দক্ষিণ-পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনে প্রতিদিন প্রায় ১৫-১৮ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। কলকাতা ও আশপাশের মফস্বলের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী এই স্টেশন বহু বছর ধরেই ব্যস্ততমের তকমা ধরে রেখেছে। কিন্তু অফিস টাইমে ট্রেন ধরতে গিয়ে প্ল্যাটফর্ম খোঁজার হুড়োহুড়ি যাত্রীদের চরম সমস্যায় ফেলে। এবার সেই সমস্যা কাটাতে উদ্যোগ নিল রেল, প্ল্যাটফর্ম নির্দিষ্ট করে আগাম ঘোষণা করা হলো।
আগাম প্ল্যাটফর্ম জানলে মিলবে স্বস্তি, সময় বাঁচবে রেলের
শিয়ালদহ ডিভিশনের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার যশরাম মীনা জানালেন, “বার্থিং প্ল্যান আগে থেকে নির্ধারিত থাকলে ট্রেন পরিচালনা আরও সহজ হয়। যাত্রীদের যদি আগে থেকেই জানানো যায় কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে কোন ট্রেন ছাড়বে, তাহলে তারা হুড়োহুড়ি না করে স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারবেন।” একইসঙ্গে রেলেরও সময় বাঁচবে, কম সময়ে বেশি ট্রেন চালানো যাবে বলে মনে করছেন আধিকারিকরা।
১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে চলবে কোন ট্রেন? জানুন বিশদে
রেলের ঘোষণায় জানানো হয়েছে, প্ল্যাটফর্ম ১ থেকে ৫ নম্বর থেকে ছাড়বে গেদে, কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, রানাঘাট, নৈহাটি, কল্যাণী সীমান্ত ও বারাকপুর লোকাল ট্রেন। এই শাখাগুলি প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যাত্রী বহন করে। আগে থেকে এই ট্রেনগুলির নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম জানা থাকলে অফিস টাইমে যাত্রীদের অসুবিধা অনেকটাই কমবে বলে রেলমহলের মত।
ডানকুনি-বারুইপাড়া থেকে বনগাঁ-হাসনাবাদ পর্যন্ত সব প্ল্যাটফর্ম ঠিক
প্ল্যাটফর্ম ৫ থেকে ৮ নম্বর থেকে ছাড়বে ডানকুনি ও বারুইপাড়া লোকাল। অন্যদিকে, প্ল্যাটফর্ম ৬ থেকে ১০ থেকে ছাড়বে বনগাঁ, বারাসত, দত্তপুকুর, হাবড়া, গোবরডাঙা, ঠাকুরনগর, হাসনাবাদ, দমদম ক্যান্টনমেন্ট এবং মধ্যমগ্রাম গামী ট্রেন। এতে প্রতিদিন উত্তর ২৪ পরগনার হাজার হাজার যাত্রীর যাতায়াত আরও সুশৃঙ্খল হবে।
এক্সপ্রেস ও মেল ট্রেনের জন্য আলাদা বরাদ্দ, বাড়ল গতি
রেল জানিয়েছে, প্ল্যাটফর্ম ৯, ১১ এবং ১৪ নম্বর রাখা হয়েছে শুধুমাত্র এক্সপ্রেস ও মেল ট্রেনের জন্য। এতে করে লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেনের সময়সূচি গুলিয়ে যাবে না, ফলে রেল চলাচল হবে আরও নিরবচ্ছিন্ন ও সময়ানুগ। বিশেষ করে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগার ঝুঁকি অনেকটাই কমবে।
শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ট্রেনের জন্য ১৫ থেকে ২১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম
দক্ষিণ শাখার সব ট্রেন অর্থাৎ বজবজ, নামখানা, ক্যানিং, ডায়মন্ডহারবার, লক্ষ্মীকান্তপুর রুটের ট্রেন ছাড়বে ১৫ থেকে ২১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে। এর ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার অফিস যাত্রী ও কর্মজীবী মানুষের যাতায়াত সহজতর হবে। যাত্রীদের মতে, এখন থেকে একবার জেনে নিলেই কাজ সারা।
যাত্রীদের মুখে হাসি, বলছেন—“এবার শান্তিতে ফিরব বাড়ি”
রানাঘাট শাখার যাত্রী কল্যাণ মণ্ডল বলেন, আগে ট্রেন ধরার সময় প্ল্যাটফর্ম খোঁজে দৌড়াতে হতো। এবার আগেই জেনে যাব কোন দিক থেকে ট্রেন আসছে। সময় বাঁচবে, ধাক্কাধাক্কিও কমবে। রেল যাত্রীদের এই স্বস্তির মধ্যেই রেলের এই নতুন ব্যবস্থাকে অভূতপূর্ব উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আধুনিকীকরণে এগোচ্ছে রেল, লাভ যাত্রীদের
শিয়ালদহ স্টেশনে রেলের এই পরিকল্পনা রেল পরিষেবাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগাম পরিকল্পনা, সুশৃঙ্খল প্ল্যাটফর্ম বিভাজন এবং যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধি—এই তিনে ভর করেই এবার ব্যস্ততম শিয়ালদহ স্টেশনে যাত্রা হবে আরও আরামদায়ক। যে কোনও দিনে এই মডেল অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যান্য ব্যস্ত স্টেশনগুলির কাছে।