সৌদি আরব ও পাকিস্তান ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি করল। চুক্তির অধীনে যেকোনো দেশের উপর হামলা হলে, তা দুই দেশের উপরই হামলা হিসেবে গণ্য হবে। শাহবাজ শরীফ ও মোহাম্মদ বিন সালমান-এর উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রতিরক্ষা চুক্তি: সৌদি আরব এবং পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান পারস্পরিক নিরাপত্তাকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে একটি বড় প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি উভয় দেশের মধ্যে দশকব্যাপী বিদ্যমান নিরাপত্তা অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করবে। পাকিস্তানি সরকারি টেলিভিশন বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে এবং বলেছে যে এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক শান্তিতে উভয়ের ভূমিকাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।
চুক্তির উদ্দেশ্য
এই প্রতিরক্ষা চুক্তি নিছক একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এর উদ্দেশ্য হলো উভয় দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যেকোনো বাহ্যিক হুমকির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানো। চুক্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে কোনো একটি দেশের বিরুদ্ধে হামলা হলে, তা সৌদি আরব ও পাকিস্তান উভয়ের উপর হামলা হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ, এই চুক্তি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে (mutual defense cooperation) নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করছে।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতি
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই চুক্তি সম্পর্কে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে এই প্রতিরক্ষা চুক্তি দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। উভয় দেশ সম্মত হয়েছে যে যেকোনো ধরনের আক্রমণের পরিস্থিতিতে তারা একে অপরের পাশে দাঁড়াবে এবং সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সফর
এই ঐতিহাসিক চুক্তিটি এমন এক সময়ে সম্পন্ন হয়েছে যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ রিয়াদের রাষ্ট্রীয় সফরে পৌঁছেছেন। তাঁর সফরের সময় আল-ইয়াম্মাহ প্রাসাদে যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান তাঁকে অভ্যর্থ জানান। এখানেই "কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি" (Strategic Mutual Defense Agreement)-তে স্বাক্ষর করা হয়।
স্বাক্ষর অনুষ্ঠান এবং যৌথ বিবৃতি
চুক্তি স্বাক্ষরের পর একটি যৌথ বিবৃতি জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে যে প্রায় আট দশক ধরে চলে আসা অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে উভয় দেশ কৌশলগত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নতুন স্তরে পৌঁছে দিয়েছে। এই অংশীদারিত্ব ভ্রাতৃত্ব, ইসলামি ঐক্য এবং অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থের উপর ভিত্তি করে গঠিত।
এই চুক্তি কেবল দুই দেশের নিরাপত্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক শান্তির জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে এই বার্তা পৌঁছেছে যে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় যদি কোনো ধরনের হুমকি তৈরি হয়, তবে সৌদি আরব ও পাকিস্তান সম্মিলিতভাবে তার মোকাবিলা করবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নতুন মাত্রা
উভয় দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই চুক্তির মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও উন্নত করা হবে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে–
- সামরিক প্রশিক্ষণ (Military Training)
- গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান (Intelligence Sharing)
- প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও অস্ত্রের সহযোগিতা
- যেকোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক নতুন নয়। প্রায় আট দশক ধরে উভয় দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রয়েছে। পাকিস্তান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিষয়ে প্রায়শই সৌদি আরবের সমর্থন পেয়েছে। অন্যদিকে, সৌদি আরবের জন্য পাকিস্তানের সামরিক শক্তি সর্বদা একটি নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।