বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা রোজভ্যালিতে আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দিলীপ শেঠের নেতৃত্বাধীন অ্যাসেটস ডিজ়পোজ়াল কমিটি (এডিসি) এবার নিজেই তদন্তের মুখে। গত দেড় মাস ধরে রোজভ্যালি-সংক্রান্ত নথি ও অভিযোগ খতিয়ে দেখে শুক্রবার হাইকোর্ট সিবিআইকে ওই কমিটির বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগে প্রাথমিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়। আইনজীবীদের একাংশের মতে, হাইকোর্টের নিজের গড়া কমিটি— যার নেতৃত্বে আবার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি— তার বিরুদ্ধে এই ধরনের তদন্তের নির্দেশ একেবারেই নজিরবিহীন।
সিবিআইকে নির্দিষ্ট তদন্তের নির্দেশ, সময়সীমা ২১ অগস্ট
বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, আমানতকারীদের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে কীভাবে টাকা গেল, বাজেয়াপ্ত হোটেল চালানোর জন্য অন্য সংস্থা ও ব্যক্তিরা কীভাবে যুক্ত হলেন— সব খুঁটিনাটি তদন্ত করতে হবে। এই প্রাথমিক অনুসন্ধানের রিপোর্ট ২১ অগস্টের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শেঠের নেতৃত্বাধীন এডিসিকে নতুন হলফনামা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে হবে। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল কড়া— অভিযোগ যেহেতু সরাসরি কমিটির বিরুদ্ধে, জবাবও দিতে হবে স্পষ্টভাবে।
অভিযুক্ত লেনদেনের অঙ্কে চাঞ্চল্য
আমানতকারীদের পক্ষ থেকে আদালতে জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী, গত ৩০ জুন তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা জমা হয় এডিসি-র অ্যাকাউন্টে। কিন্তু একই দিনে সেখান থেকে ২ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা স্থানান্তরিত হয় বিচারপতি শেঠের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে। এই তথ্য আদালতে জমা পড়তেই হাইকোর্ট জানায়, সিবিআই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আরও জানা যায়, রোজভ্যালির তরফে এডিসিকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৭ লক্ষ টাকা এবং রাজ্যের তরফে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল কোম্পানি চালানো ও চেয়ারপার্সনের সাম্মানিক প্রদানে।
হোটেল লিজ চুক্তি নিয়েও প্রশ্ন
হাইকোর্টে জমা আরেকটি নথি জানাচ্ছে, চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল রোজভ্যালির একটি হোটেল— যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৪ কোটি টাকা— বছরে মাত্র আড়াই লক্ষ টাকায় অন্য একটি সংস্থাকে লিজ দেওয়া হয়। চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে এডিসির নিযুক্ত একটি বেসরকারি সংস্থা। এত বড় সম্পত্তি অস্বাভাবিক কম দামে লিজ দেওয়ায় আদালত তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে।
আদালতের উদ্বেগ, দায় এড়ানো যাবে না
বিচারপতি ভরদ্বাজের বেঞ্চের স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ— রোজভ্যালির সব সম্পত্তি আদালতের হেফাজতে রয়েছে, এডিসি হাইকোর্টের নির্দেশেই তৈরি। ফলে এই কমিটি যা করবে, তার দায়ও আদালতের উপর বর্তাবে। তাই অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা আদালতের ভাবমূর্তিকেও আঘাত করে। আদালতের মতে, এই ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ সত্য উদঘাটন ও দায় নির্ধারণ জরুরি।