী কুকুরের ক্রমবর্ধমান বিপদ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাসস্ট্যান্ড এবং রেলস্টেশন থেকে বিপথগামী কুকুরদের সরানো হোক এবং তাদের নিরাপদ পশু আশ্রয়কেন্দ্রে (Animal Shelters) রাখা হোক। আদালত স্পষ্ট করেছে যে টিকাকরণ (Vaccination) করার পরেও এই কুকুরগুলিকে একই এলাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে না, কারণ এতে জননিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যবিধির উপর প্রভাব পড়তে পারে।
রাজ্য সরকারগুলিকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে
সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে যে তারা চার সপ্তাহের মধ্যে একটি বিস্তারিত পরিস্থিতি প্রতিবেদন (Status Report) আদালতে দাখিল করবে, যেখানে জানানো হবে যে —
- কতগুলি বিপথগামী পশুকে রাস্তা এবং হাইওয়ে থেকে সরানো হয়েছে,
- কতগুলি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি বা সক্রিয় করা হয়েছে,
- এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা কোন স্তর পর্যন্ত কার্যকর করা হয়েছে।
এছাড়াও, আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে পরবর্তী শুনানিতে এই রিপোর্টের পর্যালোচনা করা হবে, এবং অবহেলা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। আদালত এই মামলার পরবর্তী শুনানি 13 জানুয়ারি করবে।













