ভারতীয়দের নিয়োগে প্রশ্ন তুললেন ট্রাম্প, চিনেও কারখানা নয়!
ওয়াশিংটনে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’-নিয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে মুখ খুললেন ইউএস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর সোজাসাপটা বক্তব্য: “আমার আমলে ইউএস-এ এসব আর বরদাস্ত করা হবে না।” এক ঢিলে একাধিক নিশানা—ভারতীয় কর্মী নিয়োগ, চিনে কারখানা স্থাপন, আয়ারল্যান্ডে মুনাফা জমিয়ে রাখা—সব কিছুকেই ‘অত্যধিক বিশ্বায়নের দোষ’ বলে দাগালেন ট্রাম্প। এই মন্তব্যেই যেন ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হল ঘনীভূত আশঙ্কার মেঘ।ট্রাম্পের বক্তব্যের মূলে রয়েছে 'মেড ইন আমেরিকা' নীতি। তাঁর মতে, বিদেশে কর্মী নিয়োগ বা উৎপাদনের মাধ্যমে মার্কিন কোম্পানিগুলি দেশের আর্থিক ক্ষতি করছে।
ভারতীয় টেকি কর্মীদের ভাগ্যে কি তবে অনিশ্চয়তা?
বছরের পর বছর ধরে ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলির মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ইউএসের বিভিন্ন আইটি জায়ান্টে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের এই কঠোর অবস্থান তাঁদের জন্য সুসংবাদ নয়। শুধু ভবিষ্যতের নয়, বর্তমানে ইউএসে কর্মরত হাজার হাজার ভারতীয় পেশাদারদেরও চাকরি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের নীতিগত অবস্থান বদলালে অভিবাসন ও ভিসা নীতিতেও বদল আসতে পারে—সেই আশঙ্কাও প্রবল।বহু ভারতীয় তরুণ-তরুণী যাঁরা ইউএস-এ ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের জন্য এই বার্তা এক ধরনের রেড অ্যালার্ট।
এআই দুনিয়ায় একচেটিয়া আধিপত্য চায় ট্রাম্প প্রশাসন
ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ক্ষেত্রে ইউএস-এর একাধিপত্য বজায় রাখতে শুরু করেছে একগুচ্ছ পরিকল্পনা। ঘোষণা হয়েছে ‘এআই অ্যাকশন প্ল্যান’। ওয়াশিংটনের প্রযুক্তি সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমরা চাই আমাদের টেক সংস্থাগুলি নিজেদের মাটিতে সব কাজ করুক, বিদেশে নয়।” তাঁর অভিযোগ, মার্কিন কোম্পানিগুলি বিদেশে কাজ করিয়ে নিজেদের স্বাধীনতার অপব্যবহার করছে।ট্রাম্পের লক্ষ্য, আমেরিকায় থেকে কাজ করিয়ে বেকারত্ব কমানো এবং এআই রিসোর্স নিজের দেশে ধরে রাখা।
চিন, ভারত, আয়ারল্যান্ড—সব দেশের দিকেই অভিযোগের তীর
ট্রাম্পের মতে, বড় বড় মার্কিন সংস্থা স্বাধীনতার সুফল ভোগ করলেও দেশীয় উৎপাদনের গুরুত্ব দেয় না। তাঁর বক্তব্য, “চিনে তৈরি হচ্ছে কারখানা, ভারতে চলছে কর্মী নিয়োগ আর মুনাফা জমা হচ্ছে আয়ারল্যান্ডে!” প্রেসিডেন্ট চেয়েছেন, সমস্ত প্রযুক্তিগত কার্যক্রম ইউএসে হোক—প্রতিষ্ঠানের ভিতরেই। এতটাই কঠোর তাঁর বক্তব্য যে সংস্থাগুলিকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েই জানানো হয়েছে, বাইরে কাজ চালালে তা মেনে নেওয়া হবে না।ট্রাম্পের বক্তব্যে স্পষ্ট, টেক কোম্পানিগুলিকে দেশীয় কর কাঠামোর আওতায় আনাই লক্ষ্য।
অ্যাপলকেও ছাড়েননি, শুল্কের ভয় দেখিয়ে কড়া বার্তা
এই প্রথম নয়—চলতি বছরের মে মাসেই ট্রাম্প আইফোন নির্মাতা অ্যাপলকে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমাদের দেশে যা বিক্রি হবে, তা এখানেই তৈরি হতে হবে। ভারত বা অন্য দেশে তৈরি হলে অন্তত ২৫% আমদানি শুল্ক দিতে হবে অ্যাপলকে—এমন হুঁশিয়ারি দেন। এ দিন ট্রুথ স্পেশ্যাল-এ আবারও একই বার্তা দিলেন: আমার প্রশাসন অ্যাপলকে আগেই জানিয়েছে, আমদানি করলে দিতে হবে শুল্ক।বহুজাতিক কোম্পানিগুলির ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি শুধু বাণিজ্য যুদ্ধ নয়, জাতীয় স্বার্থ বজায় রাখার কৌশল হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
ইউএস-এ চাকরি ফেরত আনতে মরিয়া ট্রাম্প, ভারত কতটা প্রস্তুত?
এআই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী যত দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে—ট্রাম্প চান, সেই দৌড়ে ইউএস থাকবে সর্বাগ্রে। কিন্তু এ জন্য ইউএস-এ ফিরে আসতে হবে আইটি জবস, বন্ধ করতে হবে আউটসোর্সিং। ভারতের মতো দেশ, যারা বিশ্ব টেক ল্যান্ডস্কেপে একটি বিশাল অংশ জুড়ে আছে, তাদের জন্য এটা কেবলমাত্র সতর্ক সংকেত নয়, বরং সামনে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্প প্রেসিডেন্সি যদি ফিরে আসে, তাহলে টেক সেক্টরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও বড় রদবদল আসতে চলেছে।এই পরিস্থিতি শুধু মার্কিন নীতির বিষয় নয়, ভারতীয় টেক শিল্প ও আইটি গ্র্যাজুয়েটদের কৌশল নতুনভাবে সাজানোর সময় এসে গেছে।