সরকারি ইস্পাত কোম্পানি SAIL শুক্রবার শেয়ার বাজার বন্ধ হওয়ার ঠিক আগে জুন মাসের ত্রৈমাসিকের ফলাফল পেশ করেছে। কোম্পানি জানিয়েছে যে, অর্থবর্ষ ২০২৬-এর প্রথম ত্রৈমাসিকে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন ২০২৫-এর মধ্যে তাদের ৭৪৪.৫ কোটি টাকার নেট লাভ হয়েছে। এক বছর আগে இதே त्रৈমাসিকে এই লাভ ছিল মাত্র ৮১.৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানির মুনাফা প্রায় ৯ গুণ বেড়েছে।
এই সংখ্যাটি বাজারকে চমকে দিয়েছে, যদিও এটি অনুমানের থেকে কম ছিল। CNBC-TV18-এর পোলে কোম্পানির থেকে ১১৭৭ কোটি টাকার মুনাফার আশা করা হয়েছিল। তাই এই সংখ্যা শক্তিশালী হলেও বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার থেকে সামান্য নীচে ছিল।
আয়েও বৃদ্ধি, ৮ শতাংশের বেশি
SAIL-এর মোট আয়েও বৃদ্ধি হয়েছে। কোম্পানি জানিয়েছে যে, এই ত্রৈমাসিকে তাদের অপারেটিং ইনকাম ২৫৯২১ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ২৩৯৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরে ৮ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি দেখা গেছে।
কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, এই বৃদ্ধি ভালো চাহিদা, উৎপাদনে বৃদ্ধি এবং পরিচালন ব্যবস্থার উন্নতির কারণে হয়েছে। কোম্পানি ক্রমাগত তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করছে, যার প্রভাব ফলাফলে দেখা গেছে।
EBITDA এবং মার্জিনেও উন্নতি
EBITDA অর্থাৎ সুদ, ট্যাক্স, ডেপ্রিসিয়েশন এবং অ্যামোর্টাইজেশন-এর আগের রোজগারও বেড়েছে। কোম্পানি জানিয়েছে যে, এই ত্রৈমাসিকে তাদের EBITDA ২৭৬৭ কোটি টাকা, যেখানে গত বছর இதே त्रৈমাসিকে এটি ছিল ২২১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ EBITDA-তে প্রায় ২৪.৭ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি দেখা গেছে।
অন্যদিকে মার্জিনের কথা বললে, এই সংখ্যাও আগের থেকে ভালো হয়েছে। গত বছর এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে কোম্পানির মার্জিন ছিল ৯.২ শতাংশ, যা এই বার বেড়ে ১০.৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এতে কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
শেয়ারে দেখা গেল চাপ, সপ্তাহের শেষে পতন
ফলাফলে যেখানে উন্নতি দেখা গেছে, সেখানে শেয়ার বাজারে কোম্পানির স্টকের উপর চাপ দেখা গেছে। শুক্রবার SAIL-এর শেয়ার ৪.২৪ শতাংশ পতনের সাথে ১৩০.৪০ টাকায় বন্ধ হয়েছে। সারাদিনের ব্যবসায় এতে ওঠানামা বজায় ছিল।
গত এক বছরের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায় SAIL-এর স্টক বিনিয়োগকারীদের তেমন কোনো রিটার্ন দেয়নি। কোম্পানির শেয়ারে এক বছরে মোট ৮.৫৫ শতাংশ পতন হয়েছে। এখন সোমবার বাজারে কোম্পানির ফলাফলের প্রভাব দেখা যাবে।
উৎপাদন এবং বিক্রি-তে বৃদ্ধি
SAIL-এর পক্ষ থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, এই ত্রৈমাসিকে কোম্পানি স্টিল উৎপাদন এবং বিক্রি দুটোতেই বৃদ্ধি করেছে। উৎপাদনে ৫ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়েছে। কোম্পানি জানিয়েছে যে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সরকারি ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোজেক্ট-এর কারণে বিক্রি-তেও উন্নতি হয়েছে।
এই কারণগুলোর জন্যই কোম্পানির মার্জিন এবং অপারেটিং স্তরে উন্নতি হয়েছে। ম্যানেজমেন্টের বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী মাসগুলোতেও ভালো ফল ধরে রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ইনপুট কস্ট-এর উপর কন্ট্রোল থেকে লাভ
কোম্পানি আরও জানিয়েছে যে, কয়লা এবং অন্যান্য ইনপুট কস্ট নিয়ে তারা ভালোভাবে কাজ করেছে। ইন্টারনাল এফিসিয়েন্সি বাড়িয়ে খরচ অনেকটা কমানো গেছে। এতেও কোম্পানিকে তার মুনাফা এবং মার্জিন বাড়াতে সাহায্য করেছে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, SAIL-এর মতো ভারী শিল্পে খরচ নিয়ন্ত্রণ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ, এবং এক্ষেত্রে কোম্পানির এই পদক্ষেপ প্রশংসার যোগ্য।
চাহিদা বজায় রয়েছে, সামনের ত্রৈমাসিকগুলোর দিকে নজর
যদিও বিশ্লেষকদের বক্তব্য কোম্পানিকে আগামীতেও চাহিদা বজায় রাখতে হবে। বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোজেক্ট চালু আছে, যেগুলোতে স্টিলের ব্যবহার ভালো পরিমাণে হচ্ছে। এছাড়া রিয়েল এস্টেট এবং অটো সেক্টরের উন্নতিও স্টিল সেক্টরের জন্য ইতিবাচক সংকেত।
SAIL-এর এই ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, কোম্পানি এখন একটি স্থিতিশীল উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে বিদেশি চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক বাজারের দামের ওঠানামার দিকে নজর রাখা জরুরি।
বিনিয়োগকারীদের নজর এখন সোমবারের দিকে
এখন সবার নজর সোমবার SAIL-এর শেয়ারের দিকে থাকবে। মুনাফায় ভালো বৃদ্ধি সত্ত্বেও শুক্রবারের পতন কিছুটা সাসপেন্স তৈরি করেছে যে, বাজার এই রিপোর্টকে সোমবার কিভাবে নেয়। পাশাপাশি বিশ্লেষকরা এটা দেখার অপেক্ষায় আছেন যে, কোম্পানি আগামী ত্রৈমাসিকগুলোতেও এই উন্নতি ধরে রাখতে পারবে কিনা।