সল্টলেকে নতুন ব্রিজে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

সল্টলেকে নতুন ব্রিজে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

কলকাতার সল্টলেকের নতুন ব্রিজে ঘটল এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনা। দুটি চার চাকা গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষের পর ভয়াবহ আগুনে ঝলসে মৃত্যু হল এক তরুণ ডেলিভারি বয়ের। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তিন জন গাড়ি আরোহী। মুহূর্তে থমকে গেল ব্রিজের যান চলাচল।

মাত্র ২০ বছর বয়সেই জীবনাবসান

মৃত যুবকের নাম সৌমেন মণ্ডল, বয়স মাত্র ২০ বছর। বাড়ি ঝড়খালি কোস্টাল থানার হিরণময়পুর স্কুল মোড়ে। জীবিকার তাগিদে শহরে এসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করছিলেন সৌমেন। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে এই তরুণের অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামে।

দুটি গাড়ির ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেষ্টপুর দিক থেকে একটি চার চাকা গাড়ি সল্টলেকের দিকে আসছিল। অন্যদিকে, নতুন ব্রিজ সিগনাল থেকে ইস্ট থানার দিকে যাচ্ছিল আরেকটি চার চাকা। ঠিক সিগনাল মোড়ের কাছে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে দু’টি গাড়ির। সংঘর্ষের ধাক্কায় একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংয়ে গিয়ে ধাক্কা মারে।

মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন

ধাক্কার পরপরই দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটির ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া বেরোতে থাকে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাতে ভয়ঙ্কর আগুন ধরে যায়। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে গাড়িটি। আশপাশের পথচারীরা চিৎকার করে সবাইকে সরে যেতে বলেন। আহত তিন আরোহী কোনওভাবে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।

দুর্ভাগ্যজনক ফাঁদে ডেলিভারি বয়

দুর্ঘটনার সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ডেলিভারি বয় সৌমেন। আগুন দেখে সাইকেল ঘুরিয়ে পালাতে চাইলেও, ব্রিজের রেলিংয়ে তাঁর প্যান্ট আটকে যায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তাঁর গায়ে। চেষ্টার পরও মুক্ত হতে না পেরে মুহূর্তের মধ্যে আগুনে ঝলসে প্রাণ হারান তিনি।

দমকল আসতে দেরি, উত্তেজনা ছড়াল এলাকায়

দমকলের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। কেউ কেউ হাতে লাঠি ও ইট নিয়ে জ্বলন্ত গাড়িতে ভাঙচুর চালান। তাঁদের দাবি, দ্রুত আগুন নেভানো গেলে হয়তো প্রাণ বাঁচানো যেত। পুলিশ ও দমকল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে।

আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক

আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়ির তিন আরোহীকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় পোড়া ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দু’জনের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও একজনকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান

পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক অনুমান, অতিরিক্ত গতি ও অসতর্ক ড্রাইভিংয়ের ফলেই সংঘর্ষ ঘটে। পাশাপাশি, গাড়ির ভেতরে দাহ্য পদার্থ ছিল কি না তাও তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় ব্রিজে সঠিক সিগনাল লাইট কাজ করছিল কি না, সেটিও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

শহরের ব্যস্ত ব্রিজে নিরাপত্তা প্রশ্নে উদ্বেগ

এই ঘটনায় ফের একবার সামনে এল শহরের ব্যস্ততম ব্রিজগুলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নতুন ব্রিজে প্রতিদিনই তীব্র গতিতে গাড়ি চলাচল করে। পুলিশি নজরদারি ও গতিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি উঠেছে।

শোকে স্তব্ধ সৌমেনের পরিবার

সৌমেনের বাবা-মা সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমাদের ছেলেকে আমরা শহরে পাঠিয়েছিলাম ভালো ভবিষ্যতের জন্য, কিন্তু ফেরত এল শুধু তার নিথর দেহ।” প্রতিবেশীরাও কেঁদে ফেলছেন তাঁর প্রাণোচ্ছল স্বভাবের কথা বলতে গিয়ে। গ্রামে শোকের আবহে ভিড় জমছে সৌমেনের বাড়িতে।

শেষকৃত্যের আগে ন্যায়ের দাবি

স্থানীয়রা এবং সৌমেনের পরিবার এই ঘটনায় দোষীদের দ্রুত শাস্তি দাবি করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পর জরুরি পরিষেবার ধীর প্রতিক্রিয়া অনেকাংশে পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তোলে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘটনার সব দিক খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সল্টলেকের দিনটি হয়ে রইল কালো অধ্যায়

দু’টি গাড়ির সংঘর্ষ, ভয়াবহ আগুন, তরুণ ডেলিভারি বয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু—সব মিলিয়ে সল্টলেকের নতুন ব্রিজের এই দিনটি হয়ে রইল শহরের এক কালো অধ্যায়। ব্যস্ত রাস্তার মাঝে এভাবে জীবন হারানোর দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে আতঙ্কিত পথচারীরা আজও সেই মুহূর্ত ভুলতে পারছেন না।

Leave a comment