আইটি দুনিয়ায় ঝড় সেলসফোর্সে এক ধাক্কায় ৪০০০ কর্মী ছাঁটাই এআই নিল জায়গা

আইটি দুনিয়ায় ঝড় সেলসফোর্সে এক ধাক্কায় ৪০০০ কর্মী ছাঁটাই এআই নিল জায়গা

ছাঁটাইয়ের খবর আবার আলোচনায়

আইটি খাতে নতুন করে ছাঁটাইয়ের হাওয়া বইছে। গুগল, মেটা, মাইক্রোসফট থেকে শুরু করে ওরাকল ও টিসিএস—প্রায় সব বড় সংস্থাই কর্মী সংকোচনের পথে হেঁটেছে। এবার সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছে মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা সেলসফোর্স (Salesforce)। এক ধাক্কায় প্রায় ৪০০০ কর্মীকে বিদায় জানাতে চলেছে তারা।

মোট কর্মীর কত শতাংশ ছাঁটাই?

চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সেলসফোর্সে মোট ৭৬,৪৫৩ জন কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে ৪০০০ জন ছাঁটাই মানে প্রায় ৫ শতাংশ কর্মী এক ঝটকায় চাকরি হারালেন। শুধু সংখ্যাতেই নয়, এই সিদ্ধান্ত প্রতীকী দিক থেকেও বড়সড়—কারণ, এআই-এর কারণে ছাঁটাইয়ের ভয় যে বাস্তব, তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল।

এআই বদলে দিচ্ছে কর্মসংস্থানের চেহারা

বেনিঅফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কাস্টমার সাপোর্ট বিভাগের অন্তত ৫০ শতাংশ কাজ এখন এআই করছে। এর ফলে কর্মীদের প্রয়োজন অনেকটাই কমে গিয়েছে। আগে যে কাজ মানুষ করতেন, এখন সেটি করছে চ্যাটবট ও এআই এজেন্ট। এর ফলে পরিষেবা দ্রুততর হলেও, চাকরির বাজারে নেমেছে অন্ধকার।

সিইও-র বক্তব্যে দ্বন্দ্ব

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মাসখানেক আগেই বেনিঅফ দাবি করেছিলেন, এআই-এর কারণে ছাঁটাই হবে না। জুলাই মাসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, এআই কাজের ধরন পাল্টাবে ঠিকই, তবে কর্মীদের বিকল্প হিসেবে উঠে আসবে না। অথচ কয়েক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই তাঁর সংস্থাতেই হল ব্যাপক ছাঁটাই। এতে প্রশ্ন উঠছে—সিইও-র আগের বক্তব্য কি শুধুই আশ্বাস ছিল?

শিল্পবিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

আইটি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এআই যত বেশি বিস্তার লাভ করছে, ততই “রুটিন কাজ”-এর জায়গায় মানুষকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। কাস্টমার কেয়ার, ডেটা এন্ট্রি, টেকনিক্যাল সাপোর্ট—এসব খাতেই সবচেয়ে আগে ধাক্কা লাগছে। ফলে চাকরি টিকিয়ে রাখতে গেলে নতুন দক্ষতা অর্জন ছাড়া উপায় নেই। এআই-কে ব্যবহার করাই হবে আগামী দিনের বড় চ্যালেঞ্জ।

কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সিদ্ধান্ত

সেলসফোর্সের এই ছাঁটাইয়ের খবর প্রকাশ্যে আসতেই কর্মীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। অনেকেই বলছেন, সংস্থার ভরসায় তাঁরা দীর্ঘদিন কাজ করে এসেছেন। অথচ হঠাৎ করেই চাকরি চলে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমেরিকার চাকরির বাজারে যেভাবে একের পর এক আইটি সংস্থা ছাঁটাই ঘোষণা করছে, তাতে কর্মীদের নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

আর্থিক চাপ কমাতেই কি এই পদক্ষেপ?

অর্থনৈতিক দিক থেকেও সেলসফোর্স কিছুদিন ধরেই খরচ কমানোর পথে হাঁটছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাস্টমার সাপোর্টে এআই-এর ব্যবহার বাড়িয়ে সংস্থা প্রচুর খরচ বাঁচাচ্ছে। এর ফলে লাভের অঙ্ক বাড়ানো সহজ হবে। তবে মানবসম্পদের জায়গায় প্রযুক্তির ব্যবহার ভবিষ্যতে আরও গভীর সংকট তৈরি করতে পারে বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

 

বিশ্বজুড়ে চাকরি হারানোর আতঙ্ক

শুধু আমেরিকায় নয়, ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এআই-এর কারণে চাকরি সংকট বাড়ছে। টিসিএস, ইনফোসিসের মতো ভারতীয় সংস্থাও আগেই কর্মী কমিয়েছে। একদিকে নতুন দক্ষতার সুযোগ তৈরি হলেও, অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক কর্মী এক ধাক্কায় বেকার হচ্ছেন। ফলে আগামী দিনের আইটি শিল্প কোন পথে যাবে, তা নিয়ে তৈরি হচ্ছে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন।

এআই কি বন্ধু, না শত্রু?

সেলসফোর্সের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে দিল, এআই শুধু প্রযুক্তিগত বিপ্লব নয়, চাকরির বাজারের জন্য এক অজানা ঝড়ও বটে। একদিকে এআই কাজের গতি বাড়াচ্ছে, গ্রাহক পরিষেবাকে আরও উন্নত করছে। অন্যদিকে, হাজার হাজার কর্মী হারাচ্ছেন তাঁদের জীবিকা। তাই এআই আসলেই বন্ধু নাকি শত্রু—এই বিতর্ক এখন আরও জোরালো হয়ে উঠছে।

Leave a comment