শারদ পূর্ণিমা ২০২৫: শুভ তিথি, আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ও পূজন বিধি

শারদ পূর্ণিমা ২০২৫: শুভ তিথি, আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ও পূজন বিধি

আশ্বিন পূর্ণিমা ২০২৫, যা শারদ পূর্ণিমা নামেও পরিচিত, ৬ অক্টোবর সকাল ৪:১৬ মিনিট থেকে ৭ অক্টোবর সকাল ৫:৪২ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। এই দিনে পূজা, দান এবং চাঁদের আলোয় ক্ষীর (পায়েস) সেবন করলে পিতৃপুরুষদের শান্তি, পারিবারিক সুখ-শান্তি, ধন-সমৃদ্ধি এবং পুণ্যের প্রাপ্তি হয়। এই উপলক্ষটি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

আশ্বিন পূর্ণিমা ২০২৫: হিন্দু ধর্মে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা, যা শারদ পূর্ণিমা নামে পরিচিত, ৬ অক্টোবর, সোমবার সকাল ৪:১৬ মিনিটে শুরু হয়ে ৭ অক্টোবর, মঙ্গলবার সকাল ৫:৪২ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। এই দিনে ভক্তরা তাদের বাড়িতে পূজা-অর্চনা করবেন, তুলসী ও প্রদীপ নিবেদন করবেন এবং রাতে চাঁদের আলোয় ক্ষীর (পায়েস) সেবন করবেন। এই উপলক্ষটি পিতৃপক্ষ এবং শরৎ ঋতুর সংগমকাল (সংক্রমণের প্রতীক)। এই দিনে দান ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করলে পারিবারিক সুখ-শান্তি, ধন-সমৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক পুণ্যের প্রাপ্তি হয়।

শারদ পূর্ণিমার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

আশ্বিন পূর্ণিমাকে শারদ পূর্ণিমা বলা হয় কারণ এই দিনে চাঁদ তার ষোল কলায় পূর্ণ বলে মনে করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে চাঁদের আলোয় রাখা ক্ষীর (পায়েস) এবং অন্যান্য প্রসাদ সেবন করলে অমৃত বর্ষিত হয় এবং বিশেষ পুণ্য লাভ হয়। এই তিথি পিতৃপুরুষদের শান্তি, সন্তান সুখ, আর্থিক সমৃদ্ধি এবং পারিবারিক মঙ্গলের জন্য অত্যন্ত শুভ বলে বিবেচিত হয়।

হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে এই দিনের মাহাত্ম্য বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। মনে করা হয় যে এই দিনে করা দান, পূজা এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান অন্যান্য দিনের তুলনায় অধিক ফলপ্রসূ হয়। তাই, ভক্তরা এই উপলক্ষে বিশেষ প্রস্তুতি নেন এবং পুরো পরিবারের সাথে মিলে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।

আশ্বিন পূর্ণিমা পূজন বিধি

পূর্ণিমার দিনে পূজার বিধিতে স্নান করা এবং পরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিধান করাকে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বলে মনে করা হয়। প্রাতঃকালে স্নান করে শরীর ও মন শুদ্ধ করার পর ভগবান বিষ্ণু ও মাতা লক্ষ্মীর পূজা করা উচিত। পূজার সময় তুলসী গাছে জল অর্পণ করা এবং বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানো ইতিবাচক শক্তি এবং সুখ-সমৃদ্ধির জন্য শুভ বলে বিবেচিত হয়।

রাত্রিতে চন্দ্রকে অর্ঘ্য দেওয়া এবং তার আলোয় ক্ষীর (পায়েস) রাখা বিশেষ গুরুত্ব রাখে। ক্ষীরকে চাঁদের কিরণে রেখে সেবন করলে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে পুণ্যের প্রাপ্তি হয়। এই প্রক্রিয়ায় কেবল আর্থিক সমৃদ্ধিই আসে না, বরং পারিবারিক জীবনে সুখ ও শান্তি বজায় থাকে।

দান ও পুণ্য

পূর্ণিমার দিনে দানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই দিনে অভাবীদের অন্ন, বস্ত্র এবং দান-দক্ষিণা দিলে পুণ্যের প্রাপ্তি হয়। ক্ষীর, চাল এবং মিষ্টি দান করা ঐতিহ্যগতভাবে শুভ বলে মনে করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে করা দান পরিবারে সম্প্রীতি এবং ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার করে।

দান করলে কেবল আর্থিক লাভই নয়, বরং মানসিক সন্তুষ্টি এবং আধ্যাত্মিক লাভও প্রাপ্ত হয়। পিতৃপুরুষদের স্মরণ করে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি, দরিদ্র ও অভাবীদের সহায়তা করলে সমাজে সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধও বৃদ্ধি পায়।

সতর্কতা এবং বিশেষ টিপস

  • এই দিনে প্রাতঃকালে স্নান করে পরিচ্ছন্ন এবং পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করা আবশ্যক।
  • পূজা করার সময় ঘর পরিষ্কার রাখুন এবং মনে ঘৃণা বা বিদ্বেষ রাখবেন না।
  • তুলসী ও প্রদীপের পাশাপাশি, চন্দ্রকে অর্ঘ্য দেওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন যে ক্ষীর (পায়েস) সম্পূর্ণভাবে পরিচ্ছন্ন ও সুরক্ষিত থাকে।
  • দান করার সময় সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখুন। অভাবীদের যথাযথভাবে খাবার ও বস্ত্র দিন।

কেন এই দিনটি বিশেষ

আশ্বিন পূর্ণিমা কেবল একটি ধর্মীয় উপলক্ষই নয়, বরং এটি সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনটি পিতৃপক্ষের সমাপ্তির প্রতীক এবং মাতা দুর্গার আগমনের প্রস্তুতির সময়ও। এই দিনে পূজা, দান এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যক্তি কেবল আধ্যাত্মিক লাভই করেন না, বরং সমাজে সহযোগিতা ও ভালোবাসার বার্তাও ছড়িয়ে দেন।

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে করা কর্মগুলি বিশেষভাবে পুণ্যদায়ক হয়। তাই, ভক্তরা এই উপলক্ষটিকে বিশেষ প্রস্তুতির সাথে উদযাপন করেন এবং পুরো পরিবারের সাথে মিলে পূজা, দান এবং ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।

Leave a comment