স্যাটেলাইট সংযোগের মাধ্যমে মোবাইল ইন্টারনেটের এক নতুন যুগের সূচনা হবে। এর ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে। ব্লুবার্ড স্যাটেলাইট 3G, 4G এবং 5G নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করবে, যা কল এবং ইন্টারনেটের সুবিধা আরও উন্নত করবে।
ISRO: প্রযুক্তির জগতে আরও একটি বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে চলেছে। দেশের স্বনামধন্য স্পেস এজেন্সি আগামী মাসে একটি অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে, যা সরাসরি আপনার মোবাইল ফোনের সাথে যুক্ত হয়ে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করবে। এই পদক্ষেপ ভারতের মোবাইল সংযোগকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং সেই সব এলাকাতেও ইন্টারনেটের সুবিধা পৌঁছে দেবে, যেখানে আজও সংযোগের সমস্যা রয়েছে।
Block-2 BlueBird স্যাটেলাইট: ISRO-র পরবর্তী বড় পদক্ষেপ
ISRO-র চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, এজেন্সি আগামী মাসে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে মার্কিন কোম্পানির ৬,৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের Block-2 BlueBird স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে। এই স্যাটেলাইট শুধু মোবাইল কানেক্টিভিটির নতুন প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত হবে না, বরং এটি 3GPP স্ট্যান্ডার্ড ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে মোবাইল ফোনকে সরাসরি মহাকাশ থেকে যুক্ত করতে পারবে।
Block-2 BlueBird-এ মোট ৬৪.৩৮ বর্গমিটারের কমিউনিকেশন অ্যারে থাকবে, যা মোবাইল ফোনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হবে। এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে 12 Mbps পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড স্পিড পাওয়া যাবে, যার ফলে ব্যবহারকারীরা ভিডিও কলিং, ডেটা আদানপ্রদান এবং ভয়েস কলের মতো পরিষেবাগুলো কোনো বেস টার্মিনালের প্রয়োজন ছাড়াই উপভোগ করতে পারবেন।
মোবাইল ফোন এবং স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটির নতুন যুগ
মোবাইল ফোন এবং স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি সম্পর্কিত নতুন প্রযুক্তি আসছে, যা ইন্টারনেটের ব্যবহারকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে দেবে। এখন প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতেও, যেখানে নেটওয়ার্কের সমস্যা ছিল, সেখানে স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটির মাধ্যমে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। ব্লুবার্ড স্যাটেলাইট 3G, 4G এবং 5G নেটওয়ার্ক সমর্থন করবে, যার ফলে ব্যবহারকারীরা আরও উন্নত মোবাইল ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন।
এই প্রযুক্তি বিশেষ করে সেই জায়গাগুলোর জন্য বেশি উপযোগী হবে, যেখানে মোবাইল টাওয়ার বা ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন করা কঠিন, যেমন - পাহাড়, সমুদ্রের তীর এবং মরুভূমি এলাকায়। এর ফলে জরুরি পরিষেবা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতেও ইন্টারনেটের আরও ভালো ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
ভারতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা শুরুর প্রস্তুতি
ISRO-র এই উদ্যোগের পাশাপাশি ভারতে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড পরিষেবাও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক, জিও এবং এয়ারটেলের মতো বড় কোম্পানিগুলোকে ভারত সরকার স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করার অনুমোদন দিয়েছে। টেলিকম বিভাগ শীঘ্রই স্পেকট্রাম অ্যালোকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে, যার পরে এই কোম্পানিগুলো তাদের পরিষেবা জনগণের জন্য উপলব্ধ করবে। Starlink ইতিমধ্যেই ডিরেক্ট-টু-সেল টেকনোলজির পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ফোন সরাসরি স্যাটেলাইটের সাথে যুক্ত হতে পারবে।
ISRO-র প্রযুক্তিগত নেতৃত্ব
ভারতের স্পেস এজেন্সি ISRO গত কয়েক বছরে Mangalyaan, Chandrayaan এবং সম্প্রতি NISAR-এর মতো বেশ কয়েকটি বড় মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এখন Block-2 BlueBird স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ISRO মোবাইল কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রেও বিশ্ব নেতৃত্ব স্থাপন করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে ভারতে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি আরও বাড়বে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষজনও এখন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন, যার ফলে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং যোগাযোগের সম্ভাবনা বাড়বে।
ভবিষ্যতে সম্ভাবনা
স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটির এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT), স্মার্ট সিটি, স্মার্ট চাষ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-এর মতো ক্ষেত্রগুলোতেও বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে পারে। 5G এবং তার চেয়েও উন্নত প্রযুক্তির সাথে মিলিত হয়ে এটি মোবাইল কানেক্টিভিটির পরিধি আরও প্রসারিত করবে। ভারতের জন্য এটা একটা দারুণ সুযোগ যে তারা বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বাজারে নিজেদের পরিচিতি তৈরি করবে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে ডিজিটাল বিপ্লবের অংশীদার করবে।