কাইমুর জেলার রামপুর ব্লকে বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫ তারিখে কৃষক মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে বক্সার থেকে আরজেডি সাংসদ সুধাকর সিং এবং দলের জাতীয় মুখপাত্র সুবোধ মেহতা উপস্থিত ছিলেন।
আরজেডি নেতার বিজেপি-জেডিইউ নিয়ে মন্তব্য: বিহারের রাজনীতিতে আবারও রাজনৈতিক বাগ্যুদ্ধ উত্তাপ বাড়িয়েছে। বক্সার থেকে আরজেডি সাংসদ সুধাকর সিং বড় দাবি করে বলেছেন যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের দল জেডিইউ সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) বিলীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে জেডিইউ এবং বিজেপি আলাদাভাবে নির্বাচন লড়ে জনতাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, কিন্তু বাস্তবে তারা একই গাড়ির দুটি চাকা, এবং নির্বাচনের পরে তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকবে না।
সুধাকর সিং এই মন্তব্য কাইমুর জেলার রামপুর ব্লকে আয়োজিত কৃষক মহাসম্মেলনে করেন। তাঁর সঙ্গে দলের জাতীয় মুখপাত্র সুবোধ মেহতাও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সুধাকর সিংয়ের তীব্র আক্রমণ - 'নীতিশ-মোদীর জোটের পেছনে লুকানো ষড়যন্ত্র'
সুধাকর সিং অনুষ্ঠানের সময় বলেন, বিহারের জনগণকে বুঝতে হবে যে জেডিইউকে দেওয়া ভোটও শেষ পর্যন্ত বিজেপিরই খাতায় যাবে। উভয় দল মিলে নির্বাচনী নাটক করছে যাতে জনতাকে ধোঁকা দেওয়া যায়। তিনি বলেন, পাটনায় মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যে ছবি লাগানো হয়েছে, তা থেকেই স্পষ্ট যে জেডিইউ এখন নামমাত্র একটি দলে পরিণত হয়েছে। তাঁর দাবি, নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেডিইউ সরাসরি বিজেপির সঙ্গে মিশে যাবে, এবং জনগণের এই সত্যতা উপলব্ধি করা উচিত।
আরজেডি সরকার গঠন করলে বিনামূল্যে বিদ্যুতের প্রতিশ্রুতি
কৃষকদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সুধাকর সিং বলেন, যদি বিহারে আরজেডির সরকার গঠিত হয়, তাহলে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে কৃষকদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে, মান্ডি আইন কার্যকর করা হবে, এবং চাষের খরচ কমানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
সুধাকর সিং আরও বলেন, বিহারে আমাদের সরকার গঠিত হলে ১০০% ডোমিসাইল নীতি কার্যকর করা হবে যাতে বিহারের যুবকরা চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়।
ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগ
সুধাকর সিং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন যে বিজেপি দিল্লি এবং মহারাষ্ট্রের মতো বিহারেও গরিব, দলিত, মহাদলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণির ভোট কাটার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি অভিযোগ করেন যে ভোটার তালিকা আপডেটের নামে উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট, জন্ম প্রমাণপত্রের মতো কাগজপত্র চেয়ে তালিকা থেকে লোকেদের বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা এই ষড়যন্ত্রের তীব্র বিরোধিতা করব। কোনো গরিব, দলিত বা অনগ্রসর ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, এর জন্য আরজেডি সর্বস্তরে সংগ্রাম করবে।
ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীকে নিয়েও নিশানা
সুধাকর সিং কথা-কথক ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন যে সমতা ও সাম্যের কথা না বলা কোনো বক্তব্য আধিপত্যের মানসিকতাকে প্রতিফলিত করে। তিনি বলেন, আমরা ধর্মগুরুদের সম্মান করি, কিন্তু যখন কেউ একটি বিশেষ জাতির মহিমা কীর্তন করে, তখন তিনি সামাজিক সম্প্রীতিকে খর্ব করেন। আমাদের এ ধরনের চিন্তা থেকে সাবধান থাকতে হবে।”
বিহারের রাজনীতিতে সুধাকর সিংয়ের এই মন্তব্যে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই জেডিইউ এবং বিজেপির সম্পর্ক নিয়ে অনেকবার প্রশ্ন উঠেছে, এবং নীতিশ কুমারের ইউ-টার্নের আলোচনাও সাধারণ। এমন পরিস্থিতিতে আরজেডি সাংসদের এই দাবিতে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য আরও বেড়েছে।