এসবিআই-এর চোখে ‘প্রতারণা’, অনিল আম্বানির নাম আরবিআই-কে পাঠাল ব্যাংক

এসবিআই-এর চোখে ‘প্রতারণা’, অনিল আম্বানির নাম আরবিআই-কে পাঠাল ব্যাংক

এসবিআই, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনসের ঋণকে ‘ফ্রড’ ঘোষণা করেছে, অনিল আম্বানির নাম আরবিআই-কে পাঠিয়েছে ব্যাংক। ব্যাংক জানিয়েছে, তারা আরবিআই-এর মাস্টার ডিরেকশন এবং সংশ্লিষ্ট সার্কুলারগুলির অধীনে ঋণ হিসাব এবং প্রবর্তক অনিল আম্বানির নাম রিপোর্ট করার প্রক্রিয়াটি চালাচ্ছে।

দেশের বৃহত্তম সরকারি ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস লিমিটেড (আরসিওএম)-এর ঋণ হিসাবকে 'প্রতারণা' বা 'ফ্রড' ঘোষণা করেছে। এর পাশাপাশি, ব্যাংকটি কোম্পানির প্রাক্তন পরিচালক অনিল আম্বানির নাম ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংককে (আরবিআই) রিপোর্ট করার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস মঙ্গলবার শেয়ার বাজারে দেওয়া তাদের নিয়ন্ত্রক ফাইলিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

২৩ জুন নোটিশ পাঠানো হয়েছিল

ব্যাংকের তরফে ২০২৩ সালের ২৩শে জুন পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয়েছে যে, এসবিআই-এর ফ্রড আইডেন্টিফিকেশন কমিটি আরসিওএম-এর ঋণ হিসাবকে ফ্রড ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চিঠিটি ৩০শে জুন কোম্পানিটি পায়। এতে রিলায়েন্স টেলিকম লিমিটেড এবং অন্যান্য গ্রুপ কোম্পানিগুলির মাধ্যমে সম্ভাব্য তহবিল সরানোর, ঋণের শর্ত লঙ্ঘনের এবং অন্যান্য অনিয়মের কথা বলা হয়েছে, যার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরবিআই-এর কাছে পৌঁছেছে অনিল আম্বানির নাম

এসবিআই স্পষ্ট করেছে যে, তারা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের মাস্টার ডিরেকশন এবং সার্কুলার অনুযায়ী এই ঋণ হিসাব এবং অনিল আম্বানির নাম আরবিআই-কে রিপোর্ট করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রক নিয়ম অনুযায়ী করা হচ্ছে।

আগেও ফ্রডের ঘটনা ঘটেছে

এটি প্রথমবার নয় যখন কোনো ব্যাংক আরসিওএম-এর হিসাবকে ফ্রড ঘোষণা করেছে। এর আগে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে কানারা ব্যাংকও কোম্পানির ঋণ হিসাবকে ফ্রড ঘোষণা করেছিল। যদিও, সেই সময়ে বম্বে হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল।

দেউলিয়া প্রক্রিয়ার আগের ঘটনা

এসবিআই-এর এই পদক্ষেপ আরসিওএম-এর ২০১৯ সালে শুরু হওয়া কর্পোরেট ইনসলভেন্সি রেজোলিউশন প্রসেস (সিআইআরপি)-এর আগে নেওয়া ঋণ এবং ক্রেডিট সুবিধাগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত। জুন ২০১৯-এ, কোম্পানির উপর সিআইআরপি কার্যকর করা হয়েছিল, যার পরে কোম্পানির কার্যক্রম রেজোলিউশন পেশাদার অনিশ নানোয়াতির তত্ত্বাবধানে চলছে। এই মামলার শুনানি বর্তমানে মুম্বাইয়ের ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালে (এনসিএলটি) চলছে, যেখানে একটি সমাধান পরিকল্পনা বিবেচনাধীন রয়েছে।

কোম্পানির জবাব

রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস এর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে যে, কোম্পানি গত কয়েক বছর ধরে সিআইআরপির অধীনে কাজ করছে। কোম্পানির ঋণদাতারা সমাধান পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন এবং এখন এটির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এনসিএলটি-র অপেক্ষায় রয়েছে। কোম্পানি আরও স্পষ্ট করেছে যে, এসবিআই-এর পাঠানো চিঠিতে যে ঋণ সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি সিআইআরপি কার্যকর হওয়ার আগের।

কোম্পানি আইনি পরামর্শ নিচ্ছে

রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস তাদের বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে যে, তারা বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে এবং এরপরের কৌশল এই পরামর্শের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে। কোম্পানি বলেছে যে, সিআইআরপি প্রক্রিয়ার অধীনে, যতক্ষণ না সমাধান পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো আইনি পদক্ষেপ বা মামলার সূচনা করা যাবে না।

গ্রুপ কোম্পানিগুলির ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে

এসবিআই-এর চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, ঋণ সংক্রান্ত অনেক অনিয়ম রিলায়েন্স টেলিকম লিমিটেড এবং অন্যান্য গ্রুপ কোম্পানিগুলির মাধ্যমে হয়েছে। এই কোম্পানিগুলির মাধ্যমে সম্ভাব্য তহবিল সরানো, ঋণের শর্ত লঙ্ঘন এবং টাকার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

বাজারের নজর এখন এনসিএলটি-র সিদ্ধান্তের দিকে

এখন যেহেতু মামলাটি এনসিএলটিতে বিচারাধীন, তাই পরবর্তী বড় পদক্ষেপ হবে সমাধান পরিকল্পনার অনুমোদন। প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি অনুমোদিত হলে, আরসিওএম-কে আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইআরপি কার্যকর হওয়ার আগের কথিত অপরাধ থেকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। যদিও এসবিআই-এর এই পদক্ষেপটি আইনি এবং ব্যবসায়িক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a comment