উচ্চ সার্কিট স্টক: কেন ঊর্ধ্বমুখী সার্কিট লাগছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, কোম্পানি তার ব্যবসার পুনর্গঠন (পুনর্গঠন) ঘোষণা করেছে, যা সরাসরি শেয়ারের দামে প্রভাব ফেলছে।
গ্যাব্রিয়েল ইন্ডিয়ার শেয়ারগুলি গত দুদিনে এমন পারফর্ম করেছে যা বিনিয়োগকারীদের চমকে দিয়েছে। মঙ্গলবার কোম্পানির শেয়ার ২০ শতাংশ বেড়ে ৮৪২.৭৫ টাকায় পৌঁছে যায় এবং বুধবার বাজার খোলার সাথে সাথেই শেয়ারটি সরাসরি ১,০১১ টাকায় পৌঁছে যায়, যা ছিল তার উচ্চ সার্কিট স্তর।
১৭ বছরে জুলাই মাসের রেকর্ড শক্তিশালী
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৭ বছরে জুলাই মাসে গ্যাব্রিয়েলের শেয়ার ১১ বার ইতিবাচক রিটার্ন দিয়েছে। অর্থাৎ, ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই শেয়ারটি এই মাসে ভালো পারফর্ম করেছে। গত এক সপ্তাহে শেয়ারটি ৫৮ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে এক মাসে এটি ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরে বিনিয়োগকারীরা ১১২ শতাংশ এবং তিন বছরে ৬৭২ শতাংশের বিশাল রিটার্ন পেয়েছে।
কোম্পানির নতুন পুনর্গঠন পরিকল্পনা গতির কারণ
এই বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হল কোম্পানির ঘোষণা করা নতুন এবং উচ্চাভিলাষী পুনর্গঠন পরিকল্পনা। গ্যাব্রিয়েল ইন্ডিয়া তার ব্যবসায়িক মডেলকে আরও সরল এবং শক্তিশালী করতে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কোম্পানির পুনর্গঠন পরিকল্পনা কী?
গ্যাব্রিয়েল ইন্ডিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী, এর গ্রুপ কোম্পানি অ্যানকেমকো ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং এশিয়া ইনভেস্টমেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড (এআইপিএল)-এর পরিবর্তন করা হবে। অ্যানকেমকোর মার্জার এআইপিএলে করা হবে এবং এর পরে এআইপিএলের স্বয়ংক্রিয় ব্যবসা গ্যাব্রিয়েল ইন্ডিয়াতে ডিমার্জ করা হবে।
এই চুক্তির অধীনে, এআইপিএলের প্রমোটররা তাদের ১,০০০ শেয়ারের পরিবর্তে গ্যাব্রিয়েল ইন্ডিয়ার ১,১৫৮টি শেয়ার পাবেন। এই চুক্তিটি ২০২৫ সালের আনুমানিক EV/EBITDA-এর ৮ গুণ মূল্যের উপর ভিত্তি করে। বিশেষ বিষয় হল, এই চুক্তিতে কোনো নগদ লেনদেন হবে না এবং কোম্পানির উপর কোনো ঋণও আসবে না।
চুক্তির প্রক্রিয়া এবং সময়সীমা
এই পুনর্গঠন পরিকল্পনাটি বর্তমানে প্রস্তাবিত পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি কার্যকর করার আগে গ্যাব্রিয়েলকে কোম্পানি বোর্ড, শেয়ারহোল্ডার, ঋণদাতা, NCLT এবং স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদন নিতে হবে। কোম্পানি আশা করছে এই প্রক্রিয়াটি প্রায় ১০ থেকে ১২ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
এই পুনর্গঠনের প্রভাবের তারিখ ১ এপ্রিল, ২০২৫ নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে ডিমার্জার ১ এপ্রিল, ২০২৬ পর্যন্ত সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
কোম্পানির কী লাভ হবে?
গ্যাব্রিয়েল ইন্ডিয়া এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তার ব্যবসাকে একটি নতুন দিশা দিতে চলেছে। এই কৌশল থেকে কোম্পানি শুধুমাত্র একটি সাসপেনশন প্রস্তুতকারক হিসেবে থাকবে না, বরং এর কাছে এখন বৈদ্যুতিক গাড়ির যন্ত্রাংশ, ফ্লুইড কন্ট্রোল সিস্টেম, সানরুফ এবং নতুন প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত পণ্যও থাকবে।
এছাড়াও, গ্রুপ ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০০০ কোটি টাকার রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যেখানে এই পুনর্গঠন থেকে বড় ধরনের সাহায্য পাওয়া যাবে। কোম্পানির মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসা বৈচিত্র্যকরণ, পরিচালনার দক্ষতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা – এই তিনটি দিকেই উন্নতি হবে।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতামত
সিএনবিসি আওয়াজে কথা বলার সময় বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন যে গ্যাব্রিয়েল ইন্ডিয়ার এই কৌশল বাজারকে খুবই পছন্দ হয়েছে। কোনো ঋণ ছাড়াই ব্যবসার প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা এবং মাল্টি-প্রোডাক্ট কোম্পানি হওয়ার ধারণা বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাব্রিয়েল ইন্ডিয়া এখন একটি প্রযুক্তি-চালিত, মাল্টি-সেগমেন্ট অটো কম্পোনেন্ট প্রস্তুতকারক হিসেবে উঠে আসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কোম্পানির মূল্যায়নও বাড়তে পারে এবং বাজারে তার অবস্থান আরও শক্তিশালী হতে পারে।
গ্রুপ কাঠামোর সরলতা এবং দৃঢ়তা
গ্যাব্রিয়েল কর্তৃক ঘোষিত এই কৌশলগত পরিবর্তন গ্রুপ কাঠামোকে আরও স্বচ্ছ এবং সমন্বিত করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। এর ফলে ব্যবসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত এবং কার্যকর হবে।
শেয়ারহোল্ডাররাও লাভবান হবেন
এই চুক্তিতে শেয়ারের পরিবর্তে শেয়ার দেওয়ার প্রক্রিয়া থেকেও এটি ইঙ্গিত দেয় যে কোম্পানি তার বর্তমান প্রমোটর এবং শেয়ারহোল্ডারদের সাথে নিয়ে এগিয়ে চলেছে। কোনো নগদ প্রবাহ না থাকার কারণে কোম্পানির ব্যালেন্স শীটেও এর প্রভাব পড়বে না।
গ্যাব্রিয়েল ইন্ডিয়ার নতুন রূপ
এই পরিবর্তনের পর গ্যাব্রিয়েল ইন্ডিয়া এখন একটি ঐতিহ্যবাহী সাসপেনশন কোম্পানি নয়, বরং এমন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যা বিশ্বব্যাপী আধুনিক অটো কম্পোনেন্টস এবং প্রযুক্তি সমাধান সরবরাহ করতে পারবে।
শেয়ারের বৃদ্ধিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি
বাজারে শেয়ারের এই বৃদ্ধি প্রমাণ করেছে যে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির এই কৌশল নিয়ে আশাবাদী। শেয়ারের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে দুদিনের মধ্যে উচ্চ সার্কিট লাগা এটি दर्शाता যে বাজার গ্যাব্রিয়েল ইন্ডিয়ার ভবিষ্যতের দিকে আস্থাশীল।