রিল্যায়েন্স জামনগরে ধীরুভাই আম্বানি গীগা এনার্জি কমপ্লেক্স তৈরি করছে, যা আকার এবং পরিসরে বিশ্বের বৃহত্তম এবং সমন্বিত নতুন শক্তি প্রকল্প হবে। এটি ১০০টি আইফেল টাওয়ারের সমান ইস্পাত এবং টেসলা কারখানার চেয়ে ৪ গুণ বড় হবে। এখানে সবুজ অ্যামোনিয়া, ই-মিথানল এবং টেকসই বিমান জ্বালানির মতো সবুজ রাসায়নিক তৈরি হবে।
ধীরুভাই আম্বানি গ্রিন এনার্জি গীগা কমপ্লেক্স: রিল্যায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ জামনগরে ধীরুভাই আম্বানি গীগা এনার্জি কমপ্লেক্সের নির্মাণ দ্রুত গতিতে শুরু করেছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম এবং সমন্বিত নতুন শক্তি ইকোসিস্টেম হিসাবে পরিচিত। এই প্রকল্পের আকার এত বিশাল যে এতে ১০০টি আইফেল টাওয়ারের সমান ইস্পাত এবং টেসলার গীগা কারখানার চেয়ে ৪ গুণ বড় ভবন এলাকা ব্যবহৃত হবে। প্রায় ৫০,০০০-এর বেশি শ্রমিক এর নির্মাণে নিযুক্ত আছেন। এখানে নির্মিত স্মার্ট গীগা কারখানাগুলি ২৪ ঘন্টা নবায়নযোগ্য শক্তি সরবরাহ করবে এবং সবুজ অ্যামোনিয়া, ই-মিথানল ও টেকসই বিমান জ্বালানির মতো সবুজ প্রযুক্তির উৎপাদন করবে।
গীগা কারখানার অনন্য পরিমাপ
এই কমপ্লেক্সের আকার এবং নির্মাণ সম্পর্কিত বিষয়গুলি এটিকে কোনও বিস্ময়কর জিনিসের চেয়ে কম করে না। এখানে ৪৪ মিলিয়ন বর্গফুটের একটি ভবন এলাকা তৈরি করা হচ্ছে, যা টেসলার গীগা কারখানার চেয়ে প্রায় চারগুণ বড় হবে। এই নির্মাণে এখন পর্যন্ত ৩৪ লক্ষ ঘনমিটার কংক্রিট ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও ৭ লক্ষ টন ইস্পাত ব্যবহার করা হবে, যা প্রায় ১০০টি আইফেল টাওয়ারের সমান। শুধু তাই নয়, এখানে ১ লক্ষ কিলোমিটার লম্বা কেবল স্থাপন করা হবে, যার দৈর্ঘ্য চাঁদে গিয়ে ফিরে আসার সমান।
বিশাল প্রকৌশল এবং শ্রমিকের শক্তি
এই প্রকল্পে ৫০ লক্ষ ম্যান-আওয়ারের প্রকৌশল কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণের ব্যস্ততম সময়ে এখানে প্রায় ৫০,০০০-এর বেশি শ্রমিক এবং প্রকৌশলী কাজ করছেন। এইসবের সাথে ব্যাপক পরিমাণে অটোমেশন প্রযুক্তির ব্যবহারও হচ্ছে, যা কাজের গতি এবং দক্ষতা উভয়ই বাড়িয়েছে। এই কমপ্লেক্স কেবল আকারে বিশাল নয়, প্রযুক্তি এবং স্মার্ট ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও এটি বিশ্বজুড়ে নিজের পরিচয় তৈরি করবে।
এআই দ্বারা চালিত হবে স্মার্ট গীগা কারখানা
এই পুরো গীগা এনার্জি কমপ্লেক্সের সবচেয়ে বিশেষত্ব হল এখানকার কারখানাগুলি সম্পূর্ণভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ এআই দ্বারা পরিচালিত হবে। এআই-ভিত্তিক স্মার্ট কারখানাগুলি ভবিষ্যতের প্রয়োজনগুলিকে মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে। এই কারখানাগুলিতে উৎপাদনের খরচ কম হবে, কার্যকারিতা দ্রুত হবে এবং একই সাথে গুণমান ও নির্ভরযোগ্যতাও নিশ্চিত হবে। এই কারণেই রিল্যায়েন্স এই প্রকল্পটিকে ভবিষ্যতের শক্তি বিপ্লবের কেন্দ্র হিসাবে দেখছে।
নবায়নযোগ্য শক্তির নতুন যুগ
এই কমপ্লেক্স থেকে ২৪ ঘন্টা নবায়নযোগ্য শক্তি সরবরাহ করা হবে। এখানে সবুজ রাসায়নিকের উৎপাদনও হবে। এর মধ্যে সবুজ অ্যামোনিয়া, ই-মিথানল এবং টেকসই বিমান জ্বালানির মতো পণ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এইগুলি ভবিষ্যতের শক্তি এবং জ্বালানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এইভাবে রিল্যায়েন্স কেবল দেশের নয়, বিশ্বেরও চাহিদা পূরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপক নতুন শক্তি ইকোসিস্টেম
রিল্যায়েন্স বলেছে যে তারা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপক এবং সমন্বিত নতুন শক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করছে। এই প্রকল্পটি বালি থেকে ইলেকট্রন এবং সবুজ অণু পর্যন্ত বিস্তৃত। এত বড় পরিসরে কোনও কোম্পানি এখনও পর্যন্ত এই দিকে কাজ করতে পারেনি। এই কারণেই এই কমপ্লেক্স বিশ্বব্যাপী এক অনন্য পরিচয় তৈরি করবে।
রিল্যায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ডিরেক্টর অনন্ত আম্বানি সম্প্রতি এজিএম-এ বলেছেন যে কোম্পানি গর্বিত যে তারা বিশ্বের একমাত্র কোম্পানি হবে যারা সম্পূর্ণরূপে সমন্বিত এবং স্বাধীনভাবে নতুন শক্তির ক্ষেত্রে কাজ করছে। তিনি আরও বলেছেন যে এই প্রকল্পটি ভারতকে শক্তি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল করে তুলবে এবং দেশের নতুন পরিচয় তৈরি করবে।
ভারতের শক্তি বিপ্লবের দিকে এক ধাপ
ধীরুভাই আম্বানি গীগা এনার্জি কমপ্লেক্স কেবল একটি কারখানা নয়, বরং এটি আগামী সময়ে ভারতের শক্তি বিপ্লবের প্রতীক হয়ে উঠবে। এর আকার, প্রযুক্তি এবং উৎপাদন ক্ষমতা এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম এবং অনন্য গীগা কমপ্লেক্স করে তুলছে। এই প্রকল্পটি ভারতের বিশ্বব্যাপী অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতে সবুজ শক্তির ক্ষেত্রে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা অর্জনে সহায়তা করবে।