ভূমি অধিগ্রহণ আইন নিয়ে বৈঠকে মেধা পাটেকরকে আমন্ত্রণ, বিজেপি সাংসদদের তীব্র আপত্তি

ভূমি অধিগ্রহণ আইন নিয়ে বৈঠকে মেধা পাটেকরকে আমন্ত্রণ, বিজেপি সাংসদদের তীব্র আপত্তি

গ্রামীণ উন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে তৈরি হওয়া ভূমি অধিগ্রহণ আইন নিয়ে আলোচনার জন্য একটি বৈঠকের আয়োজন করে। এই বৈঠকে কমিটি সামাজিক কর্মী মেধা পাটেকর এবং অভিনেতা প্রকাশ রাজকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যাতে তাঁদের মতামত জানা যায়।

মেধা পাটেকর: নয়াদিল্লির রাজনীতিতে মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তীব্র হট্টগোল দেখা যায়। গ্রামীণ উন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যখন ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে তৈরি হওয়া ভূমি অধিগ্রহণ আইন নিয়ে আলোচনা করার জন্য সামাজিক কর্মী মেধা পাটেকরকে ডেকে পাঠায়, তখন বিজেপি সাংসদরা এর তীব্র বিরোধিতা করেন। বৈঠকে উপস্থিত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পুরুষোত্তম রূপালা সহ ১১ জন বিজেপি সাংসদ মেধা পাটেকরকে “রাষ্ট্রবিরোধী” আখ্যা দিয়ে বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেন।

কংগ্রেস সাংসদ সপ্তগিরি শঙ্কর উলাকার সভাপতিত্বে এই কমিটির বৈঠকে মেধা পাটেকরের পাশাপাশি অভিনেতা ও সমাজকর্মী প্রকাশ রাজ এবং আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু মেধা পাটেকরের নাম শোনা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপি সাংসদরা প্রতিবাদ শুরু করেন এবং তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁকে সরাসরি “দেশদ্রোহী” বলেও অভিহিত করেন।

কেন এই বিতর্ক?

এই বিতর্কের কারণ হল মেধা পাটেকরের পুরনো ভাবমূর্তি, যিনি বহুবার বড় আন্দোলন এবং সরকার বিরোধী প্রচারের মুখ ছিলেন। বিজেপি সাংসদদের যুক্তি ছিল, মেধা পাটেকর অতীতে বহুবার দেশবিরোধী কথা বলেছেন এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এমতাবস্থায় তাঁকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ডাকা সম্পূর্ণ অনুচিত।

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পুরুষোত্তম রূপালা বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে রাষ্ট্রবিরোধী মানসিকতার একজন ব্যক্তিকে সংসদীয় কমিটির মঞ্চে ডাকা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই যুক্তিতেই ১১ জন বিজেপি সাংসদ বৈঠক থেকে উঠে যান, যার ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

কমিটির সভাপতি কী বললেন?

সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং কংগ্রেস সাংসদ সপ্তগিরি শঙ্কর উলাকা এটিকে সংসদীয় প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “সংসদীয় কমিটিগুলি প্রত্যেক বিষয় নিয়ে আলাদা আলাদা ব্যক্তি এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়। সেটা অ্যাক্টিভিস্ট হোন বা চলচ্চিত্র শিল্পী, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি জানা গণতন্ত্রের জন্য জরুরি।”

তিনি আরও বলেন যে, ভূমি অধিগ্রহণ আইনের প্রসঙ্গে মেধা পাটেকরের দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি এই ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছেন এবং তাঁর মতামত শোনা কমিটির দায়িত্ব। উলাকা আরও বলেন যে, সংসদীয় কমিটিগুলিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত, যাতে বৃহত্তর স্বার্থে আরও ভালো নীতি তৈরি করা যায়।

কেন মেধা পাটেকরকে ডাকা হয়েছিল?

আসলে, গ্রামীণ উন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ২০১৩ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইনের সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করছে। এই উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকজন সিভিল সোসাইটির সদস্য, বিশেষজ্ঞ এবং স্টেকহোল্ডারদের ডাকা হয়েছিল, যাতে তাঁদের মতামত আইন পর্যালোচনার কাজে আসে। মেধা পাটেকরকেও সেই উদ্দেশ্যেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কারণ তিনি নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন সহ বহু ভূমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।

বিজেপি সাংসদদের এই প্রতিবাদের পরে সংসদীয় কমিটির বৈঠক মাঝপথেই বন্ধ করে দিতে হয়। এখন এই বিতর্ক আরও বাড়তে পারে, কারণ এর জেরে সংসদীয় প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা এবং স্বাধীনতার উপরেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিজেপির এই মনোভাব থেকে এটা স্পষ্ট যে, মেধা পাটেকরের মতো মুখদের নিয়ে দলের মধ্যে তীব্র বিরোধিতা রয়েছে, যেখানে বিরোধী দল এটিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখছে।

Leave a comment