ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা এবং ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের নায়ক শিবু সোরেন ৮১ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং জয়রাম রমেশ তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
Shibu Soren: ঝাড়খণ্ডের আত্মা বলে পরিচিত শিবু সোরেন সোমবার ৮১ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-এর প্রতিষ্ঠাতা, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর প্রয়াণের খবরে ঝাড়খণ্ড এবং সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং কংগ্রেসের মহাসচিব জয়রাম রমেশ সহ অনেক প্রবীণ নেতা তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
মল্লিকার্জুন খাড়গের শোক প্রকাশ
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে শিবু সোরেনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তাঁকে এমন একজন নেতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন যিনি ঝাড়খণ্ডের মানুষের জল, জঙ্গল এবং জমির অধিকারের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি বলেন, "শিবু সোরেন জি কেবল ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন না, তিনি একজন আন্দোলনকারীও ছিলেন যাঁর কারণে পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠন সম্ভব হয়েছিল।"
খাড়গে আরও জানান যে তিনি শিবু সোরেনের পুত্র এবং ঝাড়খণ্ডের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "দুঃখের এই সময়ে আমি হেমন্ত সোরেন এবং তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। ঈশ্বর তাঁদের এই দুঃখ সহ্য করার শক্তি দিন।"
আদিবাসী অধিকারের কণ্ঠ ছিলেন শিবু সোরেন
শিবু সোরেন 'গুরুজি' নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি আদিবাসীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকারের জন্য সর্বদা সোচ্চার ছিলেন।
তাঁর রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল জল, জঙ্গল এবং জমি। এই তিনটি বিষয় নিয়ে তিনি দশক ধরে আন্দোলন করেছেন। তিনি কেবল রাজ্য গঠনে ভূমিকা রাখেননি, বরং পরবর্তীতে ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিকে একটি স্থায়ী দিশা দিয়েছিলেন।
কংগ্রেস মহাসচিব জয়রাম রমেশের শ্রদ্ধাঞ্জলি
কংগ্রেস মহাসচিব জয়রাম রমেশও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম 'এক্স'-এ শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেছেন, "গুরুজি শিবু সোরেন কেবল তিনবার মুখ্যমন্ত্রী এবং সাংসদ ছিলেন না, তিনি ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের সবচেয়ে নির্ণায়ক মুখও ছিলেন। তিনি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের জন্য যে আবেগ দেখিয়েছেন, তা অনুপ্রেরণাদায়ক।"
শিবু সোরেন 'বন অধিকার আইন ২০০৬' এবং 'ভূমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৩' এর নির্মাণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই দুটি আইন সারা দেশে আদিবাসী এবং কৃষকদের অধিকারকে আইনি সুরক্ষা দিয়েছে।
ঝাড়খণ্ড আন্দোলনে নির্ণায়ক ভূমিকা
শিবু সোরেনের রাজনৈতিক জীবন ঝাড়খণ্ডের পৃথক রাজ্য গঠনের আন্দোলন থেকে শুরু হয়েছিল। তিনি ১৯৭০ এবং ৮০-এর দশকে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের অধিকারের জন্য লড়াই করেন। আদিবাসীদের জমি রক্ষা এবং বহিরাগত সংস্থাগুলির শোষণ বন্ধের বিরুদ্ধে তিনি ব্যাপক গণজাগরণ তৈরি করেন।
সামাজিক ন্যায়ের প্রতীক
শিবু সোরেন শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন আদিবাসী সমাজের কণ্ঠস্বর। তিনি সর্বদা গ্রামীণ এবং বঞ্চিত শ্রেণীর জন্য আওয়াজ তুলেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং জমির মতো বিষয়গুলিতে তিনি মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন। তিনি রাজনীতিকে একটি সেবার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন এবং সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।