ড্রোন হামলা: রাশিয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ, জনজীবন বিপর্যস্ত

ড্রোন হামলা: রাশিয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ, জনজীবন বিপর্যস্ত

ড্রোন হামলার কারণে রাশিয়ায় মোবাইল ও ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সাধারণ জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। মানুষ এখন ম্যাপ ও নগদ লেনদেনে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সরকার এটিকে নিরাপত্তার পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করছে, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এটি ইন্টারনেটের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। ডিজিটাল স্বাধীনতা এখানে একটি বড় প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

Internet Shutdown: যখন পুরো বিশ্ব ডিজিটাল পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন রাশিয়া যেন এক ভিন্ন পথে হাঁটছে। ইন্টারনেট বন্ধ, মোবাইল নেটওয়ার্কের বাধা এবং ওয়াই-ফাই পরিষেবার অস্থিরতা সাধারণ মানুষের জীবনকে ওলটপালট করে দিয়েছে। বিশেষ করে গত দুই মাসে, ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই শাটডাউনগুলো শুধু যোগাযোগ নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।

রাশিয়ায় কেন ইন্টারনেট শাটডাউন করা হচ্ছে?

ক্রেমলিন সরকার বলছে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনীয় ড্রোন প্রায়শই মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে, তাই সরকারের ধারণা ইন্টারনেট এবং নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিলে এই ধরনের হামলা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ২০২৪ সালের মে মাস থেকে শুরু হওয়া এই ‘অপারেশন স্পাইডারওয়েব’-এর অধীনে ৮০টি রুশ অঞ্চলের মধ্যে ৭৩টিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চল: সাইবেরিয়া থেকে সুদূর প্রাচ্য পর্যন্ত

রোস্তভ-অন-ডন, সাইবেরিয়া, ভোরোনেজ, সামারা এবং রাশিয়ার সুদূর প্রাচ্যের অঞ্চলগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় ওয়াই-ফাই পরিষেবাও প্রভাবিত হয়েছে। Na Svyazi নামক একটি স্বাধীন সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের ৯১% অঞ্চলে মোবাইল ইন্টারনেট নিষ্ক্রিয় ছিল।

কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবন প্রভাবিত হচ্ছে?

ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার কারণে মানুষ তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সমস্যায় পড়ছে:

  • কার্ড পেমেন্ট বন্ধ হওয়ার কারণে কেনাকাটা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
  • এটিএম পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় নগদ টাকা তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
  • ট্যাক্সি ও রাইড-শেয়ারিং অ্যাপগুলো অকার্যকর হয়ে গেছে।
  • কাগজের ম্যাপের সাহায্যে পথ চলতে হচ্ছে।
  • ফার্মেসি সিস্টেম বন্ধ হওয়ায় ওষুধ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

ডিজিটাল থেকে অ্যানালগে প্রত্যাবর্তন: বাধ্যবাধকতা নাকি কৌশল?

একসময় ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনে এগিয়ে থাকা রাশিয়া, এখন কাগজের ম্যাপ, নোটবুক এবং নগদ লেনদেনের মতো পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাচ্ছে। মানুষ সামাজিক মাধ্যমে মজা করে বলছে, 'আমরা যেন গুহায় ফিরে গেছি।' পাভেল ওসিব্পিয়ান নামক একজন ব্লগার ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও গান পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি গাইছেন – 'ইন্টারনেট শুধু দুপুর ১২টা পর্যন্ত থাকে, তারপর আর কিছু নেই। রাগ করো না, এখন অভ্যাস করে নাও।' এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ দেখেছেন।

সরকারের পরিকল্পনা: বিদেশি অ্যাপের বিকল্প এবং সম্পূর্ণ নজরদারি

রাশিয়া ইতিমধ্যেই ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এবং সিগন্যালের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্লক করে দিয়েছে। এখন সরকার ভিপিএন পরিষেবাগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়া একটি দেশীয় মেসেজিং অ্যাপ তৈরি করছে, যাতে বিদেশি অ্যাপের ওপর নির্ভরতা কমানো যায় এবং সমস্ত ডেটার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।

এই পদক্ষেপ কি শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য?

'ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার'-এর মতে, রাশিয়ার এই পদক্ষেপ শুধু ড্রোন থেকে সুরক্ষা নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদী ইন্টারনেট সেন্সরশিপ কৌশলের অংশ। চীনের 'গ্রেট ফায়ারওয়াল'-এর মাধ্যমে যেভাবে ইন্টারনেটকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, রাশিয়ায় এখন তেমনই একটি মডেল তৈরি হচ্ছে।

রাশিয়া কি সম্পূর্ণরূপে গ্লোবাল ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে?

যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে রাশিয়া ধীরে ধীরে 'জাতীয় ইন্টারনেট' অর্থাৎ RuNet-এর দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এর অর্থ হবে – এমন একটি ইন্টারনেট, যা সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ার ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকবে, যা বিশ্ব নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন। এতে শুধু তথ্যের স্বাধীনতাই শেষ হবে না, সেই সাথে বাণিজ্য, শিক্ষা এবং বিজ্ঞানের আদান-প্রদানের ওপরও খারাপ প্রভাব পড়বে।

Leave a comment